বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম আর নেই

তরিকুল ইসলাম তারেক, যশোর: বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)। আজ বিকেল ৫টা পাঁচ মিনিটে তিনি রাজধানীর অ্যাপোলো হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। প্রবীণ এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির এই নেতার পারিবারিক সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে কিনডীসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। কিছুদিন আগে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
তরিকুল ইসলামের লাশ নিজ জেলা যশোরে নেওয়া হবে। সেখানেই তাঁকে দাফন করা হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর জন্ম নেন তরিকুল ইসলামের। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ৪ বারের মন্ত্রী।  যশোর থেকে দৈনিক লোকসমাজ নামে একটি দৈনিক পত্রিকার প্রকাশক তিনি। তরিকুল ইসলাম দুই পুত্র সন্তানের জনক। স্ত্রী নারর্গিস ইসলাম তাঁর অন্যতম রাজনৈতিক সহযোদ্ধা।
পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় তরিকুল ইসলামের বাল্যশিক্ষা শুরু হয়। এরপর ১৯৫৩ সালে তিনি যশোর জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। একটানা আট বৎসর শিক্ষা গ্রহণের পর ১৯৬১ সালে তিনি এই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩ সালে তিনি যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে আই. এ. এবং ১৯৬৮ সালে একই কলেজ থেকে তিনি অর্থনীতিতে বি. এ. (অনার্স) ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অর্থনীতিতে এম. এ ডিগ্রী লাভ করেন।
যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের শহীদ মিনার জরাজীর্ণ হওয়ায় ১৯৬২ সালে সহপাঠীদের শহীদ মিনার তৈরি করে পাকিস্তান সামরিক সরকারের রোষানলে পড়েন, গ্রেফতারও হন।
কারাগারে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে পরিচয়। সেই সূত্রে দীক্ষা বাম রাজনীতিতে। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের জন্য রাজবন্দি হিসেবে যশোর ও রাজশাহীতে কারাভোগ করেন দীর্ঘ ৯ মাস। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় গ্রেফতার হন।
১৯৭০ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন তরিকুল। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ন্যাপ থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) হয়ে পরে বিএনপিতে যোগ দেন বরেণ্য এ রাজনীতিক।

জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ৭৬ সদস্যের প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য তরিকুল ইসলাম। সেই সঙ্গে বিএনপির যশোর জেলা আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। ১৯৮০ সালে জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ লাভ করেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছেন তিনি। চারদলীয় জোট সরকারের সময় তিনি তথ্য এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

Please follow and like us:

Check Also

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১৩

ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।