কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে : জাপাপ্রার্থী আক্কাস

ক্রাইমবার্তা রিপোট:: কুড়িগ্রাম-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ডা. আক্কাছ আলী সরকার অভিযোগ করেছেন, তার এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছে। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। সে কারণে ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে ভয় পাচ্ছেন। ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। এভাবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রভাব বিস্তার অব্যাহত থাকলে কোনোভাবেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না।

বুধবার বেলা সোয়া ১০ টায় উলিপুরের থেতরাই ইউনিয়নের দড়িকিশোর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন। ডা. আক্কাছ অভিযোগ করেন, এই কেন্দ্রে আমার তিনজন এজেন্ট আবুল কালাম আজাদ, তৈয়মুল ইসলাম ও ফেরদৌসকে কেন্দ্র থেকে তুলে নিয়ে যায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন। তারা তাদেরকে স্থানীয় হালিম মেম্বারের বাড়িতে আটকে রাখে। পরে আমি নিজে তিনজন অন্য এজেন্ট নিয়ে এসে কেন্দ্রে রাখলাম। তিনি বলেন, এভাবে বিভিন্ন কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছে। তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। এভাবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। তিনি প্রশাসনের কাছে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার আহবান জানান।

ডা. আক্কাছ বলেন, আমার ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এই কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দেখিয়ে ভোট দিতে হচ্ছে। ভোটাররা জীবনের ভয়ে কেন্দ্রে আসতে সাহস পাচ্ছেন না। সে কারণে সকালে তেমন একটা ভোটার লক্ষ করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমার নিশ্চিত বিজয় কেড়ে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটাচ্ছে। প্রশাসনও তাদের তল্পিবাহক হয়ে কাজ করছে।
এর আগে তিনি বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বুড়াবুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করছেন।

ভোটে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ এখনও পাইনি : রিটার্নিং কর্মকর্তা

নির্বাচনে এজেন্ট বের করে দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে কুড়িগ্রাম-৩ আসনের উপ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার জিএম সাহাতাব উদ্দিন বলেছেন, এজেন্ট বের করে দেয়া, তুলে নিয়ে যাওয়া, প্রভাব বিস্তার করা, জালভোটসহ কোনো অনিয়মের বিষয়েই আমার কাছে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। মৌখিকভাবে শুনে সেসব কেন্দ্রে আমরা পরিদর্শন করছি।

বুধবার বেলা সাড়ে ১০ টায় থেতরাই ইউনিয়নের পাকারমাথায় তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, আমি বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর আমরা পাইনি।
ভোটার উপস্থিতি কম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। এখন বাড়ছে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এখনও লিখিত অভিযোগ পাই নি। পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আইনশৃংখলাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে। কেউ ভোটে অরাজকতা করতে চাইলে তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।

ভোটার উপস্থিতি কম

কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর-চিলমারী) আসনে জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনে শংকার ভোট চলছে। তবে ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম। বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত কোনো কেন্দ্রেই লাইনধরা ভোটার লক্ষ করা যায়নি।

সোয়া ১১ টায় থেতরাই ইউনিয়নের দরিকিশোর সরকারী প্রাথমিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেছে। সেখানে কোন ভাটারের লাইন নেই। এই কেন্দ্রের প্রিজাইটিং অফিসার সাজেদুল করিম জানান, এখানে ভোট সংখ্যা ২ হাজার ৭৬৩ টি। এরমধ্যে মহিলা ১ হাজার ৪৬২ এবং পুরুষ ১ হাজার ৩১৫ টি। তিনি জানান এখন পর্যন্ত ২০ ভাগ ভোট পড়েছে তার কেন্দ্রে।

এদিকে এই কেন্দ্রেই সকালে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা তুলে নিয়ে যায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীর এজেন্ট আবুল কালাম আজাদ, তৈয়মুল ইসলাম এবং ফেরদৌস মিয়াকে তুলে নিয়ে গিযে পাশের হালিম মন্ডলের বাড়িতে আটকে রাখে। পরে জাপা প্রার্থী সেখানে ৩ ঘন্টা পর সেখানে অন্য এজেন্ট দেয়।

এদিকে ভোটাররা অভিযোগ করেছেন, এখানে নৌকায় ভোট দিয়ে ছবি তুলে না আনলে মামলা করার হুমকি দিচ্ছেন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। এরকম একজন ভোটার রেজাউল ইসলাম নৌকায় ভোট দেয়া সংক্রান্ত একটি ছবি তুলে এনে আওয়ামী লীগ নেতাদের দেখিয়েছেন। সেই ছবিতে দেখা যায় তিনি নৌকায় ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা না করলে আমাকে মামলায় ফেলানো হতো।

