আগের সকল মামলায় জামিন পেলেও গাজীপুরের সিটি মেয়র মান্নান ফের আরো এক মামলায় গ্রেফতার ॥

ক্রাইমবার্তা রিপোট:গাজীপুর সংবাদদাতা,গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) ও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান কারাগারে বন্দি অধ্যাপক এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে এবার চাঁদাবাজীর অভিযোগে জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।  অধ্যাপক এমএ মান্নানকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আপিল বিভাগ বহাল রাখার দিনই ২০১৪ সালের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে এ মামলা দায়ের করা হয়। এ নিয়ে মেয়র মান্নানের বিরুদ্ধে মোট ২৮টি মামলা হয়েছে। 37
গাজীপুর আদালতের পরিদর্শক মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, টঙ্গীর শিলমন এলাকার মৃত বাছির উদ্দিনের ছেলে মোঃ রমিজ উদ্দিন বৃহম্পতিবার রাতে জয়দেবপুর থানায় চাঁদাবাজী ও মারধরের অভিযোগে  মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অধ্যাপক এম এ মান্নানসহ ৭ জনের নামে এবং অজ্ঞাত আরো ২-৩ জনকে আসামী করা হয়েছে। শুক্রবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কারবন্দি মান্নানকে গ্রেপ্তার দেখানোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মোঃ ইলিয়াস রহমান আসামি অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদি মোঃ রজিম উদ্দিন টঙ্গী শিল্প এলাকায় তার নিজ জমিতে কারখানা করার জন্য সিটি মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের কাছে অনাপত্তি সনদের জন্য যোগাযোগ করেন। এ প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বাদি তার কাগজপত্রসহ মেয়রের কার্যালয়ে যান। এসময় মেয়রের অফিস কক্ষের সাথে থাকা একটি রুমে নিয়ে মেয়র মান্নান তার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে তাকে কারখানা করতে দিবে না বলে হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে অধ্যাপক এমএ মান্নানের হুকুমে ও নির্দেশে অপরাপর আসামি মেয়রের এপিএস মোঃ বিল্লাল হোসেন, মোঃ রইচ উদ্দিন, আরিফ হাওলাদার, মোঃ সালাউদ্দিন, মোঃ আমিনুল ইসলাম লিটু ও মোঃ কাওসারসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২-৩ জন তাকে এলোপাথারী মারধর করে। এক পর্যায়ে তিনি ডাক চিৎকার করলে অধ্যাপক মান্নান তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এসময় অন্যান্য আসামিরা তার কাছ থেকে নগদ ৫৫ হাজার টাকা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয়। আর চাঁদা না দিলে তাকে হত্যা করে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দিবে বলে হুমকি দেয়। এঘটনায় রমিজ উদ্দিন বৃহম্পতিবার রাতে জয়দেবপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
এদিকে সিটি কর্পোরেশনের ত্রাণ ও দরিদ্র তহবিলের টাকা আত্মসাতের দুদকের মামলায় ১৯ জুন মেয়র মান্নানকে সব শেষ গ্রেফতার দেখানো হয়।  বৃহস্পতিবার এ মামলায় তার জামিন সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেয়া আদেশ আপিল বিভাগ বহাল রাখেন। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা অধ্যাপক এমএ মান্নানকে এবার চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলে তার মুক্তি আবারো আটকে গেল।
অধ্যাপক এম এ মান্নানের প্রধান আইনজীবী মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, অধ্যাপক এম এ মান্নানকে এ পর্যন্ত মোট ২৮টি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি ২৭ মামলায় জামিন লাভ করেন। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় দায়ের করা নাশকতার একটি মামলায় গত ২৩ নবেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভের পর শুক্রবার আরো একটি মামলায় তাকে ‘শোন এ্যারেষ্ট’ দেখানো হলো। বর্তমানে অধ্যাপক এমএ মান্নান গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ রয়েছেন। তিনি বিএনপির সদ্য ঘোষিত জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনীত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, গাজীপুরে যাত্রীবাহীবাসে পেট্রোলবোমা হামলার মামলায় গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএস’র নিজ বাসা থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) মেয়র ও বিএনপি নেতা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মোট ২২টি মামলায় ১৩ মাস কারাবরণের পর গত ২ মার্চ অধ্যাপক এমএ মান্নান জামিনে কারামুক্ত হন। এরপর গত ১৫ এপ্রিল রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা থেকে কয়েক সহযোগিসহ অধ্যাপক এমএ মান্নানকে আবারো গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন গাজীপুরের আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। ইতোপূর্বে তিনি আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা ২৭টি মামলার সবক’টিতে জামিন লাভ করেন। এসব মামলার প্রায় সবগুলোই বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ ও হরতালকালে গাড়ী ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ, হত্যা, নাশকতা, বিস্ফোরক ও পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দানসহ বিভিন্ন আইনে দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দু’টি মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত নাশকতার মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় গত বছরের ১৯ আগস্ট গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানকে বরখাস্তের আদেশ দেয়া হয়। তার অবর্তমানে গত বছরের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।