সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশন শুরু কার্যতালিকায় নেই কাশ্মীর, রোহিঙ্গা ইস্যু

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ বিশ্বশান্তি, উন্নয়ন ও বিশ্ব নিরাপত্তার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল জাতিসংঘ। গত ১৭ই সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার শুরু হয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশ। ঐদিন অধিবেশনের সভাপতি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বগ্রহণ করেন জাতিসংঘে নাইজেরিয়ার সদ্যসাবেক রাষ্ট্রদূত তিজানী মোহাম্মদ-বান্দে। গত জুন মাসে সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের সভাপতি হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন। এর আগে বিগত ১৬ই সেপ্টেম্বর বিদায়ী সভাপতি (৭৩তম অধিবেশন) মারিয়া ফার্নান্দা ইস্পিনোজা (ইকুয়েডরের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী)-এর নিকট থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন মোহাম্মদ বান্দে। এবারের সাধারণ অধিবেশনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘গ্যালভানাইজিং মাল্টিলেটারাল এফোর্টস ফর পোভার্টি ইরাডিকেশন, কোয়ালিটি এডুকেশন, ক্লাইমেট এন্ড ইনক্লোশন।’ আগামী ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত চলবে এই ৭৪তম অধিবেশন। এ সময়ের মধ্যে সাধারণ পরিষদের বিবেচনার জন্য টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে ২৬টি আইটেম, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে ৩৭টি আইটেম, মানবাধিকার উন্নয়ন বিষয়ে ৫টি, ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক আইনের উন্নয়নে ১৬টি এবং নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে ১৭টি আইটেমসহ আরো বিভিন্ন বিষয়ের সর্বমোট ১৭৪টি সুনির্দিষ্ট আইটেম এজেন্ডাভুক্ত করেছে জাতিসংঘের জেনারেল কমিটি। কিন্তু, বর্তমান দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি ভয়াবহ হুমকি সৃষ্টিকারী রোহিঙ্গা ও কাশ্মীরের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটিও এবারের সাধারণ অধিবেশনের কার্যতালিকায় (এজেন্ডা) নেই; যা দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় দেড় বিলিয়ন মানুষ এবং তাদের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য মোটেই সুখবর নয়। উল্লেখ্য, কাশ্মীর ইস্যুর ভয়াবহতা নিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইতিমধ্যেই বলেছেন, ‘গতানুগতিক যুদ্ধে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান পারবে না- তাই কাশ্মীর ইস্যুতে দুটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে তা পারমাণবিক যুদ্ধে গড়াতে পারে।’ কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে জাতিসংঘে ইমরান খান কাশ্মীরে ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আগুনঝরা বক্তব্য দেবেন বলে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল জাতিসংঘে ভারতের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবর উদ্দীন ‘এ ধরনের বক্তৃতা ইতিহাসের মূলপৃষ্ঠায় স্থান পায় না-সব সময় পাদটিকা হয়েই থাকে’- বলে মন্তব্য করেছেন। তবে, আশার কথা গতকাল পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এক লিখিত অনুরোধের জবাবে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইডলাইনে ভারত ও পাকিস্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সম্মত হয়েছে- আর এ সিদ্ধান্তকে ‘টেরিফিক’ বলে স্বাগত জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ইতিমধ্যেই অতিথি দেশটির অভ্যন্তরীণ আর্থসামাজিক সংকটে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চীনা উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ায় দৃশ্যমান অচলাবস্থা থেকে উদ্ভূত নিরাপত্তা সংকট শুধু বাংলাদেশ নয়- এ অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তাকেই সংকটে ফেলবে বলে সতর্ক করছেন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাদের কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশই রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ঠিকানা হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছেন। ফলে, মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের রোমান্টিক প্রচেষ্টার পরে দিল্লি-বেইজিং বৃত্তে অবাস্তব ঘুরপাক শেষে বাংলাদেশ আবারো রোহিঙ্গা ইস্যুটি বহুপাক্ষিক কূটনীতির মাধ্যমে সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সাহায্য চায়। কিন্তু, বহুপাক্ষিক কূটনীতির কেন্দ্রস্থল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের কার্যতালিকায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত করতে না পারায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করা বাংলাদেশের পক্ষে কতটা সম্ভব তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, গত এক বছরে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ২০১৮ সালে জাতিসংঘে প্রস্তাবিত ৫ দফা দাবির একটিও আদায় করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতেই চলতি সপ্তাহের শুরুতে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন নিউ ইয়র্কের বাংলা মিডিয়াকে জানিয়েছে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ জাতিসংঘে এ বছর আবার নতুন প্রস্তাব তুলবে। কিন্তু, রোহিঙ্গা ইস্যুটি জাতিসংঘের কার্যতালিকায় না ওঠা পর্যন্ত নতুন নতুন প্রস্তাব এবং ঘন ঘন প্রস্তাবের পরিবর্তন কতটা কার্যকর হবে- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এদিকে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুটি জাতিসংঘের এবারের অধিবেশনের কার্যতালিকায় তোলার চেষ্টা করা হয়েছে- এমন তথ্যও পাওয়া যায়নি। সাধারণ অধিবেশনের এজেন্ডা নির্ধারণের দায়িত্বে নিয়োজিত ‘জেনারেল কমিটি’ বিগত ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনের চূড়ান্ত এজেন্ডা প্রকাশ করেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কমিটির নিকট বিবেচনার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবসমূহের যে তালিকা প্রকাশ করেছে ‘জেনারেল কমিটি’- সে তালিকায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুটি এজেন্ডাভুক্ত করার কোনো লিখিত প্রস্তাব নেই। তবে জাতিসংঘ সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ওআইসি-কন্টাক্ট গ্রুপ আগামী ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে জাতিসংঘের মূল অধিবেশনের সাইড ইভেন্ট হিসেবে কাশ্মীর ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মন্ত্রী পর্যায়ের রুদ্ধদ্বার বৈঠক ডেকেছে; যেখানে বাংলাদেশও অংশ নেবে।
উল্লেখ্য, আগামী ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে শুরু হবে জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনের হাইলেভেল জেনারেল ডিবেট বা উঁচু পর্যায়ের সাধারণ বক্তৃতা; যা চলবে ২৮শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জেনারেল ডিবেটের শেষদিন (নিউ ইয়র্ক স্থানীয় সময় শনিবার) সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ প্রদান করবেন।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।