ওসি-র ঘরে দুই নারী, চম্পট দিল সিসিটিভি দেখে

ক্রাইমবার্তা  ডেস্করিপোট:থানার ভিতর কোথায় কী হচ্ছে, সেই নজরদারি রাখতেই সিসিটিভির ব্যবস্থা। সেরেস্তা হোক বা হাজত, ঢোকার মুখে সেন্ট্রি পয়েন্ট হোক বা ডিউটি অফিসারের ঘর— সবটাই লাইভ ক্যামেরাবন্দি। কিন্তু, সেই সিসি ক্যামেরার মনিটর দেখেই থানা থেকে হেলতে দুলতে চম্পট দিলেন দুই মহিলা আসামি!

শুক্রবার কাকভোরে পশ্চিবঙ্গের বিধাননগর কমিশনারেটের নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানা থেকে ওই মহিলা আসামিরা চম্পট দিলেও এখনও তাদের কোনও হদিশ পায়নি পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ জুলাই কলকাতা বিমানবন্দরে দিল্লির বিমান ধরার সময় তিন মহিলা যাত্রীকে আটক করে তাদের হাতে তুলে দেয় সেন্ট্রাল ইনডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ)। তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়,  আটক যাত্রীদের মধ্যে দু’জন তানজিলা এবং মাসতুরা বাংলাদেশের কুমিল্লার বাসিন্দা। তৃতীয় মহিলা তাসলামের বাড়ি দিল্লিতে। আটক দুই বাংলাদেশি মহিলার কাছ থেকে জাল এটিএম কার্ডও পাওয়া যায়। পরে তিন জনকেই আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তদন্তে জানা গিয়েছিল, ওই তিন মহিলাই পাচার চক্রের সাথে যুক্ত।

২৪ জুলাই থেকেই ওই মহিলা আসামিরা বিমানবন্দর থানার হেফাজতে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই থানায় মহিলা আসামিদের জন্য আলাদা কোনও লক-আপ বা হাজত নেই। তাই তাদের দিনের বেলায় ডিউটি অফিসারের সামনেই রাখা হয়। রাতে আইসি-র ঘর বা কম্পিউটার রুমে রাখা হয় তাদের।

সেই নিয়ম মেনেই বৃহস্পতিবার রাতে ওই তিন জনকে আইসি অরূপ রায়চৌধুরীর ঘরে রাখা হয়েছিল। রাতের ডিউটি অফিসার ছিলেন সাব ইন্সপেক্টর চন্দন চক্রবর্তী। অন্য দিনের মতো শুক্রবার সকালে আইসি-র ঘর খুলে দেখা যায়, ঘর ফাঁকা। তার পরেই আসামিদের হন্যে হয়ে খুঁজতে শুরু করে পুলিশ।

কিন্তু, কী করে পালাল আসামিরা?

সেই উত্তর খুঁজতে গিয়েই সামনে আসে কী ভাবে রাতভর আইসি-র ঘরে রাখা সিসি ক্যামেরার মনিটরে নজর রেখে পালানোর ছক কষেছিলেন ওই মহিলা আসামিরা। সূত্রের খবর, সকাল সওয়া পাঁচটা নাগাদ ওই মহিলা আসামিদের এক জন শৌচাগারে যাওয়ার কথা বলেন। বাইরে থেকে বন্ধ দরজা খুলে তাকে শৌচাগারে নিয়ে যান এক মহিলা সেন্ট্রি। সেই ফাঁকেই সিসি ক্যামেরার মনিটরে ঘরে থাকা বাকি দু’জন দেখতে পায়, নিজের ঘরে চেয়ারে বসেই ঢুলছেন ডিউটি অফিসার। গোটা ঘর ফাঁকা। গেটের সামনে সেন্ট্রি ডিউটি থাকে। সেখানেও লাগানো আছে সিসি ক্যামেরা। আসামিরা দেখতে পান, সেই সেন্ট্রিও ঝিমোচ্ছেন।

সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি দু’জন। গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে আসেন তারা। তার পর পা টিপে টিপে থানার গেট পেরিয়ে চম্পট। পালানোর গোটা দৃশ্যই ধরা পড়েছে সিসি ক্যামেরায়। কিন্তু, তখন সেই ক্যামেরায় পুলিশ নয় নজর রেখেছিল আসামিরাই!

এই নিয়ে গত এক সপ্তাহে দ্বিতীয় বার আসামী পালানোর ঘটনা ঘটল বিধাননগর কমিশনারেটে। এর আগে গত ২১ জুলাই মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে বিধাননগর উত্তর থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়েন বিজয় সাহু নামে এক গাড়িচালক। তার মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়ে এনে থানায় নিয়ে এসে গ্রেফতার করা হয়। ভবানীপুরের বাসিন্দা বিজয়কে ডিউটি অফিসার তার উল্টোদিকের চেয়ারে বসতে বলেন। সূত্রের খবর, হঠাৎই সবাইকে চমকে দিয়ে সামনের টেবিলে রাখা এফআইআর, মেডিক্যাল টেস্টের কাগজ এক টানে ছিনিয়ে নিয়ে থানার খোলা দরজা দিয়ে দৌড় মারেন বিজয়। তখন রাত সাড়ে আটটা। সেন্ট্রি থাকলেও, তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই থানার চৌকাঠ পেরিয়ে রাস্তায় বিজয়। আর তার নাগাল পায়নি পুলিশ।

যদিও গোটা বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি ডেপুটি কমিশনার(সদর) অমিত জাভালগি।

Please follow and like us:

Check Also

বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ৮ জলদস্যু গ্রেফতার

বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ অপহরণে যুক্ত ৮ জলদস্যুকে আটক করেছে সোমালিয়ার পুলিশ। রোববার জাহাজটিকে মুক্তি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।