নেপালকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

ক্রাইমবার্তা রিপোট: মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে টানা দ্বিতীয় জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ। সোমবার তারা ৩-০ গোলে হারিয়েছে নেপালকে। ১৬ আগস্ট সেমিফাইনালে বাংলাদেশ খেলবে স্বাগতিক ভুটানের বিপক্ষে।

থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধ প্রধান্য বিস্তার করে খেলে বাংলাদেশ। তবে গোল আদায় করতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ইনুজির টাইম পর্যন্ত। বারবার বাংলাদেশের আক্রমণ ব্যর্থ করে দিয়ছে নেপালে ডিফেন্ডাররা। তহুরা-মারিয়ারা বেশ কয়েকটি আক্রমণ গড়েও একটির বেশি গোল আদায় করতে পারেনি। উল্টো ৪৩ মিনিটে নেপালের একটি ফ্রি কিকের শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। অল্পের জন্য রক্ষা পায় বাংলাদেশ দল।

প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে সৌভাগ্য ধরা দেয় বাংলাদেশের হাতে। বাঁ প্রান্ত থেকে অধিনায়ক মারিয়ার কর্নারের বল দেওয়া-নেওয়া করে ঘুরে আবার আসে তারই কাছেই। ডি-বক্সের বাইরে থেকে মারিয়ার ক্রসেই পোস্টের সামনে থেকে ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুন হেডে লক্ষ্যভেদ করেন। এটি ছিল টুর্নামেন্টে তার তৃতীয় গোল।

এক গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যাওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামে আরো উজ্জীবিত হয়ে। এই অর্ধে বাংলাদেশের গোছালো আক্রমণের কাছে দাঁড়াতে পারেনি নেপাল। ৫১ মিনিটে তহুরার শট নেপালি ডিফেন্ডার প্রতিহত করলে ফিরতি বল পান মারিয়া। বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোলকিপারকে পরাস্ত করে ২-০ গোলে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন অধিনায়ক।

৬৭ মিনিটে শেষ গোলটি করেন সাজেদা খাতুন। বল নিয়ে বক্সে ঢুকে গোল রক্ষককে পরাস্ত করে বল জালে জড়িয়ে দেন। টুর্নামেন্টে সাজেদারও এটি ছিল তৃতীয় গোল।

সোমবার দিনের প্রথম ম্যাচে ‘এ’ গ্রুপে ভারত ১-০ গোলে ভুটানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়।

আরো পড়ুন :  মনিকার ভক্ত হয়ে গেছে ভুটানিরা
‘ভাই, আমাকে আপনাদের নাম্বার সেভেন জার্সিধারী ফুটবলারটির একটা অটোগ্রাফ নিয়ে দেবেন?’
শনিবার রাতে ডিনারের সময় রেস্ট্রুরেন্টে এভাবেই বাংলাদেশী মিডিয়া কর্মীদের কাছে আবদার প্রেমা ওয়াংচুক ও দর্জি গেলসেনদের। এরা
সাধারণ ভুটানি নাগরিক বা ফুটবল দর্শক নন। দু’জনই ভুটান ফুটবল লিগের খেলোয়াড়। প্রেমা ওয়াংচুকের ক্লাব ফুনসলিং এফসি, দর্জি গেলসেন খেলছেন রিজঝুং এফসিতে।

তারা এবারের সাফে বাংলাদেশ – পাকিস্তান ম্যাচ দেখেছেন। তাতেই মুগ্ধ বাংলাদেশ দলের মিডফিল্ডার মনিকা চাকমার খেলায়। তার খেলা এই ভুটানিদের দারুন পছন্দ হয়েছে। বিশেষ করে মনিকার পাসিং, ড্রিবলিং, চেজিং স্টাইল মনে ধরেছে তাদের। এই দুই ফুটবলার জানান, তাদের পক্ষে বাংলাদেশ দল যেখানে অবস্থান করছে সেই বাবেসার হোটেল আরিয়াতে যাওয়া সম্ভব নয়, বারণ আছে। তাই সংবাদ কর্মীদের দারস্থ হয়েছেন।

শুধু খাগড়াছড়ির মেয়ে মনিকা চাকমাই নন। বাংলাদেশ অধিনায়ক ময়মনসিংহের মারিয়া মান্ডা, দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার সিরাজগঞ্জের আঁখি
খাতুনের খেলাও পছন্দ তাদের। প্রেমা ওয়াংচুকের মতে, বাংলাদেশ দলের মিডফিল্ডটা চালাচ্ছেন ৭ (মনিকা) ও ৮ নং জার্সিধারী ( অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা)। তবে বেশী পছন্দ মনিকাকে। প্রেমা ও দর্জির সাথে আসা উগেন লিডুপ, ফু জং, তেরসিংরাও ভক্ত হয়ে গেছে  বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবল দলটির এই ভুটানিরাদের দলটির সবারই কমবেশি সম্পর্ক আছে ফুটবলের সাথে। প্রেমা ও গেলসেন ছাড়া বাকীদের ফুটবল পর্ব শেষ হয়েছে স্কুলেই।

এখন তারা গ্র্যাজুয়েশন করছেন। প্রেমা ভুটান অনূর্ধ্ব-১৩ জাতীয় দলের প্রতিনিধি ছিলেন। বাংলাদেশ একবার তার যাওয়া হয়েছে বাবার সাথে। বাংলাদেশ থেকে তৈরী পোশাক আমদানি করেন তার বাবা।

বাংলাদেশের ফুটবলের প্রতি তাদের ভালোবাসার শুরু গত বছর সেপ্টেম্বরে থিম্পুতে অনুষ্ঠিত পুরুষদের সাফ অনূর্ধ্ব -১৮ ফুটবল থেকে। যে আসরে বাংলাদেশ জাফর ইকবালের ম্যাজিকে রানার্সআপ হতে পেরেছিল। নেপালের কাছে ভারতের রহস্যজনক হারে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই খেলা ড্র হলেই শিরোপা হাতে উঠতো বাদশা, সুফিল, জাফরদের।

প্রেমা, গেলসেনদের দৃষ্টিতে এবারও বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল হবে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা আসরে। এই দুই দলই বেশি শক্তিশালী। এগিয়ে রেখেছেন লাল-সবুজদেরই। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে এবং সোমবার নেপালের বিপক্ষে জয়ের জন্য মারিয়া, মনিকাদের আরো ভালো খেলার পরামর্শ তাদের।

Check Also

উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তুলব: পরিদর্শন বইয়ে প্রধানমন্ত্রী

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।