ধর্ষণের পর সাত বছরের সায়মাকে হত্যা

ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট : সাত বছরের শিশু সায়মা। পুরো নাম সামিয়া আফরিন সায়মা। বিকালে মাকে বলে বের হয়েছিল খেলতে। এ যাওয়াই তার শেষ যাওয়া। ফিরল লাশ হয়ে। ছোট্ট শিশুটিকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ওয়ারি সিলভারডেল স্কুলের নার্সারিতে পড়তো। তার বাবা আব্দুস সালাম নবাবপুরে ব্যবসা করেন।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ১৩৯/বনগ্রাম রোডের বাসায় থাকতো সায়মা। চার ভাইবোনের মধ্যে সে সবার ছোট। মায়ের দু হাতের বাহু ছিল তার গভীর ঘুমের আশ্রয়। সায়মা বালিশে ঘুমাতে পারতো না। মায়ের বাহুতেই মাথা রাখতো। আদরের মেয়েটির এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েছে পরিবারটি।

সায়মার বাবা বলেন, ভবনের ছয় তলায় আমরা ভাড়া থাকি। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে সায়মা তার মাকে বলে, মা আমি খেলতে যাচ্ছি। ও সাধারণত আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে এবং ৮ তলার একটি ফ্ল্যাটে খেলতে যায়। এসময় তার মা বলেন, তোমার পড়া আছে এই সময় তুমি বাইরে যেতে পারবে না। তখন সায়মা জানায়, সে ১০ মিনিট ঘুরে এসে সকল পড়া রেডি করে দেবে। এ কথা বলে পাশের ফ্ল্যাটের সায়মার সমান দুটি ছেলেকে নিয়ে ৮ তলায় একটি ছোট শিশুর সঙ্গে খেলতে যায়। শিশুটি অসুস্থ হওয়াতে তার মা জানান, সায়মা তুমি এখন চলে যাও। অন্য সময় এসে খেলা করো। এসময় পাশের ফ্ল্যাটের ছেলে দুটো ৮ তলার বাসায় বসে টেলিভিশন দেখছিল। সায়মা একা বেরিয়ে আসে। এরপর আর বাসায় ফিরে আসেনি। মাগরিবের নামাজের সময় সায়মা নিখোঁজ হয়। ‘মাগরিবের আজানের সময় আমি নামাজ পড়তে মসজিদে যাই। মসজিদ থেকে ফেরার সময় সাড়ে ৭টায় নাশতা কিনে বাসায় আসি। দেখি সায়মা নেই। আমি, আমার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সায়মাকে খুঁজতে শুরু করি। সবগুলো ফ্ল্যাটের সবস্থানে খোঁজাখুঁজি শেষেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ৯ তলায় যাই। সেখানে দুটি ফ্ল্যাট আছে। একটি ফ্ল্যাট খোলা দেখে ভেতরে ঢুকে প্রথমেই আমার মেয়ের জুতা দুটি দেখতে পাই। এরপর মোবাইল ফোনের লাইট জ্বালিয়ে দেখি কিচেনের বেসিনের নিচে মেয়েকে ফেলে রাখা হয়েছে। পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীকে ফোন দিলে তিনি পুলিশে খবর দেয়।

এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে ওয়ারি থানায় মামলা করেছেন সায়মার বাবা। পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে। দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়। বাকীরা পুলিশ হেফাজতে আছে। আটককৃতদের মধ্যে ভবনের নির্মাণ শ্রমিক, একজন কেয়ারটেকার, নিরাপত্তাকর্মী, ফ্ল্যাট ডেভলপারের তত্ত্বাবধায়কের ছেলে রয়েছে।

পুলিশের ওয়ারি জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সামসুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, রাত পৌনে আটটার দিকে ওয়ারির বনগ্রাম মসজিদ এলাকার নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আমরা কয়েকজনকে আটক করেছি। ঘটনার তদন্ত এখনো চলছে।

সায়মার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে তার শরীরে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ধর্ষণের পর তাকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।

Please follow and like us:

Check Also

আবুল কাশেম কোন প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি,তাই জনগণ তাকে বার বার নির্বাচিত করতেন: সাতক্ষীরায় মিয়া গোলাম পরওয়ার

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।