ভারতের কানপুরে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২০

ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক :ভারতের উত্তরাঞ্চলে একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এতে নিহতের সংখ্যা ১২০ দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে আরো কমপক্ষে দুই শ’ জন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ ও প্রশাসন আশঙ্কা করছে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

রাত ৩টা ১৫ মিনিটে কানপুর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে কানপুরের পুখরাইয়ার কাছে পটনা-ইন্দোর এক্সপ্রেসের ১৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেনটি ইন্দোর থেকে পটনা যাওয়ার পথে মালাসার ও পুখরাইয়া স্টেশনের মাঝে লাইনচ্যুত হয়।

উত্তর প্রদেশের এডিজি দলজিৎ সিং চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘দুর্ঘটনাস্থল থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অনেক যাত্রীই গুরুতর আহত। মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

দুর্ঘটনার সময় ট্রেনের বেশির ভাগ যাত্রী ঘুমাচ্ছিল। উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনী ও চিকিৎসকদের মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছে। এখনো ট্রেনের মধ্যে আটকে রয়েছেন বহু যাত্রী। তাদের বের করে আনার চেষ্টা চলছে। বেশ কয়েকটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছেন ভারতের রেল মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও।

উত্তরাঞ্চলীয় রেলওয়ের মুখপাত্র বিজয় কুমার জানান, দুর্ঘটনায় ট্রেনের এস-টু বগিটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বগিতেই হতাহত বেশি হয়েছে। দুর্ঘটনায় ট্রেনটির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চারটি বগিও লাইনচ্যুত হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্মকর্তারা উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা দলজিৎ সিং চৌধুরী জানান, গ্যাস কাটারসহ ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে ট্রেনের ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আহতদের দ্রুত কাছের হাসপাতালগুলোতে নিয়ে যাওয়ার জন্য সড়কে গ্রিন করিডোর গড়ে তোলা হয়েছে। চালু করা হয়েছে জরুরি হেল্পলাইন নম্বর। এ রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোকে বিকল্প পথে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভারতের রেলওয়ের মুখপাত্র অনিল সাক্সেনা বলেন, ‘দুর্ঘটনাস্থলে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদল কাজ করছে। কানপুর জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে তারা সব সময় যোগাযোগ রাখছেন।’

এ দিকে ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর সাথে কথা বলেছেন। নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। দুর্ঘটনাস্থলে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাহিনী পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের দুই লাখ ও গুরুতর আহতদের ৫০ হাজার রুপি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

আর রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু এক টুইটে বলেছেন, এ দুর্ঘটনার জন্য যারাই দায়ী হোক না কেন, তাদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে শিগগিরই একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। নিহতদের পরিবার ও গুরুতর আহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকার।

এ দিকে ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেছেন। কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা রাজীব শুক্লা বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার বুলেট ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করছে। কিন্তু স্বাভাবিক গতিতে চলা ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না।’

কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ওই ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। তৃণমূল নেতা ও সাবেক রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী বলেছেন, ‘রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ই বেলাইন হয়ে পড়েছে। রেলমন্ত্রী বড় বড় দাবি করে থাকেন কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। এখানে সাধারণ যাত্রীরা নিরাপদ নয়।’

কানপুর ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন, যে স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন কয়েক শ’ ট্রেন যাতায়াত করে। দুর্ঘটনার কারণে ওই পথের ট্রেনগুলোকে অন্যপথে যেতে বলেছে রেল কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, ভারতের রেলওয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম নেটওয়ার্ক। সোয়া শ’ কোটি মানুষের দেশ ভারতে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষ ট্রেন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। কিন্তু যন্ত্রপাতি পুরনো হওয়ায় প্রায়ই সেখানে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে। গত বছর মার্চ মাসে উত্তর প্রদেশে আরেকটি ট্রেন দুর্ঘটনায় ৩৯ জন নিহত ও দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিলেন। সূত্র: এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এএফপি।

Please follow and like us:

Check Also

নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

চট্টগ্রামে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।