মিয়ানমার জেনারেলদের বিচার দাবি, নেদারল্যান্ডস-কুয়েতের সমর্থন:সেনা কর্মকর্তাদের পরিণতি কী হবে?

ক্রাইমবার্তা র্রিপোট:জাতিসংঘে নেদারল্যান্ডস ও কুয়েতের প্রতিনিধিরা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের জেনারেলদের বিচারের আওতায় আনার দাবিকে তারা সমর্থন করেন।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী প্রতিনিধি কারেল ভ্যান অসটারোম বলেন, রাখাইনে যে নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

কারেল ব্যান অসটারোম মিয়ানমারের ঘটনাবলিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

কুয়েতের স্থায়ী প্রতিনিধি মানসুর আল ওতাবি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গণহত্যায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে কার্যক্রমকে তার দেশ সমর্থন জানায়।

সোমবার জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও গণধর্ষণ চালিয়েছে।

এ ভয়াবহ অপরাধের দায়ে দেশটির সেনাপ্রধান ও আরও পাঁচ জেনারেলকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীন বিচারের মুখোমুখি করারও সুপারিশ করা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানে গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রকাশ্য আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের এটিই প্রথম কোনো প্রতিবেদন। এতে দেশটির বিচ্ছিন্নতা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

এতে মিয়ানমারের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের তদন্তকারীরা।

প্রতিবেদনে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদের বিচার করতে একটি অস্থায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠনেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এতে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় নিজের নৈতিক কর্তৃত্ব ব্যবহারে ব্যর্থ হওয়ায় মিয়ানমারের নেত্রী শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চিকেও দায়ী করা হয়েছে।

———0—————

মিয়ানমার সেনা কর্মকর্তাদের পরিণতি কী হবে?

মিয়ানমার সেনা কর্মকর্তাদের পরিণতি কী হবে? – সংগৃহীত

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমান এবং অন্যান্য নৃ-তাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের উপর গণহত্যা চালানো, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করেছে জাতিসঙ্ঘের একটি তদন্ত প্রতিবেদন। জাতিসঙ্ঘের ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণহত্যা এবং মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে দেশটির শীর্ষ ছয়জন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার হওয়া দরকার। ঘটনার জন্য দায়ী শীর্ষ ছয় সেনা কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান মিং অং হ্লাইং।

কয়েকশ’ মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতার বিষয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করে জাতিসঙ্ঘ, যা সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জাতিসঙ্ঘের দিক থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর ভাষায় নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে- রাখাইন অঞ্চলে প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকির তুলনায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ অনেক বেশি অসম ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতা থামানোর জন্য হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হওয়ায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি’র কড়া সমালোচনাও করা হয়েছে। ঘটনা বিচারের জন্য বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর জন্য আহবান জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক প্রয়োজনে নির্বিচারে হত্যা, গণ-ধর্ষণ, শিশুদের উপর হামলা এবং পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেবার বিষয়টি কখনো সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। রাখাইন অঞ্চল ছাড়াও মিয়ানমারের কাচিন এবং শান অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্রও প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ, স্যাটেলাইট ইমেজ, ছবি এবং ভিডিও’র উপর ভিত্তি করে তৈরি করা এ প্রতিবেদনের পর কি হতে পারে? এর পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কি? এসব বিষয় নিয়ে লিখেছেন বিবিসির জনাথন হেড এবং ইমোজেন ফুকস।

এ রিপোর্ট কোনো কিছু পরিবর্তন করবে?
জনাথন হেড: জাতিসঙ্ঘের এ রিপোর্টটি সাধারণভাবে বেশ শক্ত। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের উপর যে গণহত্যা চালানো হয়েছে সেটির জোরালো প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গণহত্যার জন্য দায়ী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচার দেশটির ভেতরে করা সম্ভব নয়। সেজন্য আন্তর্জাতিকভাবে এর উদ্যোগ নিতে হবে। একথা উল্লেখ করা হয়েছে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে।

এ প্রতিবেদনের পর মিয়ানমারের জেনারেলদের বিচারের জন্য জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ আরো জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারবে।

রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়ন এবং মানবতা-বিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেসব রিপোর্ট দিয়েছে সেগুলোকে বরাবরই খারিজ করে দিয়েছে মিয়ানমার সরকার।

