সাতক্ষীরায় সর্বোচ্ছ তাপমাত্র প্রবািহত

ক্রাইমবার্তা ডেস্করির্পোটঃবৃষ্টিহীন আকাশ থেকে ঝরছে অগ্নি। জৈষ্ঠ্যের খরতায় আগুন হাওয়ায় প্রকৃতিতে নেমে এসেছে বিবর্ণ দুপুর। মাঠ, ঘাট, খাল, বিল, পুকুর শুকিয়ে চৌচির। মধ্য দুপুরে শুকিয়ে যাচ্ছে গাছ। নলকূপেও উঠছে ঠিকমতো পানি। ভ্যাপসা গরম আর লু হাওয়ায় নাকাল হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। খরতাপে পুড়ছে সাতক্ষীরাসহ সারাদেশ। তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রিতে উঠানামা করছে। বাতাসের আদ্রতাও উঠানামা করছে। দু’একদিনের মধ্যে কোনো বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। ঘেমে একাকার। গরমের তীব্রতায় সেদ্ধ হচ্ছে প্রকৃতি। তীব্র গরমে দেখা দিচ্ছে নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা। খা খা রোদে জরুরি কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের সর্তক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, সাতক্ষীরায় বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবারও একই অবস্থা ছিল। সোমবার সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ২ ও সর্বনিম্ন ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অফিস। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা এ তাপদাহে পুড়ছে প্রকৃতি। সঙ্গে যোগ হয়েছে আর্দ্রতা। বাতাসের আর্দ্রতা ৭২ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ। ফলে ঘেমে একাকার হচ্ছে মানুষ। তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি হলেও আসলে অনুভূত হচ্ছে ৪৬ ডিগ্রির মতো গরম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য আর্দ্রতা কমে আসছে। গত বছর এই সময় তাপমাত্রা ছিলো ৩২ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ২৪ থেকে ২৮ শতাংশ। আবহাওয়া অফিস জানায় আর্দ্রতা বেশি হলে গরমও বেশি অনুভুত হয়।
আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্যমতে, সাতক্ষীরাসহ খুলনা বিভাগের পাঁচ জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরণের তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। খা খা রোদে পুড়ছে গোটা দক্ষিণাঞ্চল। সকাল থেকেই সূর্য যেন আগুন ঝরাতে থাকে। মাঝদুপুরে প্রকৃতি নেয় অগ্নিরূপ। ভ্যাপসা গরমে একটু প্রশান্তির আশায় কেউ কেউ ভিড় জমাচ্ছেন সরবতের দোকানে। কাঠফাটা রোদে চিল-চাতকের মতো হাঁসফাঁসে ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে জনজীবন। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন আরো জানান, তাপমাত্রা বেশি হলেই যে বেশি গরম অনুভুত হবে তা নয়। বাতাসে জলীয় কনার পরিমান বেশি থাকলে এবং মেঘলা আকাশে ভ্যাপসা গরম অনুভুত হয়। ফলে দিনের বেলা রাস্তাঘাট এক প্রকার ফাঁকা। একান্ত দরকার ছাড়া মানুষ রাস্তায় নামছেন না। যানবাহনের সংখ্যাও কম। গন্তব্যে পৌঁছুতে মানুষকে বেগ পেতে হচ্ছে। রিকশা ভ্যানসহ অন্যান্য ছোটখাট যানবাহন নিয়ে যারা রাস্তায় নামছেন, তারা অসহনীয় কষ্ট পাচ্ছেন।
গরমের তীব্রতায় শীতল স্পর্শ পেতে রাস্তার ধারের দোকানে সরবত ও ডাবের পানি পান করে পিপাসা নিবারণ করছেন অনেকেই। চলছে পবিত্র রমজান মাস। তীব্র গরমে মধ্য দুপুর শুরু হচ্ছে পিপাসা। পিপাসা অনেকেই একটু শীতল স্পর্শ পাবার আশায় ছায়া খুজে ফিরছেন। এই গরমে ফ্যানের বাতাসও যেনো গায় লাগে না। আর দিনে রাতে একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে গেলে কষ্ট আরো বেড়ে যায়। বিশেষ করে বাড়িতে শিশু ও বয়স্করা বেশি কষ্ট পায়। গরমে জীবন এখন ওষ্ঠাগত। খাল, বিল, পুকুর, নদী ভরাট ও গাছ কাটার ফল ভোগ করছি আমরা। খেটে খাওয়া মানুষের ভোগান্তি আরো বেশি। প্রচন্ড তাপদাহে তারা কাজ করতে গিয়ে ঘামে গোসল করে ফেলছে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. গাজী নাসির উদ্দিন জানান, গরমে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখিন হয় শিশুরা। ফলে তাদের ব্যাপারে বেশি সচেতন থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের। প্রচন্ড তাপদাহে বাচ্চারাসহ বড়রাও অসুস্থ হচ্ছে। এ গরমের কারণে তারা পানি শূণ্যতা, আমাশয়, ডায়রিয়া, জন্ডিস ও হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি, লবণ-পানির সরবত বা ডাবের পানি খেতে হবে। এছাড়া নবজাতকদের পর্যাপ্ত আলো বাতাসে রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেনো কোনো অবস্থায় শিশুর গায়ে ঘাম না বসে যায়। আবার অধিক বাতাসে কিম্বা এসি রুমে ঠান্ডা না লাগে সেদিকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী দুই দিন স্বস্তির কোনো খবর নেই। অর্থাৎ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে কোথাও কোথাও আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। বৃষ্টি না হলে এক সপ্তাহ থেকে দশ দিন পর্যন্ত তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।