এক চীন নীতি মানতে চান না ট্রাম্প

ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ৪৪ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র এক চীন নীতি মেনে আসলেও দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার দেশ ওই নীতি মানতে বাধ্য নয়। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের সঙ্গে নাটকীয় মোড় নিতে যাচ্ছে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি। তারই আভাস দিচ্ছেন ট্রাম্প। চীন-মার্কিন ৪৪ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে কিছুদিন আগে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপের যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি এই সম্পর্ক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন। চীন অবশ্য তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল।13

তাইওয়ানকে নিজ দেশের অংশ মনে করে চীন। ‘এক চীন’ নীতির মধ্য দিয়ে সেই ধারণাই প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে দেশটি। তাইওয়ানকে অখ- চীনের অংশ মনে করার নীতিই এক চীন নীতি। ১৯৭২ সালে চীনের চেয়ারম্যান মাও সে তুং এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মধ্যে ‘এক চীন নীতি’র প্রতি মার্কিন সমর্থনের ব্যাপারে ঐকমত্য হয়। এরপর থেকে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেননি। গত ৪৪ বছরে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই নীতির বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য রাখেননি।

নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই দীর্ঘদিনের রীতি ভাঙেন ট্রাম্প। গত রোববার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ‘এক চীন’ নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। আভাস দেন দেশটির সঙ্গে ৪৪ বছরের পররাষ্ট্রনীতি বদলের। ফক্স নিউজকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ঠিক বুঝি না, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য অথবা অন্যান্য প্রশ্নে যদি চুক্তিই না করা যায়, তাহলে তাদের ‘এক চীন নীতি’ সমর্থনের কারণটা কী?’

যুক্তরাষ্ট্র মূলত তিন কারণে এক চীন নীতি সমর্থন করে আসছে: প্রথমত, বেইজিংয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, দ্বিতীয়ত, তাইওয়ানকে রক্ষা ও সহযোগিতা করে গণতন্ত্রের পথ রক্ষা এবং তৃতীয়ত, যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা। ১৯৭২ সালে মাও-রিগ্যান সমঝোতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ১৯৭৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৪৪ বছরে তাইওয়ানের ব্যাপারে চীনের অবস্থানকে সম্মান জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

৪৪ বছরের সেই রীতি ভেঙে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন-এর সঙ্গে ফোনে কথা বলে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন ট্রাম্প। এ নিয়ে ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, তাইওয়ানের নেতার সঙ্গে তার আলাপের বিষয়ে বেইজিং সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

ওই টেলিফোন আলাপের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কে অস্বস্তি বাড়তে থাকে। বেইজিং প্রথম প্রতিক্রিয়ায় একে ট্রাম্পের অন্তবর্তী প্রশাসনের পররাষ্ট্রনৈতিক বোঝাপড়ার অভাব বলে উল্লেখ করে। পরে ট্রাম্পের আরও সমালোচনা করে চীন। সমালোচনার পাল্টা জবাবও দেন ট্রাম্প। বলেন, তাইওয়ানের নেতার সঙ্গে তার আলাপের বিষয়ে বেইজিং সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই না; চীন আমাকে আদেশ করুক। এই কলটা আমাকে করা হয়েছিল। এটা ছিল বেশ চমৎকার একটা সংক্ষিপ্ত কল। অন্য কিছু দেশ এটা কিভাবে বলতে পারে যে, আমি একটি কল রিসিভ করতে পারি না? আমার কাছে মনে হয়েছে যে, এটা খুবই অসম্মানজনক।’

এর আগে তাইওয়ানের নেতার সঙ্গে বৈঠকের পর বেইজিং-এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জবাবে টুইটারে দেওয়া একাধিক পোস্টে চীনকে এক রকম তুলোধুনা করেন ট্রাম্প। এসব টুইটে তিনি চীনের মুদ্রানীতি এবং দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিং-এর কর্মকা-ের কঠোর সমালোচনা করেন। টুইটারে ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘চীন কি নিজেদের মুদ্রার মান কমানোর ব্যাপারে আমাদের জানিয়েছে? এর ফলে আমাদের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রতিযোগিতা করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে।’ আরেক টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা কি দক্ষিণ চীন সাগরে বিশাল সামরিক কাঠামো নির্মাণের জন্য তাদের অর্থ দেই? আমরা মনে হয়, না।’ সিএনএন

Check Also

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়ার সত্ত্বেও গাজায় হামলা চলবে: ইসরাইল

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়া সত্ত্বেও গাজায় হামলা চালাবে ইসরাইল বলে জানিয়েছেন দেশটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।