পরিস্থিতি তিন দিনের মধ্যে পাল্টে দেয়া সম্ভব- যদি সাংবাদিকরা নিজেদেরকে জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসেন বিশিষ্টজনরা

ক্রাইমবার্তা রিপোট:একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। ভোটাররা নিশ্চিন্তে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা এ নিয়ে সংশয় তৈরী হয়েছে। কেউ কেউ নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা সেই প্রশ্নও তুলেছেন। এছাড়া ভাল নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের যে ভুমিকা থাকার ছিল তা নিয়ে অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, গণমাধ্যম এক থাকলে তিনদিনের মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে পালন করতে হবে অগ্রণী ভূমিকা।

বক্তরা আরো বলেন, নির্বাচন ঘিরে তৈরি হওয়া সংকট রাজনীতিবিদদেরই সৃষ্টি। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ রাজনীতিবিদদেরই তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের জন্য এমন পরিবেশ তৈরী করতে হবে, যার ওপর মানুষ আস্থা রাখতে পারে।

শনিবার রাজধানীর ইস্কাটনের বিস মিলানয়তনে সেন্টার ফর গভার্রনেন্স স্টাডিস আয়োজিত ‘সুষ্ঠু নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন। সিজিএস-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন, আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, দৈনিক মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা-জানিপপ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, দৈনিক দিনকাল-এর সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিক, ডা. সাখাওয়াত হোসেন শায়েন্থ, ভারতীয় সাংবাদিক এবং সাউথ এশিয়ান মনিটরের নির্বাহী নির্বাহী সম্পাদক, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সালেহ আহমেদ, প্রথম আলো পত্রিকার কনসালটেন্ট আয়শা কবির, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার এবং সাবেক জজ ইকতাদের আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান, সিজিএস-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এর সম্পাদক নুরুল কবির।

সভায় প্রফেসর ড. আতাউর রহমান বলেন, চারদিকে শুধু নৌকার শোডাউন দেখা যাচ্ছে। ধানের শীষ আছে কিন্ত এগোতে পারছে না। তবে আমার ধারণা শেষ পর্যন্ত পঞ্চাশ পার্সেন্ট ভোটার ভোট কেন্দ্রে আসবে। একটা অর্থবহ ও নুন্যতম অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন হোক সেই প্রত্যাশাই করি।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, একপেশে একটি নির্বাচনী মাঠ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে। একদিকে বিরোধীদের উপস্থিতি, আরেকটি হচ্ছে ‘গায়েবী’ মামলা ইত্যাদি। পত্রিকায় দেখলাম ভয়ংকর সেপ্টেম্বর। যেখানে অনেক মামলা হয়েছে। নির্বাচনে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে একটি সীমাবদ্ধতা তৈরী হয়েছে। আর মাত্র ৮ দিন বাকি। এখনো হাল ছাড়লে হবেনা। ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা, এ বিষয়ে গণমাধ্যমের একটা বড়ধরেনর দায়িত্ব আছে। উদ্বেগ এবং আশা মাথায় নিয়ে গণমাধ্যম একটা ভুমিকা রাখবে আশা করি।
তিনি আরো বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ণ। যেনতেন নির্বাচন যেন না হয়। আইন বৈধতার নির্বাচন যেন না হয়, পরবর্তী সরকারের নৈতিক বৈধতা যদি তৈরী না হয় তাহলে কিন্ত সংকট আরো গভীর হবে। তাই নির্বাচনে কে নির্বাচিত হবে সেটা ভোটারদের উপরই আমরা ছেড়ে দেই।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ধীরে ধীরে আমরা একটি অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছি। ছাত্রজীবন থেকেই আমরা নিজেদের মতো করে অনেক চ্যালেঞ্জ করেছি, আবার সেগুলো অতিক্রমও করেছি। কিন্তু বর্তমানে এক অন্ধকার জায়গায় বাস করছি আমরা। অনেকেই বলছে ২৪ তারিখের পরে সেনাবাহিনী নামবে এই ২৪ তারিখের পরে দেশ অন্ধকার হবে নাকি আলোকিত হবে সেটির জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। কারণ পুলিশ প্রশাসন তো এক পক্ষ নিয়েফেলেছে যার যতটুকু আছে ততটুকু করছে তারা।’