এই কেন্দ্রেস কালে বাবু ও নাছির আহমেদ নামের দুই জাপা নেতাকে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা আটক করে পুলিশে দিয়েছে।

পৌনে ১১ টায় দুর্গাপুর ইউনিয়নের উলিপুর মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদরাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে সেখানেও কোনো ভোটারের লাইন নেই। অলস বসে আছেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা। এই কেন্দ্রের প্রিজাইটিং অফিসার অশোক কুমার জানান, মোট ২ হাজার ১৮৬ ভোটের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ২২৪ এবং মহিলা ১ হাজার ১২০ জন। এরমধ্যে ওই সময় পর্যন্ত তার কেন্দ্রে ১০ ভাগ ভোটও পড়েনি।

এদিকে সাড়ে ১০টায় দুর্গাপুর ইউনিয়নের অর্জুনডারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেছে সেখানে কোনো ভোটার না থাকলেও উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা সেখানে আতঙ্ক তৈরি করে রেখেছেন। ভোট কেন্দ্রে ঢুকতেই সাংবাদিকদের বাধা দেয় পুলিশ সদস্যরা। তারা সাংবাদিকদের সেখানে ভোটকক্ষে গিয়ে ছবি তুলতেও বাধা দেয়। এসময় সাংবাদিকদের সাথে এক পুলিশ সদস্যের বিতণ্ডা হয়। এই কেন্দ্রের প্রিজাইটিং অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল ইসলাম জানান, তার কেন্দ্রে ২ হাজার ৫৬৪ ভোটের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ২৬৮ এবং মহিলা ১ হাজার ২৯৬ জন। এর মধ্যে সেই সময় পর্যন্ত ৫ ভাগ ভোটও পড়েনি সেখানে।

ভোটার উপস্থিতি কম প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ডা. আক্কাছ আলী সরকার জানান, আওয়ামীলীগ ভোটারদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করার কারণে ভোটাররা কেন্দ্রে আসছেন না।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছেন, প্রতিটি সাধারন কেন্দ্রে ২২ জন এবং প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে আনছার ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে ২৬৩ জন সদস্যের ১৩ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের ৩৪৬ জন সদস্যের ৩০ টি ভ্রাম্যমান মোবাইল টিম। মাঠে থাকবে ৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এর অধীনে ৪ টি ভ্রাম্যমান আদালত। ২৫ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ২৫টি মোবাইল টিম আছে মাঠে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন নয়া দিগন্তকে আরও বলেন বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন চায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। তাই তাদের চাওয়া পূরণ করতে আমাদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। আমরা পর্যাপ্তের চেয়েও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছি। নিরাপত্তার প্রশ্নে আমাদের কোনো সংশয় নেই। আমাদের জনবলের কোনো কমতি নেই। কেউ ন্যুনতম কোনো ঝামেলা করার চেষ্টা করলে ১ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে সেখানে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবির মোবাইল টিম ও ভ্রাম্যমাণ আদালত হাজির হয়ে যাবে। নির্বাচন নিয়ে কেউ ঝামেলা করতে চাইলে তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে প্রকাশ, এই উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৫৯ টি ভোট কেন্দ্রের ৭৬৭ টি কক্ষে। অস্থায়ী ভোট কক্ষ ১২১ টি। এরমধ্যে চর এলাকার ১৪ টিসহ অধিক ঝুকিপুর্ন ৫৯ টি কেন্দ্র রয়েছে। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ডা. আক্কাস আলী সরকার এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অধ্যাপক এম এন মতিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোট গ্রহণের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১৫৯ জন প্রিজাইটিং অফিসার, ৭৬৭ সহকারী প্রিজাইটিং অফিসার এবং ১ হাজার ৫৩৪ জন পোলিং অফিসার। এখানে এবার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৭৭ জন। মহিলা ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫৫৮ জন।
সকাল ৮ টায় শুরু হওয়া ভোট বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে।

Please follow and like us:

Check Also

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাপা মনোনীত প্রার্থী মশিউর রহমান বাবু’র নির্বাচনী মতবিনিময় সভা

ফিরোজ হোসেন, সাতক্ষীরা : আসন্ন ২৯ মে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।