সরকারি দলের ইচ্ছায় ইসি নিয়োগ গ্রহণযোগ্য হবে না : খালেদা জিয়া

ক্রাইমবার্তা রিপোট:১/১১’র অবৈধ সরকারের সাথে সমঝোতা করেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসেছে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ মানেই গণতন্ত্র হত্যাকারী, গুম খুন আর লুট। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, সরকারি দলের ইচ্ছায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। ফের রকীব মার্কা মেরুদণ্ডহীন কমিশন হলে তা বিদেশেও গ্রহণযোগ্য হবে না।

জিয়া পরিষদের সম্মেলন উপলে গত রাতে গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংগঠনটির নেতাদের সাথে মতবিনিময় শেষে এসব কথা বলেন বেগম জিয়া। এ সময় জিয়া পরিষদকে গ্রামে-গঞ্জে দেশের সত্যিকার অবস্থা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য জনমত গঠনে কাজ করার আহ্বানও জানান বিএনপি প্রধান।
তিনি বলেন, দলীয় লোক নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করলে জনগণ মানবে না। তাই আমরা প্রত্যাশা করি রাষ্ট্রপতি সবার মতামতের ভিত্তিতেই নিরপে লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। আমাদের ল্য সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই বিএনপির ল্য। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, রাষ্ট্রপতি কোনো দলের না, তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি, তিনি সবার কাছে সমান। আমরা যেটা আশা করব, জনগণ যেটা আশা করে রাষ্ট্রপতি সবার কথা শুনে এমন সব ব্যক্তিকে দিয়ে সার্চ কমিটি বা নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, যেখানে সবাই বুঝতে পারেন, রাষ্ট্রপতি সত্যিকার অর্থে নিরপে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। উনি যদি সরকারি দলের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য কোনো নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেন, তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
খালেদা জিয়া বলেন, এখানে মাঠে নানারকম কথা শোনা যাচ্ছে। যেমন আওয়ামী লীগ গিয়েছিল রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করতে। তারা এসে বলেছে, তারা কিছু প্রস্তাব দিয়েছে এবং তার সাথে আরো প্রস্তাব দিতে পারে, যা প্রকাশ হয়নি। আমাদের কথাও সব প্রকাশ হয়নি, আমরা লিখিত কী দিয়েছি। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হবেÑ সেগুলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে, আরো ভালোমতো খবর নিয়ে যে ব্যক্তিটা কী রকম, সে কোনো দলীয় কি না, নিরপে কি না, নির্বাচন কমিশনের কাজটি মাথা উঁচু করে, মেরুদণ্ড সোজা করতে পারে কি না। রকীবের মতো মেরুদণ্ডহীন দলীয় ওই রকম লোক যদি বসিয়ে দেয়া হয়, তাহলে কিন্তু সত্যিকার অর্থে নির্বাচন কমিশন হবে না, দেশী-বিদেশী কারোই আস্থা পাবে না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, বাক স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। বিটিভি হয়েছে এখন আওয়ামী লীগের বাক্স। সরকারি হস্তেেপ গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। যে কথা সরকারের মনঃপূত হবে না, তা প্রচার করতে দেয় না।
বেগম জিয়া বলেন, শুধু বিএনপির দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না, আজকে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। বিএনপি হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চায়। আওয়ামী লীগ মানেই হচ্ছে মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চলে, ব্যাংক লুটপাট চলে। আওয়ামী লীগ মানেই অত্যাচার-মিথ্যাচার, দুর্নীতি। তাদের অধীনে দেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে না।
১/১১’র সময়ে অবৈধ সরকারের সাথে সমঝোতা করেই আওয়ামী লীগ মতায় বসেছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ১/১১’র সময়ে আমার সাথেও তাদের কথা হয়েছিল, তারা অন্যায় করেছে, আমি রাজি হয়নি। কিন্তু হাসিনা রাজি হয়েছে, তাকে মতায় বসিয়েছে। তাকে কতগুলো সিট দিয়েছে কেন তা জানতে হবে। কারণ মইন-ফখরুদ্দীনের অপকর্ম পার্লামেন্টে পাস করতে হবে সেজন্য তাদের বেশি সিট দিয়ে মতায় বসিয়েছে। ওদের অপকর্ম পাস করেছে আওয়ামী লীগ।
এরশাদের জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দুই নম্বর টিম অভিহিত করে খালেদা জিয়া বলেন, দেখবেন, সব বিদ্রোহের সাথে আওয়ামী লীগ থাকে। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সাথে ছিল তারা, জেনারেল নাসিমের বিদ্রোহে ছিল তারা, এরশাদের সময়েও ছিল তারা। এরশাদের ’৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিয়েছিল, ২০১৪ সালেও তারা অংশ নিয়েছে। এরশাদ হচ্ছে তাদের দুই নম্বর টিম। মানুষের কাছে এরশাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। মানুষ বুঝেছে এরশাদ কি জিনিস? এরশাদও একই জিনিস সেই লুটপাট করা, দুর্নীতি করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক নিয়োগে দলীয়করণের সমালোচনা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আওয়ামী লীগ হলে তাকে চাকরিটা দেয়া হয়। আর যোগ্য হলেও অন্যরা চাকরি পায় না। এই যে অবিচার চলছে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। সত্যিকারভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে যোগ্য ব্যক্তিরা চাকরি পাবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশে বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। আইন সবার জন্য সমান নয়। আওয়ামী লীগ হলে এক রকম বিচার হয় আর অন্যদল ও সাধারণ নাগরিক হলে তাদের জন্য ভিন্ন রকমের বিচার হয়। মামলায় মেরিট থাকুক না থাকুক, তা দেখা হবে না। দেখা হবে যে বিএনপির লোক হলে অপরাধ করুক না করুক তার জেল নির্ধারিত। কেন? সেখানে বিচারকের কোনো দোষ নেই, তাদের বাধ্য করা হয় ওপর থেকে নির্দেশ দিয়ে যে তাকে জেলে দিতে হবে। সরকারের তিনজন মন্ত্রী আদালত থেকে দোষী ও সাজা পাওয়ার পরও তারা বহাল তবিয়তে মন্ত্রিত্ব করছেন বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। গণতন্ত্র ফিরে আসবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এর জন্য আপনাদের সবাইকে কষ্ট করতে হবে। আসুন আমরা যার যার অবস্থান থেকে এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলি, আওয়াজ তুলি।
মতবিনিময় সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান কবির মুরাদ, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ, অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস, অধ্যাপক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, দেওয়ান মাহফুজুর রহমান ফরহাদ, আবদুল্লাহিল মাসুদ, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Please follow and like us:

Check Also

নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

চট্টগ্রামে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।