বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের আটক ও সাংবাদিকদের হয়রানিতে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র

ক্রাইমবার্তা রিপোট :ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির প্রধান মার্ক গ্রিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অভিন্ন মূল্যাবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। বন্ধুদের খোলামেলা ও আন্তরিকতার সাথে কথা বলা প্রয়োজন। বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দের অব্যাহতভাবে আটক ও সাংবাদিকদের হয়রানি বাংলাদেশের অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর মত আমরাও উদ্বিগ্ন। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকার দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক অগ্রগতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের জন্য সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ, যা এদেশের মানুষের মতামতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটাবে।
বাংলাদেশ সফর শেষে আজ আমেরিকান ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মার্ক গ্রিন এ সব কথা বলেন। এ সফরকালে তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। ঢাকায় বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সাথে। দীর্ঘ দিনে কংগ্রেসম্যান, রাষ্ট্রদূত ও মিলিনিয়াম চ্যালেঞ্জ অ্যাকাউন্টের বোর্ড অব ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালনকারী গ্রিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত। সংবাদ সম্মেলনের পরই তিনি মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিডোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে গেছেন।
ইউএসএআইডির প্রশাসক বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বাংলাদেশের ভূমিকাকে প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিহাস রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো ভয়াবহ নৃশংসতাকে মনে রাখবে। তেমনি মনে রাখবে বিপদগ্রস্থ এসব মানুষকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা। কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষই রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সবার আগে এগিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্কট নিয়ে জানতে ও শুনতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে আমি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করছি। সঙ্কট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের করণীয় নির্ধারনে আমার অভিজ্ঞতার কথা ওয়াশিংটনকে জানাবো। চলতি সপ্তাহে আমি রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাংলাদেশী জনগোষ্ঠির জন্য ৪৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছি। ২০১৭ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র এ সঙ্কট মোকাবেলায় মোট ৩০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। কক্সবাজারে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে নেয়া প্রকল্পগুলো খাদ্য, সুরক্ষা, জরুরি আশ্রয়স্থল নির্মাণ, খাবার পানি, পয়:নিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যখাতে উদ্বাস্তুদের সহায়তা দিয়ে আসছে। বর্ষা মৌশুমকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার পরিমাণ আরো বাড়ানো হবে।
গ্রিন বলেন, সঙ্কটের দীর্ঘমেয়াদি সুরাহার জন্য এর মূল কারণগুলো মোকাবেলায় মনোযোগ দিতে হবে। এ লক্ষ্যেই আজ আমি মিয়ানমার যাব। সেখানে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সঙ্কট নিরসনে তাদের ভূমিকা পালনের তাগাদা দেব। এর মধ্যে রয়েছে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা অনতিবিলম্বে বন্ধ করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দেয়া, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুদের স্বেচ্ছা ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি এবং সম্প্রদায়গুলো মধ্যে বৈষম্য দূর করা।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অংশীদারত্ব, সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে ইউএসএআইডির শিকর গভীরভাবে প্রথিত। স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক শাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ একসাথে কাজ করছে। এখন আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্বাস্তু সঙ্কট মোকাবেলায় কাজ করছি। বাংলাদেশ এক সময় বহির্বিশ্ব থেকে খাদ্য সহায়তা নিত। আর আজ বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুর সহায়তা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এক দশক ধরে ছয় শতাংশের ওপর জিডিপি ধরে রাখা বিরাট অগ্রগতি। অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে ভবিষ্যতে আমরা একসাথে কাজ করব।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।