আমি বাংলাদেশি, ব্রিটিশ, মুসলিম এবং আমি গর্বিত: বেক-অফ জয়ী নাদিয়া

ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট:বিবিসি’র ‘১০০ নারী’ মৌসুমে সেলিব্রিটি বেকার অ্যান্ড গ্রেট ব্রিটিশ বেক-অফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাদিয়া হুসেইন কথা বলেছেন শাইমা খলিলের সঙ্গে। তিনি নিজের পরিচয় তুলে ধরেন ব্রিটিশ মুসলিম হিসাবে।

বিশ্বের ক্ষমতাশালী ১০০ নারীর তালিকায় চলে এসেছে তার নাম।বিবিসি’র বেকিং প্রতিযোগিতায় হুসেইনের সফলতা চাক্ষুস করেছেন রেকর্ড সংখ্যক দর্শক, ১৩ মিলিয়ন। সেই থেকে তিনি তার নিজের টেলিভিশন সিরিজের তারকা বনে গেছেন। ইতিমধ্যে রানির জন্য কয়েকটি বই লিখেছেন এবং একটি জন্মদিনের কেকও বানিয়েছেন।আমি বাংলাদেশি, ব্রিটিশ, মুসলিম এবং আমি গর্বিত: বেক-অফ জয়ী নাদিয়া

তার তৃতীয় বইটি একটি ফিকশন। এটা লেখার পেছনের কথা জানতে চাইলেন শাইমা। নাদিয়া জানান, রেসিপি নিয়ে বই লেখার ক্ষেত্রে এটি সত্যিই ভিন্ন। এখানে কোনো চকোলেট কেক লুকিয়ে রাখার কিছু নেই। এই বইয়ের চরিত্রগুলো নিয়ে কাজ করতে করতে গল্প বানিয়েছি। তবে একটা সময় বুঝতে পারি, লিখতে আমার ভালো লাগছে এবং নিজের মধ্যে নারী হিসাবে একটা শক্তি অনুভব করেছি। নারীর ক্ষমতায়ন রয়েছে এমন একটি পরিবারে বেড়ে উঠেছি আমি। একজন বলিষ্ঠ ও স্পষ্ট কণ্ঠের নারী চরিত্রকে নিয়ে লেখতে সত্যিই ভালো লেগেছে। বাংলাদেশের মানুষ হিসাবে এবং এখানে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে থাকার ক্ষেত্রে বিষয়টি সত্যিই উপভোগ্য। তবে বইটি কোনো অটোবায়োগ্রাফি নয়।

একজন মুসলিম ব্রিটিশ নারী হিসাবে বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন নাদিয়া। এটা কি তার ওপর কোনো বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে?

নাদিয়া জানান, যখন অনুষ্ঠানে নাম লেখাই, তখন স্রেফ আমি-ই ছিলাম তখন। মাথায় হিজাব পরা বা আমাকে যেমন দেখা যায় ইত্যাদি নিয়ে খুবই সাধারণ আমি। সেখানে আমি যেমন পোশাক পরেছি তার সবার চোখে পড়ার মতোই। কিন্তু এই বেশ-ভূষা আমি ১৪ বছর বয়স থেকে নিয়ে আসছি। কিন্তু যখন গ্রেট ব্রিটিশ বেক-অফ-এ যোগ দেই তখন প্রতিযোগিতাই মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এক সময় মনে হলো, আমি ভালো কিছু করতে পারছি। আমার উপস্থিতি অন্যদের মতো নয়। আবার প্রতিযোগী হিসাবে সবার নজরে আছি। এই অবস্থায় আমি আমার সন্তানদের কাছে আদর্শ কেউ হয়ে উঠতে চেয়েছি। আজ এই অবস্থানে এসে আমি গর্বিত। আমি বলতে চাই, হ্যাঁ, আমি বাংলাদেশী এবং আমি ব্রিটিশ এবং আমি এ সব নিয়ে গর্বিত।

কাজেই বিষয়টা খুবই চাপ সৃষ্টি তো করবেই?

