পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি ছাত্রলীগের ৩৪ নেতা, আন্দোলনে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

ক্রাইমর্বাতা রিপোট: ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং ডাকসুর নেতা নির্বাচিত হওয়ায় বিক্ষোভ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘পরীক্ষা ছাড়া ডাকসু নেতা আমাদের নেতা নয়’, ‘ডাকসু খায়া দিছে’, ‘ডাকসুর জালিয়াত, ঢাবি ছাড় ঢাবি ছাড়’, ‘এক দুই তিন চার, দালাল ভিসি গদি ছাড়’, ‘যে ডাকসু অছাত্রদের, সেই ডাকুস চাই না’ ইত্যাদি।

মানববন্ধন তিনটি দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এগুলো হলো- যারা অবৈধভাবে ভর্তি হয়েছেন তাদের ছাত্রত্ব ও ডাকসুর পদ বাতিল করে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে খালি পদগুলোতে দ্রুত উপনির্বাচন দেওয়া। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড.মো. আখতারুজ্জামানের পদত্যাগ করা।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন চিরকুটের মাধ্যমে ছাত্রলীগের ৩৪ জন নেতাকে যে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ বিরোধী কাজ ও নৈতিকতার স্খলন। তাই তাদের উচিত দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা। এছাড়া ডাকসুর পদগুলো থেকে ছাত্রলীগের আটজন নেতাকে বহিষ্কার করে তাদের শূন্য পদগুলোতে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে।’

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, এ বছর ১১মার্চ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম এ নির্বাচন একটি প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু নানা বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও আমরা ডাকসুর উপর আস্থা রেখেছিলাম। কিন্তু আজ ছয় মাস পরে আমরা যখন দেখি ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীরা তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ। শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্খার একটিও অংশও তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এর কারণ আজ আমাদের মধ্যে স্পষ্ট। তারা কাজ করবে কিভাবে তারা শিক্ষার্থীর অধিকার নিয়ে ডাকসুতে আসেনি।

রোববার একটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের আট নেতার ছাত্রত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। তারা সবাই ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ায় নির্বাচনের কয়েকদিন আগে তারা ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের একটি সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হন।

ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল ওই কোর্সে ভর্তি হওয়া গেলেও তাদের কেউই তাতে অংশ নেননি। দীর্ঘ ২৮ বছর পর গত ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোসণার পর ছাত্রলীগের ৩৪ জন বর্তমান ও সাবেক নেতা ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে ভর্তি হন।

তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য পদে মোট আটজন নির্বাচনে অংশ নেন, বিজয়ী হন সাতজন। হল সংসদের ভিপি পদে অংশ নেন দুজন। এরমধ্যে একজন নির্বাচিত হন এবং অন্যজন পরাজিত হন। অপরজন, ছিলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য।

সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রামের নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথমে ভর্তির বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে হবে। বিজ্ঞাপন অনুযায়ী নির্ধারিত আবেদনপত্রের মাধ্যমে ভর্তির জন্য আবেদন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে আবেদন করা যাবে।

আবেদনকারীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এসব পরীক্ষার ফল, আগের একাডেমিক ফলাফল ও কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে সমন্বিত ফলাফল তৈরি করা হবে। ডাকসু নির্বাচনের আগে  এই প্রোগ্রামের সর্বশেষ ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে। ৩০ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয় জানুয়ারিতে। আর এই ৩৪ শিক্ষার্থী ভর্তি হন ১১ ফেব্রয়ারি ডাকসুর তফসিল ঘোষণার পর।

Please follow and like us:

Check Also

বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ৮ জলদস্যু গ্রেফতার

বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ অপহরণে যুক্ত ৮ জলদস্যুকে আটক করেছে সোমালিয়ার পুলিশ। রোববার জাহাজটিকে মুক্তি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।