ধানমন্ডিতে দুই ঘণ্টার ‘ঝড়ে’ আহত অর্ধশত:সাংবাদিকদের বেধড়ক মারধর:আজ থেকে বাস চলবে:সরকারের কঠোর সমালোচিত বৈশ্বিক গণমাধ্যমে

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: দিনের উত্তাপ সকালে গিয়ে টের পাওয়া যায়নি। ধানমন্ডির জিগাতলা মোড়ে আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে পুলিশের কিছুসদস্য নির্মাণাধীন একটি ভবনে বসে ছিল। পরনে শুধুই ইউনিফর্ম। সামনে ভেস্ট, লেগগার্ড আর হেলমেট রাখা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে গতকাল শনিবারের মতো উত্তাপ না থাকায় অনেকটাই অলস সময় পার করছিলেন তাঁরা। সড়কে গাড়ি চলাচল অন্যান্য দিনের মতোই কম।

বেলা একটার দিকে হঠাৎই বদলে যায় চিত্র।

এ সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে আরও পুলিশ এসে অবস্থান নেয়। উল্টো দিকে তাকালে দেখা যায় বিজিবি ৪ নম্বর গেটের দিক থেকে বিশাল একটি মিছিল এগোচ্ছে। হঠাৎই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

ঢাকার ধানমন্ডিতে শিক্ষার্থী ও পুলিশের অবস্থান।ঢাকার ধানমন্ডিতে শিক্ষার্থী ও পুলিশের অবস্থান।আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতা–কর্মীদের দুই ঘণ্টার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, মারপিট, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের ঘটনায় ধানমন্ডি থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে বাটা সিগন্যাল পর্যন্ত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মুহূর্তে বদলে যাওয়া ধানমন্ডি এলাকায় আহত হন অর্ধশত শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক। আহত ব্যক্তিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনে আজ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে জিগাতলামুখী হন। তাঁদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিলেন বেশি। তাঁদের সঙ্গে ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীও কিছু ছিল। মিছিল থেকে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয়। বেলা ১টায় মিছিলটি জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের মোড় পর্যন্ত এলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। সাঁজোয়া যান নিয়ে ধাওয়া করে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা যে যাঁর মতো ছুটতে থাকেন। কেউ কেউ লেকের মধ্যে ঝাঁপ দেন। পুলিশ সেখানে গিয়েও তাঁদের লাঠিপেটা করেন।

ঢাকার জিগাতলায় বিজিবি গেট এলাকায় আজ রোববার হামলার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার জিগাতলায় বিজিবি গেট এলাকায় আজ রোববার হামলার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।ধাওয়া খেয়ে অনেক শিক্ষার্থী জিগাতলার ইবনে সিনা হাসপাতালের গলি দিয়ে বিভিন্ন বাসার নিচে আশ্রয় নেন ও লেক পাড়ের দিকে চলে যান। সেখান থেকে সাংবাদিকেরা অনেককে বের করে নিয়ে আসেন। তখন এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, মিছিল নিয়ে তাঁরা জিগাতলা মোড় থেকে ইউটার্ন নিয়ে আবার ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের ওপর চড়াও হয়। লেক পাড়ের দিকে যাঁরা আশ্রয় নিতে যান, সেখানে ছাত্রলীগ তাঁদের মারধর করে ধাওয়া দেয়।

জিগাতলায় লাঠিপেটা ও ধাওয়ার পর ধানমন্ডির বিভিন্ন গলিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করা হয়। ধানমন্ডি ১ নম্বর থেকে মাথায় হেলমেট, মুখে কাপড়, হাতে রড, রাম দা ও লাঠিসোঁটাসহ একদল যুবক পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিতে থাকেন।

বেলা দুইটার সময় সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজনকে পেটান একদল যুবক। শিক্ষার্থী ও সন্দেহভাজন কাউকে পেলেই তাঁরা হামলা চালান। এ সময় পুলিশ পদচারী–সেতুর নিচে দাঁড়িয়ে থাকে।

