অনেক বাধা হুমকি পেরিয়ে আজ বিএনপির সমাবেশ সোহরাওয়ার্দীতে

ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ  প্রায় ডজন দুয়েক শর্ত সাপেক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ রোববার সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া শর্তের মধ্যেই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভাকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সমাবেশ সফল করতে বিএনপি প্রস্তুত। একইসাথে তিনি বলেছেন, স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এই সমাবেশের আয়োজন হলেও এতে বিপুল জনসমাগম হবে। রিজভী জানান,  রোববার  বেলা ১২টায় রাজধানীর  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা শুরু হবে। বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ ঢাকাবাসীকে যথাসময়ে জনসভায় যোগদানের অনুরোধ করা হলো। এদিকে গতকাল বিএনপির সিনিয়র নেতারা সমাবেশস্থল পরিদর্শন শেষে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অভিযোগ করেছেন, রাজধানীর  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা ঘিরে সহিংস ঘটনা ঘটানোর জন্যই সরকার আগাম সহিংসতার কথা বলে আসছে। গতকাল দুপুরে জনসভাস্থল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন।
গয়েশ্বর বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে গত কয়েকদিন ধরে অনেক কথা বলা হচ্ছে। তারা বলেছে, রাজপথে বিএনপিকে মোকাবিলা করবে। বিএনপি জনসভায় সহিংসতা করবে। এই সরকারের পক্ষ থেকে আগাম কথা বলা হয়েছে, এখানেই আমাদের মনে সংশয় দানা বাঁধছে।
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন রাখেন, বিএনপির জনসভায় বিএনপি কেন অস্থিরতা  তৈরি করবে? সহিংসতা করবে? আমার ধারণা, সরকার কোনো একটা ঘটনা ঘটানোর জন্য এই ধরনের আগাম কথা বলছে। বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের বক্তব্যের কারণেই আমরা আরো সতর্ক থাকব। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং কঠোর নজরদারির মাধ্যমে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে আগামীকালের (রোববার) জনসভা করব।
অতীতে বিএনপির সমাবেশের দিন সরকার সারাদেশ থেকে ঢাকামুখী গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার তাদের স্বভাবসুলভ অনেক কিছু করতে পারে। তারা গাড়ি বন্ধ করতে পারে, রিকশা বন্ধ করতে পারে,  ট্রেন বন্ধ করতে পারে আবার লঞ্চও বন্ধ করতে পারে। তারা অনেক কিছুই করতে পারে। তারা সবকিছু করবে তারপরও আমরা সেটাকে অতিক্রম করব।
গয়েশ্বর বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে দাবিগুলো আছে, একত্র করে মিটিংয়ে আমরা তা উপস্থাপন করব। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট যেমন: গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট এবং বামজোট আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। রোববার সমাবেশে আমরা সুস্পষ্টভাবে আমাদের অবস্থান তুলে ধরব। তিনি আরো বলেন, আমরা যতোই সুশৃঙ্খলভাবে সমাবেশ করি না কেন সরকার তার চিরাচরিত স্বভাব থেকে বিরত থাকবে না। কারণ, এই অনুমতি দিতেও তারা নানা টালবাহানা করেছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির সঙ্গে নির্বাচনের কোনো শর্ত নেই উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি নিঃশর্ত হতে হবে। উনি মুক্তি পাওয়ার, জামিন পাওয়ার সকল অধিকার রাখেন আইনগতভাবে। সুতরাং খালেদা জিয়ার মুক্তি তো দিতেই হবে। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন বলেই উনি জেলে। সেই গণতন্ত্র উদ্ধার কিংবা প্রতিষ্ঠা তাকে অনুপস্থিত রেখে বা জেলে রেখে সম্ভব হবে না।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার,  সেয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
এদিকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে রিজভী বলেন, সমাবেশে বিপুল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সমাগম ঘটবে। তিনি নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে সমাবেশে উপস্থিত হবার আহবান জানান। এ সময় তিনি গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবির কর্মসূচিতে কক্সবাজার, কুষ্টিয়া, লক্ষ্মীপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের লাঠিচার্জ ও গণগ্রেফতারের তথ্য তুলে ধরে তার প্রতিবাদ জানান।
