প্রবাসীর স্ত্রীকে লাঠিপেটা, ভিডিও ভাইরাল

ক্রাইমবার্তা রিপোট      মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এক ওমান প্রবাসীর স্ত্রী (৩৫) তিন সন্তানের জননীকে অর্ধনগ্ন করে লাঠিপেটা ও নির্যাতনের একটি ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। কুলাউড়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে আজ দুপুরে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার বরমচাল ইউনিয়ন এলাকায় প্রবাসীর স্ত্রীকে লাঠিপেটাকারী ওই ব্যক্তি একই ইউনিয়নের উজানপাড়া গ্রামের মৃত সরল খানের পুত্র মোলায়েম খান। স্থানীয় বাসিন্দা ও থানায় দায়েরকৃত মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার ওই প্রবাসীর স্ত্রী তিন কন্যার জননী। বড় মেয়ের কিছুদিন আগে বিয়ে দিয়েছেন। বাড়িতে ওই নারী তার দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন।

মোলায়েম খান এবং ওই প্রবাসীর বাড়ি পাশাপাশি গ্রামে। গত সোমবার দুপুরে প্রবাসীর স্ত্রী স্থানীয় ফুলেরতল বাজার থেকে মোবাইল ব্যাংকিং ‘বিকাশ’ এজেন্ট থেকে নগদ টাকা উত্তোলন করে বাড়িতে আসেন। এ সময় ওই নারীর পিছু ধরে মোলায়েম খাঁ ওই প্রবাসীর  বাড়িতে যান। এ সময় প্রবাসীর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেন। এতে ব্যর্থ হলে মারধর করে ঘর থেকে বের করে আনেন। পরে ওই মহিলার দুই মেয়ের সামনে অর্ধনগ্ন করে প্রকাশ্যে বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করেন। এ সময় ওই মহিলার মেঝো ও ছোট মেয়ে মাকে রক্ষায় এগিয়ে আসলে তারাও আঘাত পায়।

পরে তাদের আর্তচিৎকারে আশপাশের মানুষ এগিয়ে আসলে মোলায়েম খান ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। মারধরকারী অভিযুক্ত মোলায়েম খান ওই  মহিলাকে নিজের বিবাহিত স্ত্রী দাবি করে স্ত্রীর আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে মারধর করেছেন বলে দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাসহ পুরো উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

নির্যাতনের শিকার ওই মহিলা মোলায়েম খান তার স্বামী নয় বরং তার শ্লীলতাহানীর চেষ্টাকারী উল্লেখ করে বলেন ‘আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি মারা গেছেন। ভাশুর (স্বামীর বড় ভাই) অন্যত্র থাকেন। আমার স্বামী ওমান প্রবাসী এবং আমার তিন মেয়ে। বড় মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। আমি আমার দুই মেয়েকে নিয়ে একা বাড়িতে থাকি।

তিনি বলেন আমার চাচা শ্বশুরের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কোর্টে মামলা রয়েছে। মোলায়েম খান আমার দূরসম্পর্কের আত্মীয়। আমি মহিলা তাই চাচা শ্বশুরের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার দায়িত্ব তাকে দিই। এজন্য মাঝে মধ্যে আমার বাড়িতে আসতেন। মামলা পরিচালনার জন্য ২০১৫ সালের ২৩শে  মার্চ একই তারিখের কয়েকটি সাদা (লেখাবিহীন) স্ট্যাম্প কাগজে স্বাক্ষর নিতে আসেন মোলায়েম। আমি জানতে চাইলে, তিনি বলেন মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজে দস্তখত দিতে হবে। আমি সরল বিশ্বাসে সেই সাদা স্ট্যাম্প কাগজে দস্তখত দিই। কিছুদিন পর মোলাইম আমার স্বামীর কাছে মোবাইলের হোয়াটস্অ্যাপে স্বামীকে তালাকের হলফনামার এবং ‘কোর্টম্যারেজের’ কাগজের ছবি পাঠান। আমার স্বামী বিদেশ থেকে ওই হলনামা কাগজের কথা আমাকে জানান। এ বিষয়টি আমি মোলামেকে জিজ্ঞেস করি।

পরে ২০১৫ সালের ২৩শে  মার্চ একই তারিখের দুটি স্ট্যাম্প কাগজে সে প্রতারণার মাধ্যমে আমার দস্তখত নিয়ে (রেজিনং ৭৫৭) কাগজে ‘তালাকনামা’ এবং (রেজিনং ৭৫৮) কাগজে ‘কোর্ট ম্যারেজ’ হলফনামা দেখিয়ে আমাকে তার স্ত্রী দাবি করে। তখন সে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে আমাকে বিভিন্ন সময় শ্লীলতাহানীর চেষ্টা, হয়রানী ও মারধরও করে।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২০শে ডিসেম্বর নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে কোর্ট ম্যারেজ এবং তালাকনামা বাতিলের জন্য এফিডেবিটের (রেজি নং-৪৮২৪) মাধ্যমে আদালতে আবেদন করি। এরপরও থেকে প্রায়ই সে আমাকে উত্যক্ত করতো।

ওই মহিলা বলেন, ঘটনার দিন সোমবার দুপুরের দিকে আমি ফুলতালা বাজারে যাই এবং সেখান থেকে বিকাশে ক্যাশ আউট করে বাড়িতে ফিরে আসি। মোলায়েম আমার পিছু নিয়ে আমার বাড়িতে আসে এবং ঘরে ঢুকে আমার গলায় শ্বাসরোধ করে রাখে। পরে আমার শাড়ি জোরপূর্বক খুলে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে এবং টেনে হিচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে এসে আমাকে কাঠের লাঠি দিয়ে ব্যাপক মারধর করতে থাকে।

তিনি বলেন, এ সময় আমার মেয়েরা এগিয়ে এলে তাদের ওপর চড়াও হয় এবং মারধর করে মোলাইম। এ সময় সে  আমার গলায় থাকা এক ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার চেইনও নিয়ে যায়। পরে আমার আত্মীয় স্বজন এসে আমাকে উদ্ধার করে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। আমার সমস্ত শরীরে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। থানায় আমি মোলাইম খানকে আসামী করে অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ বিষয়ে মোলায়েম খান বলেন আমার দুই স্ত্রী আছে এবং ওই নারীও আমার স্ত্রী। আমি তাকে কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ে করেছি। আগের স্বামীর সঙ্গে তার তালাক হয়ে গেছে। ঘটনার দিন তার বাড়িতে গেলে প্রথমে সে আমার ওপরে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে আমি আত্মরক্ষার্থে তাকে মারধর করি।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ারদৌস হাসান ওই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মহিলার ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন কোনভাবেই কাম্য নয়।  মোলায়েম খান ওই নারীকে লাঠিপেটা ও নির্যাতন করেছেন। ধর্ষণচেষ্টা ও মারধরের ঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী বাদি হয়ে মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত মোলায়েম খান কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে ওই নির্যাতনের বিষয়টি শিকার করেছে। বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য আদলতের কাছে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।