ঢাকার ধানমন্ডি লেকে আজ রোববার লাঠিপেটা করে পুলিশ। ঢাকার ধানমন্ডি লেকে আজ রোববার লাঠিপেটা করে পুলিশ।সোয়া দুটার দিকে ধানমন্ডি ২ নম্বরে মিরপুর সড়কে দাঁড়িয়ে পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেছেন, মিছিলকারীরা ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে যাচ্ছিলেন। তাঁদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা শোনেননি। তিনি বলেন, সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। হাতে লাঠি ও রামদা থাকা যুবকদের নিবৃত্ত না করা ও সাংবাদিকদের মারধর করার সময় পুলিশের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিল।

বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ ও যুবকদের দল এলিফ্যান্ট রোডের দিকে এগোয়। সেখানে মাল্টিপ্ল্যান সিটির সামনে পুলিশ আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় এবং আবারও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

সায়েন্স লাব মোড়ে রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করা হয়। ছবি: প্রথম আলোসায়েন্স লাব মোড়ে রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করা হয়। ছবি: প্রথম আলোধানমন্ডি এলাকা থেকে এলিফ্যান্ট রোড পুরোটাই তখন হেলমেট পরিহিত ও হাতে রড, লাঠি, রামদাসহ থাকা যুবকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তাঁরা ধাওয়াও দিতে থাকেন। তারা ‘জয় বাংলা’ ও শিবিরকে উদ্দেশ্য করে স্লোগান দিতে থাকেন। পৌনে ৩টার দিকে বাটা সিগন্যাল থেকে বাঁ দিকে হাতিরপুল যাওয়ার সড়কে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়। ৩টার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ হামলা ও ধাওয়ার ঘটনায় আশপাশের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের শাটার টেনে বন্ধ করে দেয়। আতঙ্কে অনেকেই বিভিন্ন বাসা ও দোকানে আশ্রয় নেন।

হামলার ছবি তলার সময় একজন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফারকে মারধর করা হয়। ছবি: প্রথম আলোহামলার ছবি তলার সময় একজন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফারকে মারধর করা হয়। ছবি: প্রথম আলোহামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা জানান, আরও অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া প্রথম আলোর প্রতিবেদক, এপির ফটোসাংবাদিকসহ চারজন সাংবাদিককে পেটানো হয়েছে।

———-০———————

সাংবাদিকদের বেধড়ক মারধর

ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন ফটোসাংবাদিক এম আহাদ। ধানমন্ডি, ঢাকা, ৫ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলোল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন ফটোসাংবাদিক এম আহাদ। ধানমন্ডি, ঢাকা, ৫ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলোক্যামেরা দেখলেই তেড়ে আসছিলেন তাঁরা। তাঁদের মাথায় হেলমেট আর হাতে লাঠিসোঁটা, রড। কারও হাতে রামদা-কিরিচের মতো ধারালো দেশীয় অস্ত্র। পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে চলছিল এ যুবকের দল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে মাঠে নামা শিক্ষার্থীদের ধরে ধরে পেটাচ্ছিলেন তাঁরা। রাজধানীর ধানমন্ডিতে এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করার সময় অন্তত পাঁচজন সাংবাদিককে মারধর করেছেন ওই যুবকেরা।

স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আহমেদ দীপ্ত। পান্থপথ, ঢাকা, ৫ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলোস্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আহমেদ দীপ্ত। পান্থপথ, ঢাকা, ৫ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলোআর রোববার বেলা ২টার দিকে ধানমন্ডির ১ নম্বর সড়কে (সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়) লাঠিসোঁটা হাতে যুবকদের হাতে মারধরের শিকার হন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আহমেদ দীপ্ত। দীপ্ত জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছিলেন ধানমন্ডির ১ নম্বর সড়কে। সেখানে তিনিসহ কয়েকজন সংবাদকর্মী দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় ঢাকা কলেজের দিক থেকে লাঠিসোঁটা হাতে আসা ছাত্রলীগের একটি মিছিল শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে। ধাওয়ায় সেখানে কর্মরত সংবাদকর্মীরা দৌড় দিলে হামলাকারীদের একজন তাঁর পায়ে রড দিয়ে আঘাত করলে তিনি পড়ে যান। এরপর ২০-২৫ জন মিলে লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে ব্যাপক মারধর করেন তাঁকে। মারের কারণে দীপ্তর মাথার হেলমেট ভেঙে যায়। মাথা বাঁচাতে গিয়ে হাতে আঘাত পান দীপ্ত। তাঁর পুরো শরীরে কালশিটে রক্তাক্ত দাগ।

সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকাতেই আরও মারধরের শিকার হন এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) ফটো সাংবাদিক এ এম আহাদ, দৈনিক ‘বণিক বার্তা’র পলাশ শিকদার ও ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিক রাহাত করিম। আহত সাংবাদিকদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছ।

হামলাকারীরা রাহাতের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন। রড, লাঠি দিয়ে মারধর করে তাঁকে রক্তাক্ত করা হয়।

লাঠিসোঁটা হাতের যুবকদের মধ্যে মহানগর উত্তরের ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছিলেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

আজ থেকে বাস চলবে

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাস মালিক-শ্রমিকদের ‘অঘোষিত ধর্মঘটে’র অবসান হতে যাচ্ছে। কাল সোমবার থেকে যানবাহন চলাচল আবার শুরু হচ্ছে। আজ রোববার রাতে যানবাহন চলাচলের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ।

ঢাকার রাস্তায় স্কুলের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর রাজধানীসহ সারা দেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিভিন্ন যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষা করতে শুরু করে । তাদের এই আন্দোলন অভাবনীয় সাড়া জাগায়। কিছু কিছু জায়গায় অবশ্য গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই রাজধানীসহ দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ‘নিরাপত্তার অভাবে’ যানবাহন চলাচল অনেক জায়গায় বন্ধ করে দেন মালিকেরা। শুক্রবার রাতেও অবশ্য দূরপাল্লার গাড়ি চলে। তবে শনিবার থেকে ‘নিরাপত্তার অভাবের’ কারণ দেখিয়ে তা–ও বন্ধ করে দেন মালিকেরা। এতে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

দুদিন বন্ধ থাকার পর আজ রাতে বাসমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি জানায়, কাল থেকে আবার পরিবহন চালু হচ্ছে। সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিরাপত্তার অভাবের কারণে মালিক-শ্রমিক উভয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আবার যানবাহন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাল (সোমবার) থেকে আবার যানবাহন চালু হচ্ছে।’
সূত্র জানায়, পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে মালিকদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই মালিকেরা যানবাহন চালানোর সিদ্ধান্ত নেন

 

——-০—————-

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরকারের কঠোর আচরণ সমালোচিত হচ্ছে বৈশ্বিক গণমাধ্যমে

নিরাপদ সড়কের দাবিতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর উঠে এসেছে বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা চ্যানেল এবং নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। দুই দিন ধরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের খবরও এসব সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে পুরো ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন অংশ অচল করে দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দুর্বল শাসনব্যবস্থার কারণেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার পাশাপাশি বিবিসির মূল চ্যানেলে বৈশ্বিক দর্শকদের জন্য কিশোর আন্দোলনের ওপর দীর্ঘ ভিডিও তথ্যচিত্র প্রচার করে হয়। একই ধরনের দীর্ঘ ভিডিও প্রচার করে আল জাজিরা। আল জাজিরা এ বিষয়ে দুটি ভিডিও খবর প্রচার করে। ৫ আগস্টের খবরে আন্দোলনে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল হামলা, সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের কথা এবং মোবাইলে ইন্টারনেট সীমিত করার কথা বলা হয়।

আল জাজিরা আরও বলেছে, রোববারের সংঘর্ষে আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি একাধিক সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করা হয়। কিছু সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হয়। অভিযোগ আছে, শাসকদল আওয়ামী লীগের কর্মীরা এ কাজ করছেন। রোববার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বানের কথা উল্লেখ করা হয় সংবাদে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে। রাস্তায় পড়ে আছে কাঁদানে গ্যাসের শেল। ছবি: রয়টার্সআন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে। রাস্তায় পড়ে আছে কাঁদানে গ্যাসের শেল। ছবি: রয়টার্সবিবিসির খবরে আরও বলা হয়, আন্দোলনকারীদের ওপর কারা হামলা চালিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে অভিযোগের তির শাসকদল আওয়ামী লীগের দিকে। বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে সংঘর্ষের খবর প্রকাশ করে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ন্যায়বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। কয়েক দিন ধরে স্কুল ইউনিফর্ম পরা হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাজধানী অচল করে দিয়েছে ও রাস্তা অবরোধ করেছে। আন্দোলনকারীরা বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থার উন্নতির দাবি তুলেছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট আরও বলেছে, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গতকাল শনিবার থেকে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছে ও লাঠিপেটা করছে। এতে আহত কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। বিক্ষোভের আগুন দমাতে গত বৃহস্পতিবার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার।

