সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কলারোয়া সোনারবাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আশফাকুর রহমান বিপুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ দুপুর ১২টার দিকে কলেজে কর্মরত অবস্থায় কলারোয়া থানা পুলিশ তাকে আটক করে। পরে অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
গ্রেফতারকৃত বিপু (৪৫) উপজেলার জালালাবাদ গ্রামের মৃত আলফার রহমানের পুত্র ও সোনাবাড়িয়া সোনারবাংলা কলেজের সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব দেব নাথ জানান- ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জামায়াত নেতা আশফাকুর রহমান বিপুকে সোনাবাড়িয়া কলেজের সামনের রাস্তা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সেসময় তার কাছে লুকিয়ে রাখা অবস্থায় একটি দেশীয় পাইপগান ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে তার বিরুদ্ধে কলারোয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এর আগেও ৯টি নাশকতার মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।’ তবে তিনি সবকটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন।
পুলিশ জানায়- গ্রেফতারকৃত আশফাকুর রহমান বিপু ছাত্রজীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের ক্যাডার ছিলো। ১৯৯৫ সালে ছাত্র সংঘর্ষে বোমা বিষ্ফোরণে তার একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন থেকে তিনি হাতকাটা বিপু নামে পরিচিত ছিলো। অত্যন্ত তেজস্বী বক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি।
অধ্যক্ষ আশফাকুর রহমান বিপুর স্ত্রী একই কলেজে ভূগোল বিভাগের প্রভাষক সোখিনা খাতুন জানান,তার স্বামীকে বুধবার অফিস কক্ষ থেকে সাদা পোশাকে কয়েকজন ব্যক্তি তুলে নিযে যায়। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান,তার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।
বুধবার কলারোয়া কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল কয়েকটি বিষয়ে তদন্ত করতে সোনারবাংলা কলেজে যায়। প্রতিষ্টানটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রতিনিধি দলটির সামনে হাজির হতে বহিষ্কারকৃত অধ্যক্ষ আশফাকুর রহমান বিপুকে উপস্থিত থাকতে চিঠি দেয়। গত ১২ মে বিপুর স্ত্রী সোখিনা খাতুনের কাছে এ চিঠিটা দেয়া হয়।
টিঠির জবাব দিতে বুধবার বোর্ডের প্রতিনিধি দলের মুখো মুখি হতে কলেজে যান বিপু। এসময় বোর্ডের প্রতিনিধি দলের সামনে থেকে বিপুকে আটক করে পুলিশ বলে তার স্ত্রীর অভিযোগ। তবে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা জানান, আটকের বিষয় তিনি কিছুই জানেননা।
এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে ৬০ দিনের বেশি সাময়িক বরখাস্ত করা যাবে না। বরখাস্তের সময়কাল এর চেয়ে বেশি হলে ওই শিক্ষককে মাসিক বেতন-ভাতা প্রদান করতে হবে। উচ্চ আদালতের এমন নির্দেশনা প্রতিষ্ঠানটিতে মানা হয়নি। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির বরখান্তকৃত অধ্যক্ষের সম্পূর্ন বেতন বন্ধ করে দিয়েছে কলেজ পরিচালনা পরিষদ।
আদালতের পর্যবেক্ষণের বলা হয়েছে ৬০ দিনের বেশি কোনো শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা যাবে না। এর বেশি বরখাস্ত করা হলে তাকে বেতন ভাতা দিতে হবে। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উজান তেওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরুন নবী সরকারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। যার বরখাস্তের মেয়াদ দেড় বছর পর্যন্ত গড়িয়েছিল। এরপর তিনি এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। যার ক্রমিক নং ৩৬৫৭/২০১৫। রিটে পর্যবেক্ষণের আদালত বলেছেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করে রাখা মানবিক অধিকারের লঙ্ঘন- এবং সংবিধান পরিপন্থি। কোন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদ যদি কাউকে আদালতের রায় না মানে তবে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে আদালতের পর্যবেক্ষণে।