রিফাত হত্যা: পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন ‘০০৭’ গ্রুপের সদস্য সাগর

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ       বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মিশন পরিচালনা করেছে ‘০০৭’ নামের একটি গ্রুপ। আর এ গ্রুপটির নামকরণ করা হয়েছিল জেমস বন্ড সিরিজের ০০৭ নামের সঙ্গে মিল রেখে। বন্ড গ্রুপের প্রধান হলো নয়ন বন্ড। আর তার সহযোগী রিফাত ফরাজী সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে গ্রুপটি পরিচালনা করতো। ফেসবুকভিত্তিক এই ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ থেকেই রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেয়া হয়। এই গ্রুপের এক সদস্য পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন। তার নাম সাগর।

বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যার পরিকল্পনাকারী ‘০০৭’ গ্রুপের সদস্য মো. সাগর নামে একজন চাকরি পেতে যাচ্ছেন পুলিশের কনস্টেবল পদে।
ইতিমধ্যে তিনি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আজ রোববার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে বরগুনা পুলিশ লাইনে।

হত্যার পরিকল্পনা করা ফেসবুকভিত্তিক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের নাম ‘০০৭’। ইতিমধ্যেই এ গ্রুপে রিফাত হত্যার পরিকল্পনার কথোপকথনের বেশ কয়েকটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ব্যাপারে দৈনিক মানবজমিনের প্রথম পাতায় ‘০০৭’ গ্রুপের ভয়ঙ্কর অপারেশন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

সাগরের পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার রোল নম্বর ১০৮। পিরোজপুর সদরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী শাহনেয়াজ, ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালমোহন সার্কেল) মো. রাসেলুর রহমান এবং বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন স্বাক্ষরিত বরগুনায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নামের মেধা তালিকায় ৪০ নম্বর পেয়ে ১৮ তম স্থান অধিকার করেছেন সাগর।

রিফাত হত্যার পরিকল্পনা করা ফেসবুকভিত্তিক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ ‘০০৭’ এ যুক্ত থাকার কথা মানবজমিনের কাছে স্বীকার করেছেন মো. সাগর। তবে রিফাতের ওপর হামলার সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে জানান। সাগর বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল লতিফ মাস্টারের ছেলে। বর্তমানে তারা বরগুনা পৌরসভার পশ্চিম আমতলা পাড় সড়কের বাসিন্দা।

‘০০৭’ এর কথোপকথনের ভাইরাল ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, রিফাত শরীফ হত্যাকা-ের দিন বুধবার সকাল ৮টা ৬ মিনিটে রিফাত হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী গ্রুপে লেখেন, ‘০০৭ এর সবাইরে কলেজে দেখতে চাই।’ এর উত্তরে মোহাম্মাদ নামে একজন লেখেন, ‘কয়টায়।’ নয়ন ফরাজির লেখা ‘০০৭ এর সবাইরে কলেজে দেখতে চাই’ এর উত্তরে বরগুনায় পুলিশের কনেস্টবল পদে চাকরি পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ মো. সাগর সম্মতিজ্ঞাপনসূচক এবং বিজয়ের প্রতীক ভি (া) সিম্বল দিয়ে উত্তর দেন। এরপর মোহাম্মদ আবার রিফাত ফরাজীকে মেনশন করে লেখেন ‘কয়টায় ভাই।’ এরপর রিফাত ফরাজী উত্তর দেন ‘৯টার দিকে।’

এ বিষয়ে মো. সাগর জানান, আমি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। আমি বরগুনা এসেছি ২২ তারিখ পুলিশে চাকরি পেতে বাছাই পর্বে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য। রিফাত শরীফের ওপর হামলার আগের দিন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় আবদুল্লাহ নামে একজন মারা যাওয়ার প্রতিবাদে আমরা সবাই মানববন্ধন করেছিলাম। এরপর রিফাত শরীফের ওপর হামলার দিন সকালে আমি ঘুম থেকে জেগে দেখি ওই ম্যাসেজটি। আমি বুঝিনি যে, ৯টায় কলেজে থাকতে হবে। আমি ভেবেছি ওই মানববন্ধনেরই কিছু। পরে আমি একটি লাইক দিছি। এরপর আমি বের হয়ে গেছি। পরে আর কি হয়েছে তা আমি দেখিনি। পরে আমি রেজাল্ট আনতে গেছি।

সাগর আরও বলেন, রিফাত শরীফের ওপর হামলার সময় আমি কলেজে ছিলাম না। ওই সময় আমি আমার ভাইভা পরীক্ষার রেজাল্ট আনতে গিয়েছিলাম। পরে আমি সাড়ে ১১টা নাগাদ সেখান থেকে আসি।

নয়ন এবং রিফাত ফরাজীর সঙ্গে পরিচয় সম্পর্কে সাগর বলেন, দুই বছর আগে আমি বরগুনা এসেছি। এর মধ্যে আমি দুই মাস বরগুনা থেকেছি এবং বাকি সময় ঢাকায় থেকেছি। একদিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার তানভীর আমাকে ডেকে নিয়ে বলে ‘আপনার বাসা কই?।’ তখন আমি বলি, আমি এখানে নতুন। তখন সে রিফাত ফরাজীর কথা উল্লেখ করে বলে ‘এলাকায় নতুন আসছেন। এই ভাইরে চিন্না রাখেন। ভাইয়ের কথা মতো চলতে হবে এলাকায় থাকতে হলে।’

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। যদি এ ঘটনা সত্য হয়, তাহলে বরগুনা জেলা পুুলিশ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

Check Also

শ্যামনগরের উপকূলে  প্রতিবন্ধীদের মাঝে  ফুড প্যাক বিতরণ

গাজী বায়েজিদ হোসেন:পদ্মপুকুর ইউনিয়ন প্রতিনিধ। শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ও গাবুরা এবং কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী উপকূলীয় এলাকায়  …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।