কিন্তু জাতিসঙ্ঘের এ তদন্ত এক বছরের বেশি সময় ধরে চালানো হয়েছে। তিনজন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ জাতিসংঘে তদন্ত প্যানেল পরিচালনা করেছেন। সেজন্য এ প্রতিবেদন জাতিসঙ্ঘের ভেতরে অনেকের সমর্থন পাবে এবং মিয়ানমারের পক্ষে সেটি খারিজ করে দেয় কঠিন হবে।

ইমোজেন ফুকস: জাতিসঙ্ঘের তদন্তকারীরা বলেছেন, মিয়ানমারের এ ঘটনা বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো উচিত। কিন্তু সেটি করতে হলে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন লাগবে।

এ ধরণের কোন উদ্যোগের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন ভিন্নমত পোষণ করবে। তারা এটি চাইবে না। ফলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো যাবে না।

তদন্তকারীরা পরামর্শ দিয়েছেন, রোয়ান্ডা এবং সাবেক ইউগোশ্লাভিয়ার যুদ্ধাপরাধের বিচার যেভাবে হয়েছে সে রকম স্বাধীন একটি অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

এ ধরণের অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মাধ্যমেই গঠন করা যেতে পারে। ফলে নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো দেবার বিষয়টি এড়ানো সম্ভব হবে।

এ ধরণের একটি ট্রাইব্যুনাল যাতে কাজ করতে পারে সেজন্য মিয়ানমারকে সহায়তা করতে হবে যাতে অভিযুক্তদের আদালতে সোপর্দ করা যায়।

সার্বিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের দ্য হেগের ট্রাইব্যুনালের কাছে হস্তান্তরের জন্য বহু বছর সময় লেগেছিল।

জাতিসঙ্ঘ কি তাদের কার্ড খেলে শেষ করেছে? এ ধরণের উদাহরণ আছে?

ইমোজেন ফুকস: গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের সেরা প্রধানসহ ছয়জন শীর্ষ জেনারেলকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে জাতিসঙ্ঘের এ প্রতিবেদন অনেক দূর এগিয়েছে। সিরিয়ার যুদ্ধ নিয়ে অনেক তদন্ত হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের অপরাধীদের দীর্ঘ তালিকাও রয়েছে। সে তালিকায় সিরিয়ার সেনাবাহিনী এবং সরকারের সিনিয়র ব্যক্তিরা রয়েছে। কিন্তু তাদের নাম কখনোই প্রকাশ্যে বলা হয়নি।

মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন, সুনির্দিষ্টভাবে ছয় জেনারেলকে অভিযুক্ত করার মাধ্যমে তারা কিছু অর্জন করতে পারবেন।

এ রিপোর্ট প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ সপ্তাহেই বৈঠক করবে এবং সে বৈঠকে তারা জাতিসংঘের তদন্তকারীদের বক্তব্য শুনবে।

ফেসবুক জানিয়েছে, তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধানসহ শীর্ষ স্থানীয় জেনারেলদের তারা ‘ঘৃণা এবং মিথ্যে তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ করেছে।

জাতিসঙ্ঘের রিপোর্টে যেসব জেনারেলদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ।

অং সান সু চি এবং অন্যদের দোষী সাব্যস্ত করা যাবে?
ইমোজেন ফুকস: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কিংবা অন্য কোন ধরণের ট্রাইব্যুনাল ছাড়া কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।জাতিসঙ্ঘের প্যানেল শুধু তদন্ত করতে পারে, বিচার করতে পারে না।

তদন্তকারীরা যে ধরণের তথ্য-প্রমাণের কথা বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে কোন না কোনভাবে একটা বিচার হবে। যদিও সে বিচার হতে অনেক বছর সময় লাগতে পারে।

জনাথন হেড: অং সান সু চি’র বিচারের সম্ভাবনা অনেক কম। জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর উপর বেসামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই।

রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণের যে পরিকল্পনা সেনাবাহিনী করেছিল সেটি বেসামরিক সরকার জানতো না বলে এ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের তদন্তকারীরা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়ন থামানোর জন্য অং সান সু চি তাঁর নৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করেননি।

তাছাড়া ঘটনা সম্পর্কে মিথ্যা বর্ণনা দেয়া এবং স্বাধীন তদন্তকারীদের ঘটনাস্থলে যেতে না দেয়া এবং সেনাবাহিনীর অন্যায়কে অস্বীকার করার মাধ্যমে অং সান সু চি’র সরকার রাখাইন অঞ্চলে অপরাধ সংগঠনে ভূমিকা রেখেছে।

যদিও এ রিপোর্টের মূল কথা হচ্ছে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিচার।

Check Also

আলিপুর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন জিয়াউল ইসলাম জিয়া

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার সদরের আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।