রিজভীর ভাষ্যে, ঢাকা মহানগরীর বংশাল থানায় ১১টি গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এজাহার নামীয় আসামীদের মধ্যে বংশাল থানা ছাত্রদলনেতা জুয়েল শিকদার এবং বংশাল থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মাসুম আগেই মারা গেছেন।
এছাড়া শেরপুর জেলায় ৮টি, টাঙ্গাইলে ৪টি, দিনাজপুরে ৬টি, নারায়ণগঞ্জে ২টি, খুলনায় ৪টি, খুলনা মহানগরে ৩টি, শরীয়তপুরে ১টি, মাদারীপুরে ২টি, মাগুরায় ২টি, পটুয়াখালীতে ২টি, সিরাজগঞ্জে ২টি, ভোলায় ১টি, নেত্রকোনায় ২টি, কুমিল্লায় ৮টি, ময়মনসিংহে ৩টি, নরসিংদীতে ২টি, হবিগঞ্জে ২টি এবং রাজশাহী মহানগরে ৪টিসহ মোট ৫৮টি গায়েবি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহার নামীয় আসামী করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৪০ জনকে এবং অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ জনকে।
রিজভী বলেন, দলের পক্ষ থেকে পুলিশের এই ঘৃণ্য কর্মকা-ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি করছি।
ডিএমপির ২২ শর্ত: শর্ত সাপেক্ষে আজ রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। শনিবার দুপুরে (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিত অনুমতি দেয়া হয়। এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বিএনপির দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল দেখা করে। এতে নেতৃত্ব দেন দলটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। অন্যজন হলেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ। এ্যানি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রোববার জনসভার অনুমতি পেয়েছি। দুপুর ১২টায় আমাদের জনসভা শুরু হবে। আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ২২ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার লিখিত অনুমতি পেয়েছি।
ডিএমপির শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, সমাবেশে আইন-শৃঙ্খলাপরিপন্থী, রাষ্ট্র ও জননিরাপত্তা পরিপন্থী কোনো কার্যকলাপ পরিচালনা করা যাবে না, উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য এবং প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কোনো ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান ও প্রচার করা যাবে না, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে আইডি কার্ডসহ নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিয়োগ করতে হবে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জনসভাস্থলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি প্রবেশ পথে আর্চওয়ে স্থাপন করতে হবে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জনসভাস্থলে আসা প্রতিটি যানবাহন তল্লাশি করতে হবে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জনসভাস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে, অনুমোদিত স্থানের বাইরে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে না, অনুমোদিত স্থানের বাইরে সড়ক ও ফুটপাতে প্রজেকশন ব্যবহার করা যাবে না, অনুমোদিত স্থানের বাইরে সড়কে অথবা ফুটপাতে সমবেত হওয়া যাবে না, আজান, নামায এবং ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক চালু রাখা যাবে না, জনসভার মঞ্চ অন্যকানো কাজে ব্যবহার করা যাবে না, জনসভার ২ ঘণ্টা আগে মানুষ জনসভাস্থলে আসতে পারবে, বিকেল ৫টার মধ্যে জনসভা শেষ করতে হবে, মিছিলসহকারে জনসভায় আসা যাবে না, ব্যানার-ফেস্টুনের আড়ালে কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা, রড আনা যাবে না, শর্ত না মানলে তাৎক্ষণিকভাবে অনুমতি বাতিল বলে গণ্য হবে, জনস্বার্থে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই কর্তৃপক্ষ এ অনুমতি বাতিল করতে পারবে।

Check Also

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইয়াছিন আলীকে গ্রেফতার করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।