‘মেয়েটিকে সাহায্য করো না, সে মুসলিম’

ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি হাসপাতালে একজন সন্তানসম্ভবা দরিদ্র রোহিঙ্গা নারী তার স্বামীকে ফোন করতে চাইছিলেন। কিন্তু তার কাছে ফোন ছিল না। তার কষ্ট দেখে তাকে নিজের ফোনটা দিতে গিয়েছিলেন সাংবাদিক মিন মিন।

কিন্তু এ সময় সেখানকার চিকিৎসক চিৎকার করে উঠেন, ওই মেয়েটিকে সাহায্য করো না, সে একজন মুসলিম।

চিকিৎসকের এমন রূঢ় বক্তব্য শুনে অবাক হয়ে যান মিন মিন। আরো অবাক হন যখন চিকিৎসক ওই নারীকে বলেন, ফোন করার বিনিময়ে যাতে তিনি উপকার করা ব্যক্তিকে টাকা দেন।

একজন বিপদাপন্ন নারীর প্রতি এমন আচরণ দেখে ভালো লাগেনি তার। তাই এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেন সাংবাদিক মিন মিন। ওই সংবাদ দেখে চটে যায় দেশটির বৌদ্ধ ধর্মালম্বী কট্টরপন্থিরা। তার মাথার দাম ঘোষণা করে ২৯ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৩ লাখ।

রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়েতে বসবাস করেন মিন মিন। অক্টোবর থেকেই সেখানে চলছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। তবে সরকারের দাবি, রোহিঙ্গারা ৯ সীমান্ত রক্ষীকে হত্যা করায় রাখাইন রাজ্যের সাড়ে ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা ঘিরে রাখে সেনাবাহিনী।

ওই রাজ্যে সেনা অভিযানে খুন, ধর্ষণ, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছে মিয়ানমার সরকার। ঘটনার পর থেকে অন্তত ২০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সমালোচনা হচ্ছে শান্তিতে নোবেল পাওয়া অং সান সু চির নিরব ভূমিকা নিয়েও। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, সেনাবাহিনীর হাতে একশ রোহিঙ্গা মুসলিমের মৃত্যু হয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, এ সংখ্যা কয়েকগুণ। এ রাজ্যে অবশ্য সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব দিতে নারাজ। দেশটির দাবি, রোহিঙ্গারা অবৈধ অভিবাসী। জাতিসংঘ বলছে, বর্তমানে বিশ্বে ১১ লাখ রোহিঙ্গা  গৃহহীন।

ডিপিএ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে মিন মিন জানিয়েছেন, মুসলমানরা তাদের জন্য একটা হুমকি, এটাই তিনি জেনে এসেছেন এতোদিন। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছর থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় থেকে তিনি রোহিঙ্গা দুর্দশা খুব কাছ থেকে দেখেছেন। উপলব্ধি করেছেন, কতোটা অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গা মুসলিমরা। এরপর থেকেই তাদের নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। অবহেলিত এ সম্প্রদায়কে মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত, এমনকি চিকিৎসা করাতেও তাদের কী ধরনের বাধার সম্মুখিন হতে হয় তাও তার লেখায় ফুটে উঠেছে। তবে এ সমস্যার সমাধান প্রায় অসম্ভব বলেও জানিয়েছেন মিন মিন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এর জন্য মিয়ানমার সরকারের ভূমিকাই সবচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ।

জানা গেছে, মিন মিনের প্রতিবেদনের কারণে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তার সিতওয়ের বাড়িতে বোমা হামলা চালায়। তাকে বাধ্য করে ইয়াঙ্গুনে চলে যেতে। মাথার দাম ঘোষণা করায় যেকোনও সময় তাকে হত্যাও করা হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

তবু দমে যাননি মিন মিন। এ মাসেই নতুন অনুসন্ধানী পত্রিকা প্রকাশ করেছেন এই সাহসী সাংবাদিক। নাম দিয়েছেন ‘রুট’ বা শেকড়। যেখানে তিনি নিরপেক্ষভাবেই রোহিঙ্গা সমস্যার বিস্তারিত লিখছেন নিয়মিত।

Please follow and like us:

Check Also

অনিশ্চয়তার নতুন যুগে মধ্যপ্রাচ্য

ইউক্রেন-রাশিয়া রেশ কাটতে না কাটতেই ফিলিস্তিনের গাজায় শুরু হয় ইসরাইলি আগ্রাসন। এরপর থেকে অশান্ত হতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।