শরীর ভাষাবিদদের মন্তব্য : নার্ভাস দু’জনই পুরনো কৌশলে কিমকে কাবু করেন ট্রাম্প

ক্রাইমবার্তা রিপোট:  মঙ্গলবার সকালে সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা দ্বীপের কাপেলা হোটেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বৈঠকে বসেন। একই সময় হোটেলের নির্ধারিত কক্ষে প্রবেশ করেন তারা। প্রথমে বামদিক থেকে কক্ষে প্রবেশ করেন কিম।

এরপর ডানদিক থেকে প্রবেশ করেন ট্রাম্প। এরপর ট্রাম্প হাত বাড়িয়ে দিয়ে ১৩ সেকেন্ডের করমর্দন আর কিমের পিঠ চাপড়ে দেন। বৈঠকজুড়ে ট্রাম্প ও কিমের শরীরী ভাষা কেমন ছিল তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে শরীরী ভাষা বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ঐতিহাসিক বৈঠকের শুরুতেই ট্রাম্প ও কিমকে একে অপরের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে গেছে।

প্রথম আগমন কিমের

বৈঠকের উদ্দেশ্যে ট্রাম্পই প্রথম শাংরি-লা হোটেল ছেড়ে কাপেলা হোটেলে দিকে রওনা হন। কিন্তু ট্রাম্পের অন্তত সাত মিনিট আগে হোটেলে পৌঁছান কিম। কিমের পক্ষ থেকে এটাকে বৈঠকের প্রতি কিমের শ্রদ্ধার বিষয়টি দেখছেন সাংবাদিকরা।

পরিচয়পর্ব

সাক্ষাতের প্রথম ৬০ সেকেন্ডে দেখা গেছে, দুই নেতাই পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছেন। সিঙ্গাপুরভিত্তিক শরীরী ভাষাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইনফ্লুয়েন্স সলিউশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারেন লেয়ং বলেন, ‘হাত মেলানোর সময় দু’জনকেই সমকক্ষ মনে হচ্ছিল। নিজেকে নেতা এবং বিষয়টির ওপর নিয়ন্ত্রণ আছে দেখাতে বেশ সচেতন ছিলেন ট্রাম্প।

তিনি চাচ্ছিলেন, তার কথাবার্তা অগ্রাধিকার দেয়া হোক এবং বৈঠকের নেতা তিনিই তা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।’

১৩ সেকেন্ডের করমর্দন

করমর্দন ছিল এ বৈঠকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। শুরুতেই পরিস্থিতি কার নিয়ন্ত্রণে তা অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে যায় করমর্দনের মাধ্যমে। এদিকটাই বিশেষ মনোযোগ ছিল বিশেষজ্ঞদের। কিমসহ এ পর্যন্ত তিন করমর্দনে আগে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। অনেকের মতে, তার করমর্দন করার ধরন অনেকটা ‘বর্বরের’ মতো।

এর আগে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধার সঙ্গে শক্ত করে চেপে ধরে করমর্দন করেন ট্রাম্প। কিমের সঙ্গেও একইভাবে করমর্দন করেছেন তিনি এবং সেটা ১৩ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। শরীরী ভাষা বিশেষজ্ঞ ট্রেসি ব্রাউন বলেন, শুরু থেকেই কিমের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের জন্যই এমনটা করেন ট্রাম্প।

কিমের চওড়া হাসি

ফটোসেশনের সময় কিম চিরাচরিত একটা চওড়া হাসি দেন। কোরীয় সংস্কৃতিতে ‘এমন হাসি দেয়া হয় সাধারণত সত্যিকার আবেগ আড়াল করা ও নিরপেক্ষ ও ভদ্রতার প্রদর্শনের লক্ষ্যে’।

হাত সামনে রেখে ট্রাম্পের সোজা অবস্থান

কথা বলার সময় দুই হাত কাছাকাছি রেখে সোজা হয়ে বসেছিলেন ট্রাম্প। এটা প্রায়ই তার নিজের ক্ষমতা জাহির করার একটা ধরন। এটা তার আত্মবিশ্বাস নিজেকে প্রবোধ দেয়ার ইঙ্গিত বহন করে। এছাড়া ট্রাম্পের ছিল তির্যক হাসি এবং হাত উশখুশ। এর মানে ওই সময় কিছুটা অনিশ্চয়তা বোধ করছিলেন তিনি। শরীরী ভাষার বিশেষজ্ঞ লিয়ং আরও বলেন, ‘বৈঠক কক্ষে বসার পরও দু’জনই স্নায়ুচাপ ও উত্তেজনা লুকাতে ব্যর্থ হয়েছেন। দুই হাত দিয়ে অস্থিরতা ঢাকার চেষ্টার পাশাপাশি চটজলদি হাসিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন ট্রাম্প। অন্যদিকে খানিক ঝুঁকে থাকা কিমের চোখ ছিল মাটির দিকে।

কিমের পিঠে ট্রাম্পের চাপড়

বৈঠকে ট্রাম্পকে বেশ কয়েকবার কিমের কাঁধে ও পিঠ চাপড়ে দিতে দেখা যায়। এটা বৈঠকে তার প্রভাব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষাকে নির্দেশ করে।

ট্রাম্প বক্তা, কিম শ্রোতা

বৈঠকের প্রথম পর্বে ট্রাম্পই বেশি সময় ধরে কথা বলেছেন, কিম ছিলেন অত্যন্ত মনোযোগী। বৈঠক কক্ষে যাওয়ার আগে উত্তর কোরিয়ার নেতা অন্তত তিনবার ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকে কথা শোনার চেষ্টা করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাহুতে চাপড় দিয়ে কিম মুখোমুখি সাক্ষাতে নিজের নিয়ন্ত্রণ আছে এটা দেখাতেও সচেষ্ট ছিলেন।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।