তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে অদ্ভুত-বেআইনি মন্তব্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনি মন্তব্য করেছেন বলে দাবি করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক তারেক রহমানের পাসপোর্ট যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের মাধ্যমে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দেওয়ার একটি নথি দেখিয়েছেনপররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে তিনি অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনি মন্তব্য করেছেন।  তার নাগরিকত্ব নিয়ে ‘প্রলাপ বকা এবং অপপ্রচার ’ অবিলম্বে বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

কী কী কারণে একজন নাগরিক জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব হারাতে পারেন—এটাও যিনি জানেন না,তেমন একজন ব্যক্তির শুধু এধরনের অনির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী পদে থাকা সম্ভব এবং তা জাতির জন্য লজ্জাজনক বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘সরকার ও সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তব্যে স্পষ্ট প্রমাণিত যে, দেশে  তারেক রহমানের জীবন নিরাপদ নয়। এমতাবস্থায় তিনি বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সরকারবিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতোই সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং সঙ্গত কারণেই তা পেয়েছেন। এপ্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগে তার পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। সে দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার পাসপোর্ট জমা রেখে, তাকে ট্রাভেল পারমিট দেওয়া হয়েছে।  কাজেই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তার কোনও কাজে লাগছে না। যখনই তিনি দেশে ফেরার মতো সুস্থ হবেন, তখনই দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতোই পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানাতে এবং তা অর্জন করতে পারবেন।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জমা রাখার জন্য ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে তার পাসপোর্ট লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানোর যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তাতে কোনও আইন কিংবা যুক্তিতে প্রমাণ হয় না যে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন। এ ধরনের উদ্ভট ধারণাকে তত্ত্ব কিংবা তথ্য হিসেবে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন কিংবা ফেসবুকে প্রচার রাজনৈতিক মূর্খতা। উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ ব্যাপারে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে যে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে—দেশের জনগণ তার জবাব জানার জন্য অপেক্ষা করছে। দেশের জনগণ ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করেছে যে, তাদের কষ্টার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লন্ডন সফরকারী বিশাল বহরের একমাত্র অর্জন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যু করা পাসপোর্টের তিনটি পাতা এবং ব্রিটিশ  স্বরাষ্ট্র বিভাগের অসংখ্য ভুলে ভরা একলাইনের রহস্যজনক একটি চিঠির ফটোকপি। কী বিচিত্র এই সরকার! কী দুর্বল তাদের অপকৌশল !’

তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক। তিনি তার এই প্রিয় দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন বলে জানান মির্জা ফখরুল।  তিনি বলেন, ‘অবৈধ ফখরুদ্দিন-মইনউদ্দিন সরকারের নৃশংস রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে পঙ্গু অবস্থায় সুচিকিৎসার জন্য আদালতের অনুমতিক্রমে তিনি (তারেক রহমান) ২০০৮ সালে লন্ডনে যান। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় এখনও সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। ইতোমধ্যে তার অনুপস্থিতিতে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ না দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, ‘অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্রেশন আইন ২০০৪ -এর ১৭ ধারায় উল্লেখ আছে, ‘পাসপোর্ট অথবা কোনও গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট কারও কাছে যাবে না। শুধু মাত্র যিনি এটার হোল্ডার তার কাছে যাবে। থার্ড পার্টি এটা রিটেন করতে পারবে না। সুতরাং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে দাবি করছেন, এ পাসপোর্ট হাইকমিশনে দেওয়া হয়েছে,  তা রহস্যজনক এবং সন্দেহজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য এখানে স্পষ্ট— বিট্রিশ আইন সেকশন ৭০ অনুসারে তারেক রহমানের পাসপোর্ট বাংলাদেশ হাইকমিশনে যাওয়ার কথা নয়।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম প্রমুখ।

Please follow and like us:

Check Also

সুন্দরবনে মধু লুটের পর মৌয়ালদের মারপিট

শ্যামনগর প্রতিনিধি: পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে মধু সংগ্রহকালে এক দল মৌয়ালের মধু লুটের পর তাদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।