গ্যাসের দাম চুলায় বাড়লো ১৭৫ টাকা

ক্রাইমর্বাতা রিপোট:     গণশুনানিতে ব্যাপক আপত্তি ছিল গ্যাসের দাম না বাড়াতে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের  ব্যাপক আপত্তি থাকা সত্ত্বে ভোক্তাপর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম পুনঃনির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। যা আজ ১লা জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে। ভোক্তাপর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার বর্তমান ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ভারিত গড় ৭ দশমিক ৩৮ থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৮০ টাকা/ঘনমিটার নির্ধারণ করেছে কমিশন। দাম বাড়িয়ে গৃহস্থালির ক্ষেত্রে মিটারভিত্তিক গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ১২ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আগে ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৯ টাকা ১০ পয়সা।

এক চুলায় প্রতিমাসে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২৫ টাকা (আগে ছিল ৭৫০ টাকা ) এবং দুই চুলায় ৯৭৫ টাকা (আগে ছিল ৮০০টাকা)। গতকাল বিকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম এসব তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি জানান, কমিশনের এ আদেশ ১লা জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

মনোয়ার ইসলাম আরও জানান, সিএনজির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ টাকা। যা আগে ছিল ৩৮ টাকা। হোটেল ও রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে ২৩ টাকা। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতেও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। যার ফলে শিল্পোৎপাদনে খরচ বাড়বে। আর  ব্যবসায়ীরাও তা তুলবেন দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে। সর্বশেষ বাড়তি টাকা খসবে ভোক্তাদের পকেট থেকেই। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ টাকা ৪৫ পয়সা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা, সার উৎপাদনে ৪ টাকা ৪৫ পয়সা, শিল্পে ১০ টাকা ৭০ পয়সা এবং চা-বাগানে ১০ টাকা ৭০ পয়সা।

এর মধ্যে শুধু ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। এর আগের দাম প্রতি ঘনমিটার ১৭ টাকাই রাখা হয়েছে। কমিশন আরও জানায়, বিদ্যমান ন্যূনতম চার্জ প্রত্যাহার করা হয়েছে। গৃহস্থালি ছাড়া অন্য গ্রাহক শ্রেণীর ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার মাসিক অনুমোদিত লোডের বিপরীতে দশমিক ১০ টাকা হারে ডিমান্ড চার্জ আরোপ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় প্রতি ঘনমিটার সিএনজির মূল্যহারের মধ্যে ফিড গ্যাসের মূল্যহার ৩৫ টাকা এবং অপারেটর মার্জিন ৮টাকা অনুর্ভুক্ত রয়েছে।

নতুন মূল্য পুনঃনির্ধারণের আগে বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাসের মুল্য বৃদ্ধির আবেদনের প্রেক্ষিতে বিইআরসি গণশুনানি করে চলতি বছরের ১১ থেকে ১৪ই মার্চ। গ্যাসের উৎপাদন, এলএনজি (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানি, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয় এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে কমিশন। গ্যাসের ছয়টি বিতরণ, একটি সঞ্চালন এবং পেট্রোবাংলাসহ অন্য তিনটি উৎপাদনকারি কোম্পানির প্রস্তাবের উপরও শুনানি করে কমিশন। গত ফেব্রুয়ারিতে বিইআরসিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম গড়ে ১০২ শতাংশ বৃদ্ধির  প্রস্তাব করা হয়।

বাসাবাড়িতে এক চুলার বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৪০ টাকা করার আবেদন করা হয়। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ, সিএনজি, সার, ক্যাপটিভ পাওয়ার, শিল্প-বাণিজ্যসহ সব খাতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এ নিয়ে গত মার্চে গণশুনানির আয়োজন করা হয়। বিইআরসি আইন অনুসারে শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনকে সিদ্ধান্ত জানাতে হয়। জুনে সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। আর তাই জুলাই থেকেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় বিইআরসি।

এর আগে গত বছরের জুনেও গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে গণশুনানি হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন সামনে থাকায় তখন দাম বাড়ানোয় সরকারের সাড়া মেলেনি। তাই গত ১৬ই অক্টোবর সরকারকে তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার সুপারিশ করে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিইআরসি। কমিশন তাদের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গ্যাসের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয় এবং এবং দেশের আত্ম- সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় ভোক্তা পর্যায়ে গ্রাহক শ্রেণীভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ করে। সূত্র জানায়, গ্যাসের নতুন মূল্য বৃদ্ধির ফলে বছরে ৪ হাজার কোটি টাকার উপরে রাজস্ব আসবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। সে বছরের মার্চ ও জুলাই থেকে দুই ধাপে তা কার্যকর হয়।

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।