আল্লামা সাঈদীকে ছাড়াই তাঁর ছোট ভাইয়ের জানাজা সম্পন্ন: দাফন কাল

স্টাফ রিপোর্টার : ছোট ভাইয়ের নামাজে জানাযায় অংশ নিতে পারলেন না কারাবন্দী, বিশ^নন্দিত মুফাস্সিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। জানাযায় অংশ নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনে সাড়া দেয়নি সরকার। দুপুর দেড়টায় মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও সাঈদী প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন সেই আশায় জানাজার সময় পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। অবশেষে বিকাল ৪ টায় আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর  ছেলে শামীম সাঈদীর ইমামতিতে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুই দফা নামাজে জানাযা শেষে আগামীকাল বুধবার পিরোজপুরে মরহুম হুমায়ুন কবির সাঈদীকে দাফন করা হবে।

এ দিকে আজ অনুষ্ঠিত প্রথম নামাজে জানাযার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূইয়া, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, আল্লামা সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী ও উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী এবং মরহুমের একমাত্র ছেলে জুবায়ের। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের শাহজাহানপুর থানা আমীর আবদুল জাব্বার।

নামাজে জানাযায় অন্যান্যের মধ্যে অংশগ্রহন করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ইবনে কারীম আহমদ মিঠু, দিগন্ত টেলিভিশনের ডিইডি মজিবুর রহমান মঞ্জু, লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ উদ্দিন, বরগুনার পীর মাওলানা কামরুল আহসান আনসারী, কাটাবন মসজিদের ইমাম হাফেজ আবুল হাসান, মাওলানা আবু হানিফ নেছারী, হাফেজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

মঞ্জুরুল ইসলাম ভূইয়া তার বক্তব্যে বলেন, প্রত্যেকের নিজস্ব মত বা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। কিন্তু মৃত ব্যক্তির নামাজে জানাযা তো দল মতের উর্ধ্বে। তিনি বলেন, আল্লামা সাঈদী তার ছোট ভাইয়ের নামাজে জানাযায় হাজির হবেন বলে আমরা আশা করেছিলাম। এখানেও সরকার দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির উর্ধ্বে উঠতে পারলো না। তাহলে মানবতা আজ কোথায়?

ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আল্লামা সাঈদী তার ছোট ভাইয়ের নামাজে জানাযায় অংশগ্রহন থেকে বঞ্চিত হলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা তাকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়ে আসছি। মানবাধিকারের কথা বলে সরকার নিজেই মানবাধিকার লংঘন করছে।

জানাজার পর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র ইন্দুরকানী উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেন, নামাজে জানাযায় অংশ নিতে তার প্যারোলে মুক্তি দেয়ার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে বলে আমরা আশা করেছিলাম। পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার যোগাযোগ করা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় প্রক্রিয়াধীন। কিন্ত শেষ পর্যন্ত তাকে ছাড়াই জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, সরকার মানবতার কথা বললেও নিজেরাই মানবতা বিরোধী কাজ করে চলছে। তাই তাদের কাছে মানবতা আশা করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।

সাঈদী প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন এমন সংবাদে জোহরের নামাজের পরপরই মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠসহ আশেপাশের এলাকায় জনসমাগম বাড়তে থাকে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর আল্লামা সাঈদীকে ছাড়াই বিকাল ৪ টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

পিরোজপুরে দাফন আজ: নামাজে জানাযা শেষে মরহুম হুমায়ুন কবির সাঈদীর লাশ নিয়ে স্বজনরা পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দ্বিতীয় নামাজে জানাযা আজ বুধবার সকাল ৯টায় মরহুমের গ্রামের বাড়ীতে এসডি মদিনাতুল উলুম দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় ও সর্বশেষ নামাজে জানাযা বাদ জোহর পিরোজপুর আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ফাউন্ডেশনের মসজিদ অঙ্গনে আল্লামা সাঈদীর বড় ছেলে মরহুম রাফীক বিন সাঈদীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।

প্যারোলে মুক্তির আবেদন: গত সোমবার আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র ইন্দুরকানী উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আল্লামা সাঈদীকে প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করেছিলেন।

মাসুদ সাঈদী গতকাল দুপুর ১২টার পর দিকে তার ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমার আব্বা আল্লামা সাঈদীর [হাফিজাহুল্লাহ] প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। যদিও আমাদেরকে অফিসিয়ালি এখনো কোন কিছু তারা জানায়নি। তবে আমরা এখনো আশাবাদী। আল্লামা সাঈদী আসবেন এবং তিনিই জানাজার নামাজে ইমামতি করবেন ইনশাআল্লাহ।’

তবে মুক্তির প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হচ্ছে- এ ধরনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তিনি বেলা ২টার কিছু আগে তিনি আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেন- ‘এখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে আল্লামা সাঈদীর প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। প্রক্রিয়া শেষ করতে কতো সময় লাগে !!’

উল্লেখ্য, আল্লামা সাঈদীর ছোট ভাই হুমায়ুন কবির সাঈদী (৫৭) গত সোমবার সকালে ঢাকার ইব্রাহীম কার্ডিয়াক (বারডেম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তিকাল করেছেন। ইন্নানিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। তিনি গত ৫ দিন ধরে নিউমেনিয়া জ্বর এবং হৃদরোগেও আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ মেয়ে ও ১ ছেলে রেখে গেছেন।

এর আগে ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর সাঈদীর মাতা গুলনাহার ইউসুফের মৃত্যুর পর এবং তার বড় ছেলে মাওলানা রাফিক বিন সাঈদী’র ২০১২ সালের ১৩ জুন মৃত্যুর পর তিনি প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি ২৮ অক্টোবর মায়ের এবং ১৪ জুন ছেলের জানাজার নামাজ পড়ান।

Please follow and like us:

Check Also

কলারোয়া  উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি আবুল কাশেমের ইন্তেকালঃ বঙ্গবন্ধু বিশেষ সুপারিশে  যিনি কারা মুক্ত হন

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।