দোহারে পদ্মার তীর রক্ষায় ১৪৮৩ কোটি টাকার প্রকল্প

ক্রাইমবার্তা রিপোট: ঢাকার দোহার উপজেলার মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী ড্রেজিং ও বাম তীর সংরক্ষণসহ ১১ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।

এর মধ্যে দোহারের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৮৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এটিসহ অন্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৬ হাজার ৪৪৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬ হাজার ৪৪০ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় পরিকল্পনা সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা সেখানে ছিলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, দোহার এলাকাটি পদ্মা সেতুর কাছাকাছি হওয়ায় এ এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হলে প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার নতুন ভূখণ্ড পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে ড্রেজিংয়ে যে অর্থ ব্যয় হবে, তা উঠে আসবে। উদ্ধার হওয়া এই জমি অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে।

মুস্তফা কামাল বলেন, একনেক বৈঠকে দেশের যেসব স্থানে তাঁত শিল্প রয়েছে, সেগুলোর জন্য প্রকল্প নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, সিলেটের মনিপুর এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাঁত শিল্প বিকাশে প্রকল্প নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ‘দোহার উপজেলার মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী ড্রেজিং ও বাম তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৮৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার মিটার নদী তীর সংরক্ষণ, ৪২২ দশমিক ৫৫ মিটার এন্ডটার্মিনেশন এবং ২৪ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করা হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ওই এলাকায় অবস্থিত বসতবাড়ি, হাইওয়ে, রাস্তাঘাট, মাদ্রাসা-মসজিদ ও ফসলি জমিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা বা সম্পদ পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে এবং ভূমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।

সূত্র জানায়, অনুমোদিত প্রকল্পটি ঢাকার দক্ষিণে দোহার উপজেলায় পদ্মা নদীর বাম তীরে অবস্থিত। পদ্মার বাম তীরে বরাবর প্রচণ্ড ভাঙন দেখা দেয়ায় এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা-দোহার মহাসড়ক হিসেবে ব্যবহৃত ঢাকা দক্ষিণ-পশ্চিম বাঁধ কাম রাস্তাসহ প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মার্কেট এবং কৃষি জমিসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীভাঙনের সম্মুখীন।

এ সমস্যা সমাধানে ২০১১ সালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালানো হয় এবং ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে সমীক্ষা প্রতিবেদন হালনাগাদ করে। সে পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হলে তা অনুমোদন লাভ করেছে।

একনেকে মঙ্গলবার অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে : অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩ হাজার ১৯৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ডেসকো এলাকায় স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার সরবরাহ ও স্থাপন, ব্যয় হবে ১৮৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাংলাদেশে তাঁত বোর্ডের আওতায় ৫টি বেসিক সেন্টারে ৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, একটি ফ্যাশন ডিজাইন ইন্সটিটিউট এবং ২টি মার্কেট প্রমোশন কেন্দ্র স্থাপন, ব্যয় হবে ১১৭ কোটি টাকা।

ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পীরগঞ্জ, রংপুর স্থাপন, ব্যয় হবে ১৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সরকারি শিশু পরিবার এবং ছোটমণি নিবাস নির্মাণ/ পুনর্নির্মাণ, ব্যয় হবে ২৯৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। হাইটেক পার্ক, সিলেটের প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ, ব্যয় হবে ২৯০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসনে পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং, ব্যয় হবে ২৯২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যানঘাট সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৬৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

বীরগঞ্জ-খানসামা-দারোয়ানী, খানসামা-রানীবন্দর এবং চিরিরবন্দর-আমতলী বাজার জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ; প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৪৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে পিসি গার্ডার সেতু (রাজাপুর সেতু) নির্মাণ ও ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৯৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

Please follow and like us:

Check Also

দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য খেলার পাশাপাশি দেশীয় খেলাকেও সুযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের প্রতি আহবান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।