আমাকে রাতদিন আওয়ামী লীগে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে : কাদের সিদ্দিকী

ক্রাইমবার্তা রিপোট:   মুক্তিযুদ্ধের কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, ৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় প্রতিরোধ গড়েছিলাম। কিন্তু জাতীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, সেদিন যদি প্রতিবাদ করে ভুল করা হয়ে থাকে সেকথাটিও রাষ্ট্রীয়ভাবে জানাতে হবে। সেসব যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হোক। তাহলে অন্তুত বলতে পারব বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিবাদ করতে গিয়ে জেলে যেতে হয়েছে।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ৭৫-এর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মিলনমেলা উপলক্ষে গতকাল এক স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম এসব কথা বলেন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বঙ্গবীরের বড় ভাই সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী এবং ছোট ভাই বাবুল সিদ্দিকী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মহাসচিব হাবিবুর রহমান তালুকদার খোকা বীরপ্রতিক, অর্থ সম্পাদক আবদুল্লাহ বীরপ্রতিক, কাদের সিদ্দিকীর সহধর্মিণী নাসরিন কাদের সিদ্দিকী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান কায়সার চৌধুরী।

এতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম-সম্পাদক প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী ৭৫-এর প্রতিরোধ চলাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেসময়ের বঙ্গবীরের কাছে লেখা একটি চিঠি পড়ে শোনান।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ এমন হবে জানলে আমি বঙ্গবীর যুদ্ধে যেতাম না। যে লতিফ সিদ্দিকীরা আওয়ামী লীগকে জন্ম দিয়েছিলেন তাকেই দল থেকে বের করা হয়েছে। যারা তার স্যান্ডেল টেনেছেন তারা এখন মন্ত্রী হয়ে বসে আছে।

তিনি বলেন, রাতদিন আওয়ামী লীগে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে, সেখানে কি করে যাই যেখানে মতিয়া চৌধুরী, ইনু বসে আছে? যারা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ছিলেন। আমি কোন কিছু চাই না, সারা জীবন সহ্য করেছি। আর চুপ থাকব না।

৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় প্রতিবাদে প্রতিরোধকারীদের স্বীকৃতি দিতেই হবে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই। যদি না দেয়া হয় তাহলে মুখ বুজে বসে থাকব না। আমি মনে করি এই স্বীকৃতি আদায় হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। একই সঙ্গে বলতে চাই- কোন মানুষ যদি পিতৃ পরিচয় হারিয়ে ফেলে, কেউ যদি পিতৃ পরিচয় অস্বীকার করে, তাহলে তার আর কিছু থাকে না। তাকে কিন্তু সামাল দেয়া খুব কঠিন হয়ে যায়। এটা মনে রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে কাদের সিদ্দিকী জানান আজ প্রায় ১৯ বছর আমরা দু’ভাই পাশাপাশি কোন জনসভায় বসিনি। খুব সম্ভবত একটি জানাযায় আমরা একত্রিত হয়েছিলাম। তিনি আরও জানান বঙ্গবন্ধু জেল থেকে বের হলে আমরা তার সঙ্গে তখন কথা বলতে পেরেছি। আমার বাবা কথা বলতে পেরেছে। কিন্তু এই প্রথম ১৯ বছর পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য, দেখা করার জন্যে তিন তিনবার চেষ্টা করেছি। তার পিএসদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে কোন সাড়া পায়নি। তাকে না পেয়ে শেষে চিঠি দিয়েছি। যেন এই অনুষ্ঠানে সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু কোন সহযোগিতা পায়নি।

বরং আজকের এই মিলন মেলায় যেন না আসতে পারে কেউ তার জন্য রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমরা ইয়াহিয়ার জন্য রাস্তাঘাট বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু দেশের ভেতর এমন শত্রুতা আগে কখনো দেখিনি। তিনি বলেন, আজকে সরকারের জয়জয়কার। যেদিকে তাকাই সেদিকে আওয়ামী লীগ। সেদিকে শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে দাড়াবো জানি না। তিনি নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একজন একদিকে শ্রমিক নেতা অন্যদিকে সরকারের মন্ত্রী। তিনি আজকে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়েছেন।

লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি কারও পাশে দাড়াই না। ন্যায়ের পক্ষে সত্যের পক্ষে দাড়াই। এ জন্যই পত্রিকায় দেখে আমন্ত্রিত না হয়েও চলে এসেছি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব কাদের সিদ্দিকীকে স্বীকার করি না, তবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও ১৫ আগষ্ট পরবর্তী প্রতিরোধ যুদ্ধকে স্বীকার করি। তার নেতৃত্বেই সেদিন প্রতিরোধ যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলাম।

তিনি রাজনৈতিক বক্তব্য দিলে তার মর্মকথা বোঝার সামথ্য অনেকের নেই। বক্তব্য বোঝার প্রজ্ঞা এ দেশের রাজনীতিবিদদের নেই। কারও রিুদ্ধে বলি না কারও তাদের বিরুদ্ধে বলার যোগ্যতা তারা রাখে না। কারন তারা ড্রয়িং রুমের নেতা। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায় হোক। স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে ভারত থেকে আগত সূধীর চন্দ্র দাস বলেন, স্বীকৃতটুকু আমাদের প্রত্যাশা। আর কিছু চাই না। প্রতিবাদ সঠিক হয়েছিল কিনা জনগন মুল্যায়ন করবেন।

Please follow and like us:

Check Also

তালায় অগ্নিকাণ্ডে ৭টি বসতঘর পুড়ে ছাই

তালা(সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা:সাতক্ষীরার তালায় অগ্নিকাণ্ডে সাতটি বসতঘর পুড়ে গেছে। উপজেলার ধলবাড়িয়া গ্রামে সোমবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।