এসব সংঘর্ষের খবরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে ছবি ও ভিডিওচিত্রও প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন সাময়িকী টাইম-এর খবরে বলা হয়েছে, ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবরোধ করেছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এতে করে পুরো রাজধানী অচল হয়ে গেছে। এ সময় বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে অনেকে আহত হয়েছে। চালকদের লাইসেন্স চেক করার কারণে পুরো ঢাকায় দীর্ঘ সময় ধরে যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে। ছবি: রয়টার্সআন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে। ছবি: রয়টার্সটাইম বলছে, শিক্ষার্থীরা ৯টি দাবি পূরণের শর্ত দিয়েছে। এই আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় বাস কোম্পানিগুলো রাস্তা থেকে যানবাহন তুলে নিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়েছেন। এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান-এর খবরে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় সহপাঠীদের মৃত্যুর প্রতিবাদে কিশোর-কিশোরীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা স্থবির করে দিয়েছে। একই দেশের পত্রিকা টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, কিশোর-কিশোরীদের বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে, আহত শতাধিক।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। লাঠিপেটার জবাবে আন্দোলনকারীরা পুলিশের দিকে পাথর ছুড়েছে।

সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টজ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমাহীন দুর্নীতির কারণেই বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।

একপর্যায়ে একদল যুবক আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দায়িত্বরত সাংবাদিকদেরও মারধর করা হয়। ছবি: রয়টার্সএকপর্যায়ে একদল যুবক আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দায়িত্বরত সাংবাদিকদেরও মারধর করা হয়। ছবি: রয়টার্সএই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে শাসক দলের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের ওপর রাবার বুলেট ছুড়ছে পুলিশ।

বাংলাদেশের বেদনাদায়ক ও বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি নজর কেড়েছে দুনিয়াখ্যাত ভ্লগার ও ইউটিউব তারকাদের। ভ্লগ হচ্ছে ভিডিও ব্লগ। ইসরায়েলি আরব তরুণ নাস তাঁর এক মিনিটের ভিডিও ‘নাস ডেইলি’র জন্য বিখ্যাত। এই তরুণ প্রতিদিন দুনিয়ার বিভিন্ন বিভিন্ন দেশের অসাধারণ ও ইতিবাচক বিষয় নিয়ে ভ্লগ প্রকাশ করেন। রোববার তিনি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের সড়কে মৃত্যু এবং তার প্রতিবাদের আন্দোলনের বিষয়ে। এতে আন্দোলনের চিত্র এবং দাবির কথা তুলে ধরে তিনি বিশ্ববাসীকে এর প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। নাস বলেছেন অনলাইনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা এই কিশোর আন্দোলন অভূতপূর্ব।

ড্রিউ ব্রিনস্কি নামে আরেকজন আন্তর্জাতিক ফেসবুক সেলিব্রিটি ‘বাংলাদেশে কী ঘটছে’ (হোয়াটস হ্যাপেনিং ইন বাংলাদেশ) শিরোনামে ভিডিওচিত্র প্রকাশ করেন। ফেসবুক ওয়াচ নামের এই ভিডিওতে আন্দোলনের কারণ ব্যাখ্যা করে সরকারের কঠোর আচরণের সমালোচনা করা হয়েছে। ভিডিও দুটি ইতিমধ্যে কয়েক লক্ষবার দেখা হয়েছে।প্রথম আলো

Please follow and like us:

Check Also

কলারোয়া  উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি আবুল কাশেমের ইন্তেকালঃ বঙ্গবন্ধু বিশেষ সুপারিশে  যিনি কারা মুক্ত হন

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।