রমজানের শুরুতেই সাতক্ষীরায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে হু-হু করে * সিন্ডিকেটের কবলে বাজার

আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা: রমজানের শুরুতেই সাতক্ষীরায় কাঁচা বাজার ও ইফতার সামগ্রীর দাম বেড়েছে। নির্ধারিত মূল্যে বাজারে মিলছে না কোনো পণ্য। জেলা সদর থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বাজার মনিটরিংয়ের কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন হু-হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। ফলে খেটে খাওয়া নিন্ম মধ্যবিত্ত ও নিন্মœবিত্ত মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। রমজানের শুরু থেকেই পেঁয়াজ, রসুন, তেল, চাল-ডাল, বেসন, চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সাধারণ ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে দিন দিন। সিন্ডিকেট করে কৃত্তিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে এ সকল পণ্যের বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ওই সকল পণ্য বেশি দামে ক্রয় করে বাজারজাত করতে বাধ্য হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে। এসব দেখভালের দায়িত্ব যাদের উপর ন্যস্ত-তারা রয়েছেন নীরব দর্শকের সারিতে। মনিটরিং না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে এই সিন্ডিকেট। আমদানি নেই, বৃষ্টির কারণে মাল আসতে পারছে না, উৎপাদন নেই এমন নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৫০- ৫৫ টাকায়, দুই সপ্তাহ আগের চিনির দাম ছিল ৫০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ছোলার দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা, মোটা চালের কেজি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৭ টাকায় এক সপ্তাহ আগে যা বিক্রি হয়েছে ৩২ টাকা, সরিষার তেলের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা, এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ টাকা। মসলার মধ্যে ইলাচের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩শ টাকা। সাতক্ষীরা বড় বাজারের মুদি দোকানদার উত্তম স্টোরের মালিক শিবপদ সাধু জানান,এক সপ্তাহ আগে ইলাচের কেজি ছিল ১২শ টাকা বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫শ টাকায়,দারুচিনি কেজিতে বেড়েছে একশ টাকা,আদা কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। জিরাতে বেড়েছে কেজিতে একশ টাকা। পাইকারী ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর কারণে খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে বলে জানান এ ব্যবসায়ী। পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান,সরবরাহ কমে যাওয়াতে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাতক্ষীরা বড় বাজারের মাছের বাজার সংলগ্ন ব্রিজের মাথায় ৩০ বছর ধরে কাঁচা মালের ব্যবসা করেন সোহাগ। সে জানান, রমজানের শুৃরুতেই সব কাঁচা মালের দাম বেড়েছে। তবে এক সপ্তাহ পরে কাঁচা মালের দাম একেবারেই কমে যাবে। শুরুতে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বেশি থাকে। তার ভাষ্য মতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সুলতানপুর বড়বাজারে আলু ১৫ টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকা,বেগুন ৪০ টাকা থেকে কমে ৩৫ টাকা, কাঁচা ঝাল ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, শশা ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা,ধনের পাতা ৫০ টাকা থেকে বেড়ে একশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মসলা ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান,পেয়াজের দাম ২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮ টাকা, রসুন ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা। এছাড়া ছোলার দাম কিছুটা কমেছে। 
দাম বেড়েছে খেসারি ডাল, গুঁড়া হলুদ, ইসুবগুলের ভুষি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড় বাজারের একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সিন্ডিকেট সৃষ্টিকরে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মজুদ রাখা হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা কিনতে গেলে বাজার সংকটের কথা বলে ফিরিয়ে দিচ্ছে অথচ দাম বেশি দিলেই তারা পণ্য সরবরাহ করছে। সিন্ডিকেটের দাম বৃদ্ধি এই প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। চিনি সিন্ডিকেট মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন কয়েক জন ব্যবসায়ী। তাদের কাছে চিনি পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সংকটের কথা বলে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেন। এই সিন্ডিকেটের কারণেই জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে চিনির দাম বেশি। বাজারে সংকটের কথা বললেও তাদের ৭/৮টি গোডাউনে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় এ অব্যবস্থাপনা। কয়েকটি দোকান বাদে অন্য দোকানগুলোতে ঝোলানো নেই পণ্য মূল্য তালিকা। বিক্রেতারা অবশ্য জানালেন, পণ্য মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে নির্ধারিত দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। তবে কিছু জিনিসের দাম পাইকারি বেড়ে যাওয়ায় তাদেরকেও একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আরো অভিযোগ করে জানালেন, রমজান মাস শুরুর আগে বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ঢিলেমির কারণে প্রতিবছর এই সময়টাতে তাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। রমজানের আগেই বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা লাভের আশায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্থিতিশীল করার প্রয়াস চালান। এবারও অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তবে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন জানিয়েছে, পবিত্র রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এর মুল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।