এনটিআরসির নিয়োগকৃত শিক্ষকদের যোগদানে বাধার অভিযোগ

ক্রাইমর্বাতা রিপোট:  বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগে সুপারিশ প্রাপ্তরা বিপাকে পড়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর অসহযোগিতার কারণে বেশির ভাগ প্রার্থীই কাজে যোগ দিতে পারছেন না।

কোথাও প্রার্থীর কাছে অর্থ দাবির অভিযোগ উঠেছে। কোনো প্রতিষ্ঠান বলছে, সুপারিশ করা পদ বিদ্যমান নেই। আবার কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হচ্ছে, সুপারিশকৃত পদের চাহিদা দেননি তারা। এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হলেও এমপিওভুক্ত হিসেবে পদের চাহিদা দিয়েছে।

এ কারণে মনোনীত প্রার্থীরা ওইসব প্রতিষ্ঠানে যোগদানে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ নিয়ে এভাবে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। ২৪ জানুয়ারি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এ সুপারিশ তালিকা প্রকাশ করে।

সোমবার রাজধানীর এনটিআরসিএ কার্যালয়ে দেখা যায়, ভুক্তভোগী শত শত চাকরি-প্রার্থী অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। তারা সংস্থাটির অভিযোগ কেন্দ্রে লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করছেন। আবার কেউ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের কাছে সরাসরি অভিযোগ দিচ্ছেন।

তথ্য কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, দৈনিক গড়ে দুই থেকে আড়াইশ’ অভিযোগ জমা পড়ছে। এখন পর্যন্ত সহস্রাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে নানা কিসিমের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান এসএম আশফাক হুসেন  বলেন, সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের কাছ থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি। সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কোনো বাহানায় কোনো প্রতিষ্ঠানই প্রার্থীদের কাজে যোগদানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে না।

নীতিমালায় পরিষ্কারভাবে শাস্তির কথা নির্দেশিত আছে। আমরা ১ মাস অপেক্ষা করব। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রার্থীদের যোগদান করতে না দিলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোতে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ পাঠাব।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হতে ইচ্ছুকদের মধ্য থেকে ৩৯ হাজার ৩১৭টি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ জানুয়ারি এনটিআরসিএ নিয়োগ সুপারিশ তালিকা প্রকাশ করে। ১৪টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার মেধাক্রম অনুযায়ী ১৫ হাজার ১৫৭টি প্রতিষ্ঠানে প্রার্থীরা সুপারিশ পান। এর দু’দিন পর যোগদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। এর আগে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রবেশ পদে নিয়োগের জন্য অনলাইনে চাহিদা চাওয়া হয়। এরপর ৩৯ হাজার ৫৩৫টি পদের চাহিদা আসে। এর বিপরীতে ২৫ লাখ ৭৯ হাজার ১৯৬টি আবেদন পাওয়া যায়।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদনকারীদের মধ্য থেকে পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সফটওয়্যারে প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠানে ১০ জন আবেদন করলে তাদের মধ্যে শীর্ষ মেধাবী সুপারিশ প্রাপ্ত হন। ১ মাসের মধ্যে ওই প্রার্থী কাজে যোগ না দিলে দ্বিতীয় সেরা মেধাবী সুপারিশ পাবেন। ৭ মার্চের পর এ দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশের কথা আছে।

সুপারিশ প্রাপ্ত প্রার্থীরা জানান, যোগদানে বাধ্যবাধকতা থাকায় অনেকেই সুপারিশপত্র নিয়ে কাজে যোগ দিতে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন তারা। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এমপিওভুক্তির খরচসহ নানা নামে প্রার্থীদের কাছে অর্থ দাবি করা হচ্ছে।

রংপুর থেকে আসা এক প্রার্থী জানান, তার কাছে প্রতিষ্ঠান প্রধান এমপিওভুক্তির কাজের জন্য আগাম অর্থ চেয়েছেন। সেটা যোগদানের আগেই দিতে হবে। কিন্তু তার পক্ষে দাবিকৃত অর্থ দেয়া সম্ভব না হওয়ায় তিনি এনটিআরসিএতে অভিযোগ জানাতে এসেছেন।

পাবনা জেলার কদমতলা উপজেলায় সফি ফতেয়ালী ওয়াসী মহিলা মাদ্রাসায় নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হলেও যোগদান করতে গিয়ে দেখেন এ প্রতিষ্ঠানটি এখনও এমপিওভুক্ত নয়। তাই সেখানে যোগদান না করে তিনি এসেছেন অভিযোগ নিয়ে। তাদের মতো এমন শত শত ভুক্তভোগী নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন এনটিআরসিএতে।

চট্টগ্রামের গহিরা কলেজে কৃষি বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করা হলেও কলেজে এ বিষয় না থাকায় যোগদান করতে দেয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে চার প্রার্থী সুপারিশকারী প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, গহিরা কলেজে তাদের চারজনকে কৃষি বিষয়ে ‘প্রভাষক’ পদে যোগদানের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। সেখানে গেলে অধ্যক্ষ তাদের জানান, কৃষি বিষয়ে এখনও তারা অনুমোদন পাননি। এনটিআরসিএতেও তারা চাহিদা দেননি। তাই এখানে যোগদান করার কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে অবশ্য অধ্যক্ষ একটি লিখিত দিয়েছেন যা এনটিআরসিএতে জমা দিয়েছেন তারা। এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রার্থীরা নানা অভিযোগ দাখিল করছেন। এর মধ্যে প্রার্থীদের যোগদানে বাধা দেয়ার অভিযোগই বেশি বলে জানান এনটিআরসিএর তথ্য ডেস্কের এক কর্মকর্তা।

এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এসএম আশফাক হুসেন যুগান্তরকে বলেন, আদালতের নির্দেশ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমপিওভুক্তি নীতিমালায় বলা আছে, এনটিআরসিএতে শিক্ষক-কর্মচারীর চাহিদা দিলে উক্ত পদে (এনটিআরসিএর) নির্বাচিত বা মনোনীত প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে হবে।

প্যাটার্ন অতিরিক্ত চাহিদা দিলে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োগকারী ব্যক্তিকে শতভাগ বেতন-ভাতা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদান করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বেতন-ভাতা স্থগিত বা বাতিল করা হবে। পাশাপাশি পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে কমিটি ভেঙে দিতে পারবে। যথাসময়ে সুপারিশসহ আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাব।যুগান্তর

Check Also

আলিপুর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন জিয়াউল ইসলাম জিয়া

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার সদরের আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।