বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেপ্তার ২২ ছাত্র দুই দিনের রিমান্ডে

ক্রাইমবার্তা রিপোট:   পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের পৃথক দুই মামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ছাত্রের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম আবদুল্লাহ আল মাসুদ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।

গ্রেপ্তার আসামিরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথইস্ট ও ব্র্যাকের ছাত্র। এর মধ্যে বাড্ডা থানা-পুলিশ ১৪ জন ছাত্রকে এবং ভাটারা থানা-পুলিশ ৮ জন ছাত্রকে আদালতে হাজির করে প্রত্যকের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে।

বেলা ৩টার দিকে আদালতের এজলাসে তোলা হলে স্বজনদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছাত্ররা। তাঁদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, পুলিশ ধরে নিয়ে থানায় ফেলে নির্যাতন করেছে। ক্লাস শেষে বাসায় ফেরার পথে কয়েজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

তবে বাড্ডা থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জুলহাস মিয়া রিমান্ড আবেদনে বলেন, গতকাল (সোমবার) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আফতাব নগর মেইন গেটের রাস্তায় যান চলাচলে বাধা দেয়। লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল দিয়ে রাস্তার গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে আসামিরা। এ ঘটনার ইন্ধনদাতা এবং অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, আসামিরা বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তাঁরা বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরাতে গেলে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেপ্তার ২২ শিক্ষার্থীকে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় অনেককেই রশি দিয়ে বেঁধে আনতে দেখা যায়। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশঅন্যদিকে ভাটারা থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হাসান মাসুদ রিমান্ড আবেদনে বলেন, আসামিরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অ্যাপোলো হাসপাতাল ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় লোহার রড, লোহার পাইপ ও ইট দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। আসামিরা বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলের আশপাশের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসার দরজা, জানালা ভাঙচুর করে। পলাতক আসামিরা জঙ্গি গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য। তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী এ কে এম মুহিউদ্দিন ফারুক আদালতকে বলেন, পুলিশ নিরপরাধ ছাত্রছাত্রীদের ধরে নিয়ে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিদওয়ান আহমেদের আইনজীবী কবির হোসেন আদালতকে বলেন, ‘পুলিশ ধরে নিয়ে থানায় ফেলে মেরে তাঁর হাতের একটি আঙুল ভেঙে দিয়েছে। তৃতীয় পক্ষের যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাঁদের পুলিশ গ্রেপ্তার না করে নিরীহ ছাত্রদের ধরে এনেছে।’

এ ছাড়া আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেপ্তার করা ছাত্রদের পরীক্ষা চলছে। ৯ আগস্ট তাঁদের পরীক্ষা আছে। জামিন না পেলে তাঁদের শিক্ষা জীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

গ্রেপ্তার ছাত্র মাসাদ মরতুজা বিন আহাদ, ফয়েজ আহম্মেদ আদনান এবং আজিজুল হাকিমের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, পুলিশ থানায় ফেলে এই ছাত্রদের বেধড়ক পিটিয়েছে। তবে এই তিনজনের ব্যাপারে পুলিশ আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে দাবি করছে, গ্রেপ্তার করার সময় ধস্তাধস্তির কারণে তাঁরা সামান্য আহত হন। তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বাড্ডার মামলায় গ্রেপ্তার ১৪ ছাত্র হলেন, রিসালাতুল ফেরদৌস, রেদোয়ান আহমেদ, রাশেদুল ইসলাম, বায়েজিদ, মুশফিকুর রহমান, ইফতেখার আহম্মেদ, রেজা রিফাত আখলাক, এএইচএম খালিদ রেজা, তারিকুল ইসলাম, নূর মোহাম্মাদ, সীমান্ত সরকার, ইকতিদার হোসেন, জাহিদুল হক ও হাসান। আর ভাটারা থানার মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্ররা হলেন, আজিজুল করিম, মাসাদ মরতুজা বিন আহাদ, ফয়েজ আহম্মেদ আদনান, সাবের আহম্মেদ, মেহেদী হাসান, শিহাব শাহরিয়ার, সাখাওয়াত হোসেন ও আমিনুল এহসান।

Please follow and like us:

Check Also

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১৩

ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।