তিনি বলেন, আমি যদি সেনাবাহিনীর সমর্থন করি তাহলে অনেকেই হয়তো বলবে আপনার দলের প্রধান সেনাবাহিনী ছিল। কিন্তু এটাও তো সত্য দেশে যতগুলো ভালো কাজ হয়েছে সব কাজের সঙ্গে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত ছিল। এটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন। ১/১১ এর পরে তিনি বলেছিলেন এটা আমাদের আন্দোলনের ফসল।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আর্মি সব সময় লাগে। আর্মি ছাড়া ইলেকশন হবে না। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ভাল নির্বাচন হোক। মিডিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনে কতখানি প্রভাতি করতে পারে। দেশে শত শত কাগজ বের হচ্ছে। মিডিয়ার কর্র্মীদের প্রশিক্ষণ কম। কোনো কিছুর পটভূমি বুঝতে তাদের এই প্রশিক্ষণ দরকার। বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচনে না গিয়ে অনেক সমর্থক হারিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

ভারতীয় সাংবাদিক এবং সাউথ এশিয়ান মনিটরের নির্বাহী নির্বাহী সম্পাদক চন্দন নন্দী বলেন, জেনারেল জিয়া হত্যার একজন মেজর মোজ্জাফর ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে কলকাতায় অবস্থান করছেন। এটা তিনি শুনে আসছেন। তিনি বলেন, র’ যে বাংলাদেশের নির্বাচনে সংযুক্ত এটা এখন আর সিক্রেট (গোপন) না। মিডিয়ার ভারসম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার চেয়ে দুর্বল।

মানবজমিন এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতায় যে সংকট তৈরি হয়েছে তার জন্য কাকে দায়ী করবেন। সরকারকে দায়ী করার আগে নিজেদের আত্মসমালোচনার দরকার আছে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি তিন দিনের মধ্যে পাল্টে দেয়া সম্ভব- যদি সাংবাদিকরা নিজেদেরকে জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে সাংবাদিকরা কিছু প্রাপ্তির আশায় পেশার প্রতি অবিচার করছেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এর সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, মানুষের ভোট দেয়ার পরিস্থিতি এই মুহূর্তে হুমকির মুখে। যে পরিস্থিতি আছে তা কারো জন্য মঙ্গলজনক নয়। পত্রিকার সূত্র ধরে বলেন, নির্বাচন হবে কিনা-এখন সংশয় আছে।

নিবার্চন কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সার্চ কমিটি মেন্দন্ডহীন নাগরিক তাদের মধ্যে থেকে আনুগত লোককে খুঁজে নিয়োগ দিয়েছে। বেছে বেছে অফিসারদেরকে ওএসডি করা হয় এবং অনুগতদের দায়িত্ব দেয়া হয়।

এই নির্বাচনে কোনো পেশার কত শতাংশ প্রার্থী প্রতিযোগীতা করছে তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। এতে দেখা যায় সব বেশী ব্যবসায়ীরা ৫৫ শতাংশ। ১১ শতাংশ আইনজীবী। ৭ শতাংশ কৃষি, ৬ শতাংশ বিভিন্ন পেশার, ৪ শতাংশ পলিটিশিয়ান এবং ১৭ শতাংশ নানা পেশার মানুষ রয়েছেন।

এই নির্বাচনে এখনও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি বা কোনো ব্যবস্থা নেই। আগামী দিনে সংঘর্ষ হবে না তা নিশ্চিত হতে পারিনি। ১৬ জন প্রাথী কারাগারে। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪শ’ গ্রেপ্তার হচ্ছে। বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে।

Please follow and like us:

Check Also

কলারোয়া  উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি আবুল কাশেমের ইন্তেকালঃ বঙ্গবন্ধু বিশেষ সুপারিশে  যিনি কারা মুক্ত হন

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।