মায়ের হাসিই তো আমার ঈদের খুশি: জাতীয় নারী ফুটবলার সাতক্ষীরার মাসুরা

পিতা-মাতা ও বোনদের সাথেই ঈদ আনন্দ উপভোগ করবো। ওদের ছাড়া কী ঈদের আনন্দ হয়? তাই তো নাড়ীর টানে ফিরে আসি মাটির মমতায়। মায়ের হাসিই তো আমার ঈদের খুশি। ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসে এভাবেই বলছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবল দলের খেলোয়াড় মাসুরা পারভীন। মাসুরা পারভীন ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেছেন ২০ মে। ঈদ শেষে ৮ জুন আবার ফিরে যাবেন চিরচেনা ফুটবল জগতে। তিনি বলেন, এক সময় ফুটবল খেলার জন্য মায়ের বকুনি খেয়ে থাকতে হয়েছে, ভাত খাওয়া হয়নি। সেই মা আজ টেলিভিশনে ও খবরের কাগজে আমাকে খুঁজে বেড়ায়। আমার ছবি ও নিউজ দেখলে মায়ের বুকটা গর্বে ভরে যায়। বাবা মা ও বোনদের জন্য আমিই একমাত্র অবলম্বন হতে পেরে ভাল লাগে। আমার দিকে ওরা তাকিয়ে থাকে। ওদের ছেড়ে কী ঈদ করা যায়?
গত বছর মাসুরা পারভীনের একমাত্র গোলে নেপালকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৮ মেয়েদের সাফ গেমসের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। জাতীয় ফুটবল দলের পাশাপাশি কাবাডি জাতীয় দলেও খেলেছে নেপালের বিপক্ষে একমাত্র গোল করা মাসুরা। এ ছাড়া বাংলাদেশ গেমসে কয়েকটি খেলায় অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা আছে তার।
ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ নারী বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ‘এ’ গ্রুপে শক্তিশালী তিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়তে হবে বাংলাদেশী মেয়েদের। অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও স্বাগতিক থাইল্যান্ডের সাথে খেলতে হবে তাদের। তাতে কী? সাবিনার লাল সবুজের দল দ্বিগুন মনোবল নিয়ে মাঠে নামবে। সে অনুশীলন তারা করবেন।
শুধু ফুটবলই নয়, বিভিন্ন খেলায় মাসুরার পারদর্শিতা অবাক করে দেওয়ার মতোই। সাতক্ষীরার এই মেয়ে ফুটবলের পাশাপাশি হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাডি ও অ্যাথলেটিকসে জাতীয় প্রতিনিধিত্ব করেছে। ২০১৩ সালের বাংলাদেশ গেমসে মাসুরা উল্লেখিত প্রতিটি খেলাতেই অংশগ্রহণ করে। ২০১৫ সালের এসএ গেমসে তার সামনে একই সঙ্গে মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দল ও কাবাডি দলে খেলার সুযোগ আসে। কিন্তু মাসুরা বেছে নেয় কাবাডিকে। দেশের হয়ে রুপার পদকও জিতেছে সে।
নিজের প্রতি অগাধ আস্থা মাসুরার। ২০১৫ সালে জাতীয় ফুটবল দলে সেরা একাদশে জায়গা পাওয়া নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকার কারণেই সে কাবাডি দলকে বেছে নিয়েছিল। অনুশীলন কম হলেও তার কাবাডি দলে জায়গা পেতে অসুবিধা হয়নি। কোর্টে নেমে নিজের সেরা খেলাটাই খেলতে পেরেছিল সে।
তবে এখন ফুটবলই তাঁর ধ্যান। ফুটবলের সুবাদেই বিজেএমসিতে চাকরি হয়েছে। সেখান থেকে পাওয়া বেতনেই চলে মাসুরার সংসার। ভাই নেই, তিন বোনের মধ্যে মাসুরাই সবার বড়। বাড়িতে সংসারের সব প্রয়োজনই মেটাতে হয় তাকে।
আর আট-দশটা মেয়ের মতোই পারিবারিক শেকল ভেঙে খেলাধুলায় এসেছিলেন মাসুরা পারভীন। জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক প্রতিবেশী সাবিনা খাতুনকে দেখেই চতুর্থ শ্রেণি থেকে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখত মাসুরা। এ জন্য মায়ের কম বকুনি খেতে হয়নি তাঁকে। তবুও থামেনি সে। খেলা চালিয়েই গেছে। এখন সেই বকুনি দেওয়া মা-ই পত্রিকা, টেলিভিশনে চোখ রাখে মেয়ের খেলার খবর জানান জন্য। প্রতিবেশীরা আনন্দ উল্লাসে উপভোগ করেন এলাকার মেয়ের খেলা। নেপালের বিপক্ষে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবলের ফাইনালে গোল করার পর সবার কী যে আনন্দ। মাসুরা পারভীন বলেন, নেপালকে হারানোর পর সে যে কী আনন্দ তা বলে বোঝাতে পারবো। আনন্দ করতে যেয়ে অনেকে কেঁদে ফেলেছিলাম।
প্রায় চার বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে আগে কখনোই গোল করতে পারেনি মাসুরা। কিন্তু গোলটা তিনি এমন সময় পেয়েছিলেন যখন একটা গোলের অপেক্ষায় ছিল গোটা বাংলাদেশ। মনিকা চাকমার ফ্রি কিক থেকে হেডে সেই গোলটি করে মাসুরা। গোলটি নিয়েও লাজুক হাসি দিয়ে বলেন, ‘কীভাবে যে মাথায় বল লাগালাম, আমি নিজেও জানি না।’

Check Also

আলিপুর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন জিয়াউল ইসলাম জিয়া

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার সদরের আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।