মিয়ানমারকে হারিয়ে চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশ

অল্প সংখ্যক দর্শকের সরব উপস্থিতিও গমগম পরিবেশের জন্ম দিচ্ছিল মেল্ডালার থিরি স্টেডিয়ামে। ঢোল আর বাঁশি বাজাচ্ছিলেন ৪ হাজার ৫১৪ জন দর্শক পুষ্ট স্বাগতিকরা। তা স্থানীয় দলকে প্রেরণা যোগানোর জন্যই। ৬৮ মিনিটে বাংলাদেশ লিড নেয়ার পরও থামেনি তাদের গলা ও হাত। তবে শুক্রবার ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ দলের বাঁধ ভাঙ্গা উল্লাসের বিপরীতে একেবারেই নিশ্চুপ মিয়ানমার। তাদেরকে ১-০ গোলে হারিয়ে যে টানা দ্বিতীয় বারের মতো এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে গোলাম রাব্বানী ছোটন বাহিনী।

আর ছিটকে পড়তে হলো টানা দুই ম্যাচ হারা মিয়ানমারকে। সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য চূড়ান্ত পর্বে কোয়ালিফাই করেছে বাংলাদেশ এবং চীন। দু’দলের পয়েন্ট সমান ৬। তবে গোল পার্থক্যে এগিয়ে চীন। তারা দুই খেলায় ১২ গোল দিলেও বাংলাদেশের গোল সংখ্যা ১১। ফলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে হলে চীনের বিপক্ষে জিততেই হবে বাংলাদেশকে।

প্রথমার্ধের মতো বিরতির পরও আক্রমনাত্মক ছিল ছোটন বাহিনী। ৬৩ মিনিটে আনু চিং ফাঁকায় বল পেলেও তার দুর্বল শট ধরতে কোনো সমস্যাই হয়নি মিয়ানমার গোলরক্ষকের। আরেকটু এগুতে পারতেন তিনি। ৬৮ মিনিটে বাংলাদেশ দলের পাওয়া চতুর্থ কর্নার থেকেই লিড। মিডফিল্ডার মনিকা চাকমার ডান দিক থেকে বাম পায়ের বাঁকানো কর্নার কিক গোলরক্ষক পিউ পিউ উইনের হাতে লেগে জালে জড়ায়। অবশ্য পরের মিনিটেই আঁখির সামান্য ভুলে গোল হজমের উপক্রম।

তার ক্লিয়ার করতে যাওয়া বল প্রতিপক্ষ এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে মিয়ানামারের কাইয়োর সামনে পড়ে। একেবারেই ফাঁকায় তিনি। সমূহ বিপদ বুঝে দ্রুত পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে বক্সের বাইরে এসে তা দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ক্লিয়ার করেন বাংলাদেশ কিপার রুপনা চাকমা। ৭৪ মিনিটে মিয়ানামরের ম্ইয়াত কিয়ানের দূরপাল্লার শট বারের উপর দিয়ে যায়। ৮৯ মিনিটে বাংলাদেশ ব্যবধান দ্বিগুন করতে পারেনি বদলী রিতুপর্ণার শট গোল রক্ষক কর্নার করায়। ৯১ মিনিটে শামসুন্নাহারের শট এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে পরাস্ত করলেও তা চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে।

ম্যাচের শুরু থেকেই মিয়ানমারকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। ২০ মিনিট পর্যন্ত খেলা হচ্ছিল প্রতি পক্ষের সীমানায়। এই সময়ে গোলের সুযোগও পায় বাংলাদেশ। ২ মিনিটে আনু চিং মগিনির হেড বাইরে যায়। পরের মিনিটে মিয়ানমার কিপারের হাত ফসকে যাওয়া বলে গোল করতে ব্যর্থ তহুরা। পজিশন ব্লক করে ফেলেছিলেন কিপার। ম্যাচের ১০ মিনিট বয়সে মনিকার ফ্রি-কিকে তহুরার হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট। প্রথমার্ধে লাল সবুজদের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি আসে ১৪ মিনিটে। ডিফেন্স থেকে আঁখি খাঁতুনের লবে আনু চিং ব্যাক হেড করেন। সে বল পেয়ে যান তহুরা। বল নিয়ে ছুটতে থাকেন মিয়ানমার সীমানায়। তার গায়ে গায়ে তখন বিপক্ষ এক ডিফেন্ডার। এরপরও বক্সে ঢুকে আগের ম্যাচে চার গোল করা এই স্ট্রাইকার যে শট নেন তা চলে যায় গোলরক্ষক সোজা।

এরপরই মাঝমাঠে দখল বাড়াতে থাকে স্বাগতিকরা। যে কারনে মারিয়ারা আর এই অর্ধের বাকী সময়ে কোনো চান্স তৈরী করতে পারেনি। মিয়ানমার কিছুটা আক্রমনে উঠার চেষ্টা করলেও তা আটকে যায় আঁখি- নাজমাদের ডিফেন্স লাইনে।
বাংলাদেশ এই ম্যাচে তাদের কোনো পরিবর্তন না আনলেও মিয়ানমার এক ফুটবলার বদল করে।

দিনের অন্য ম্যাচে ফিলিপাইনকে ৭-০ গোলে হারিয়ে ‘বি’ গ্রুপ প্রথম দল হিসেবে ‍চূড়ান্ত পর্বে খেলা নিশ্চিত করে চীন। আগের ম্যাচে মিয়ানমারকে ৫-০তে হারানো চীনারা। এই ম্যাচে ১১ জনই বদল করে বাকীদের পরীক্ষা করার জন্য। জানান, দলের ডাচ কোচ রজার রেইজনার্স। ফলে তাদের নিয়মরক্ষার ম্যাচ বাংলাদেশের বিপক্ষে। যদিও কোচ জানান শেষ ম্যাচেও আমরা জয়ের জন্য খেলবো। তা আমাদের দলের উন্নতির জন্য। প্রথম দুই ম্যাচের রেজাল্টে আমি খুশী হলেও সন্তুষ্ট নই পারফরম্যান্সে।

বাংলাদেশ দল: রুপনা, নাজমা, আঁখি, নীলা, শামসুন্নাহার, মারিয়া, আনাই, মনিকা, তহুরা (রোজিনা ৮২ মি.), ছোট শামসুন্নাহার (রিতু ৮৬ মি.), আনু চিং।

Please follow and like us:

Check Also

কলারোয়া  উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি আবুল কাশেমের ইন্তেকালঃ বঙ্গবন্ধু বিশেষ সুপারিশে  যিনি কারা মুক্ত হন

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।