উত্তরে নাদিয়া বললেন, এমনটা নয়। কারণ আমি জানি যে আমি নিখুঁত ব্যক্তিত্বের অধিকারী নই। মা হিসাবে আমার কার্যক্রম শেখাতে কেউ আমাকে কোন নির্দেশিকা দেয়নি।

 

এখন অনেক মুসলমান নারীকে রাস্তা-ঘাটে ইসলামবিরোধী মন্তব্যের শিকার হতে হয়। আপনারও কি তা হয়েছে কখনো?

যে মুহূর্ত থেকে আমি মাথায় হিজাব পরেছি তখন থেকেই এই অঞ্চলে এমন কথা শোনার পরিস্থিতি সৃষ্ট হয়েছে। নেতিবাচক কথার প্রেক্ষিতে আমি নেতিবাচক কথা বলি না। কেউ বললেও আমি হাসি দিয়ে বলি, আমার আসলে ভারসাম্য আনার জন্য কিছু করার কোনো দরকার নেই। আমার সবচেয়ে বড় চাকরি সন্তানদের বড় করে তোলা। আমি সুন্দর এক দেশে বাস করি। নেতিবাচক কথা আসে খুব কম সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে।

বেক-অফ জয়ের পর এমন মুসলিম ব্রিটিশ হিসাবে কটু মন্তব্য শোনার বিষয়েও কথা বলেছেন নাদিয়া। তার মতে, যে মানুষটি আমার জীবনে নেতিবাচক, আমি চাই না তার মোবাইল নম্বর আমার ফোনে থাকুক। আর মানুষের নজর যখন আপনার ওপর এবং আপনি সোশাল মিডিয়ায়া আছে, তখন দুনিয়াটা খুবই ছোট একটা জায়গা। যদি কেউ এমন করেন, তো তাকে স্রেফ ব্লক করে দেই।

টুইটার কিছু মানুষের বিরূপ মন্তব্যের কারণে পুলিশ নাদিয়াল বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এ বিষয়ে তিনি জাননা, বেক-অফ শেষের দিকে অনেক বাজে সমস্যা আসতে থাকে। এ কারণে বাড়ির চারদিকে পুলিশ থাকতো। অনেক মানুষের ভীড়ও দেখা যেতো। তবে আমার সন্তানরা মজা পেত। বলতো, এতদিনে বাড়িতে নতুন মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। আমি কেবল ভাবতাম, আমি কি করেছি? আমার পরিবার কি নিরাপদ? কিন্তু দ্রুতই বুঝলাম, এগুলো সেই মানুষদের কাজ যারা কিবোর্ডের বীর এবং তারা সেখানেই কথা বলেন, মুখের সামনে বলতে পারেন না।

ব্রিটিশ মুসলিম নারী হিসাবে তার এ সাফল্যে অন্যান্য ব্রিটিশ মুসলিম নারীরাও উজ্জীবিত হয়ে উঠবেন বলে তার বিশ্বাস। যদিও নেতিবাচক নানা দিক রয়েছে, তবুও এ পরিচয়ে আমি স্বতঃস্ফূর্ত। এটা আসল আত্মবিশ্বাসের বিষয়।

প্রথমে তার মাথার হিজাবের দিকে তাকালে অস্বস্তি লাগে নাদিয়ার। এটাই কি প্রথম দেখার বিষয়? কিন্তু এ নিয়ে কথা বলতে হয় অনেক সময়।

ব্রিটিশ না কি মুসলিম? নিজের পরিচয় নিয়ে কি সংগ্রাম করতে হচ্ছে?

নাদিয়া জানালেন, আসলে আমার তিনটি পরিচয়। আমি বাংলাদেশি, ব্রিটিশ এবং মুসলিম। এই তিনটি পরিচয় সামলে রাখা বেশ কঠিন। অনেক সময় একটি পরিচয় বাদ দিয়ে অন্যটির উজ্জ্বলতা তুলে ধরতে হয়। তবে সন্তান হওয়ার পর আমার পরিচায় সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এসব পরিচয়ই আমার ভালো লাগে। বিভিন্ন অংশের অংশ হতে পারাটা সত্যিই অপূর্ব সুন্দর এক বিষয়। সূত্র: বিবিসি

 

Check Also

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আজ প্রশ্ন উঠছে গণতন্ত্র কোথায়: মঈন খান

ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য বিরোধী দলের রুদ্ধে এক লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে ও তাদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।