এ যেন আরেক আয়লান

ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট:   সিরিয়ার শিশু আয়লান কুর্দির মৃত্যু সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তুরস্কের বোরদুম শহরে ভেসে ওঠা তার মৃতদেহের ছবি কাঁদিয়েছিল বিশ্ব বিবেককে। আবারো দেশ বদলানোর চক্করে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া আরেক  আয়লান কুর্দিকে দেখলো বিশ্ব।
স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে সুন্দর জীবনের আশায় ঘর ছেড়েছিলেন অস্কার আলবার্তো মার্টিনেজ রামিরেজ। এল সালভাদর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেয়ায় তার সফর সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী তানিয়া ভ্যানেসা ও কন্যা ভ্যালেরিয়া। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে পৌঁছাতেও পেরেছিলেন। কিন্তু মার্কিন কর্তৃপক্ষ তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। তাই বাধ্য হয়েই মেক্সিকো থেকে রিও গ্রান্দে নদী পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন আলবার্তো মার্টিনেজ।

কিন্তু তার সে স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি।

সোমবার রিও গ্রান্দে নদীর পাড় থেকে উদ্ধার করা হয় আলবার্তো মার্টিনেজ ও ভ্যালেরিয়ার মৃতদেহ। মৃত্যুর পূর্বে বাবার নিথর দেহ জড়িয়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করেছিল ভ্যালেরিয়া। তার মাথা বাবার টি-শার্টের মধ্যে গোঁজা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজের মেয়েকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন মার্টিনেজ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তাদের এই মৃতদেহের ছবি তুলেছেন সাংবাদিক জুলিয়া লি ডাক। মেক্সিকোর সংবাদপত্র লা জরনাডাতে মঙ্গলবার ছাপানো হয় এই ছবি। এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। আয়লান কুর্দির মরদেহের ছবির মতো ভ্যালেরিয়ার মরদেহটিও নাড়া দিয়েছে বিশ্ববাসীর হৃদয়কে।

জানা যায়, ঘটনার দিন রিও গ্রান্দে নদী পার হওয়ার সময় ঘটে মর্মান্তিক এই ঘটনা। প্রথমে মেয়ে ভ্যালেরিয়াকে নদী পাড় করে মার্টিনেজ ফিরে যান তার স্ত্রীকে নিয়ে আসতে। এমন সময় মেয়ে বাবার কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নদীতে নেমে গেলে তাকে বাঁচাতে আবারো সাঁতরে আসেন মার্টিনেজ। কিন্তু তীব্র স্রোতে ভেসে যায় দুজনই।

প্রথম থেকেই শরণার্থীবিরোধী মনোভাবের জন্য পরিচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামপ। শরণার্থী আগমন থামাতে তিনি উঠে পড়ে লেগেছেন মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করতে। মেক্সিকোর ওপর করেছেন অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ। তারপরও একটু উন্নত জীবনের আশায় সবকিছু মায়া ত্যাগ করে মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমাতে চায় মানুষ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তাদের নিষ্ঠুর আচরণে মৃত্যুর মুখে পড়ছে ভ্যালেরিয়ার মতো নিষপাপ শিশুরা। আয়লান কুর্দি কিংবা ভ্যালেরিয়ারা মধ্যপ্রাচ্য বা লাতিন আমেরিকার রাজনীতি বোঝে না। কিন্তু এই রাজনীতির সব থেকে বড় বলি হচ্ছে তারা।

Please follow and like us:

Check Also

পৃথিবীর যেসব দেশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিরও উপরে

জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ভয়াবহতার সাক্ষী হতে যাচ্ছে সারাবিশ্ব। প্রতিদিনই একটু একটু করে বৈরি হচ্ছে আবহাওয়া, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।