নিরপেক্ষতার ‘শতভাগ নিশ্চয়তা’ নতুন সিইসির#চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না : নুরুল হুদা

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭,মঙ্গলবার:পরবর্তী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলছেন, তিনি নিরপেক্ষভাবে এবং আইনের ভিত্তিতে কাজ করার ‘শতভাগ নিশ্চয়তা’ দিচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে বিরোধীদল বিএনপি অংশ নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশ নেয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা কাজের মাধ্যমে আমাদের নিরপেক্ষতা এবং পক্ষপাতিত্বহীনতা দেখাবো, সব দলের আস্থা অর্জন করবো। আশা করি, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে।’19
তিনি আরো বলেন- ‘এটাকে অনেক বড় ও চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব হিসেবেই নিয়েছি। চ্যালেঞ্জটা হলো, পরবর্তী নির্বাচনটি – যা ২০১৮ বা ২০১৯ এর শুরুতে, যখনই হোক – তা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পাদন করা।’

দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সেজন্য এ নির্বাচন নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি যে আসবে – সে ব্যাপারে কিভাবে আশ্বস্ত করা হবে – এমন এক প্রশ্নের জবাবে কে এম নূরুল হুদা বলেন, আমাদের কাজকর্মেই আমরা দেখাবো যে আমরা নিরপেক্ষ, আমরা কোনো পক্ষপাতিত্বের মধ্যে নেই।

এদিকে প্রথম আলোর দেয়া সংবাদটি হুবহু তুলে ধরা হল

চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না : নুরুল হুদা

নবনিযুক্ত সিইসি নুরুল হুদাকোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার অঙ্গীকার করে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, তাঁর কাছে কোনো বিশেষ দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর গুরুত্ব নেই। তিনি বলেছেন, ‘আমার বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। নিরপেক্ষতা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সংবিধানের ধারাকে সমুন্নত রাখব। এর বাইরে আর কিছু নেই।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নবনিযুক্ত সিইসির উত্তরার বাসায় প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে নুরুল হুদা এসব কথা বলেন।
সিইসি পদে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই গতকাল সোমবার রাতেই নুরুল হুদার কাছের কিছু বন্ধু ফুল দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে গতকাল রাতেই তাঁর বাসভবনে পুলিশি প্রটোকল নিশ্চিত করা হয়। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশনারদের শপথ হবে।
দলীয় নির্দেশনা বা চাপের কাছে মাথা নত না করার অঙ্গীকার করে নুরুল হুদা বলেন, ‘কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না। কোনো দলের কাছে, ব্যক্তির কাছে নির্বাচন কমিশন নত হবে না।’
নতুন দায়িত্ব পাওয়াকে কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘এটা খুব চ্যালেঞ্জিং। এটা গুরুদায়িত্ব, যা জাতির জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে রাষ্ট্রপতি আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। সে দায়িত্ব পালনের জন্য আমি এবং আমার কমিশনের অন্য যাঁরা আছেন সাধ্যমতো চেষ্টা করব।’
সুষ্ঠু এবং স্বাভাবিক নির্বাচনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব, জানিয়ে নুরুল হুদা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহী হয়, এই কাজগুলো করব।’
বিএনপির মধ্যে ইতিমধ্যে আপনাকে নিয়ে অনাস্থার ভাব সৃষ্টি হয়েছে, এটাকে কীভাবে দেখছেন? জানতে চাইলে নুরুল হুদা বলেন, ‘তাদের মধ্যে কী ধরনের অনাস্থার ভাব তৈরি হয়েছে, তা এখনো শুনিনি। শুনতে ও বুঝতে এখনো দু-এক দিন সময় লাগবে।’
অতীতের কয়েকজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, রাজনৈতিক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন। আপনাকেও রাজনৈতিক সরকারের অধীনে করতে হবে। এই চ্যালেঞ্জকে আপনি কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘আমার কাছে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব নেই। বিশেষ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠীর গুরুত্ব নেই। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো আইনি হাতিয়ার (লিগ্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট) এবং এর অধীনে যে আইনগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলো। আমার কাছ থেকে অন্যায্য সুবিধা পাবে না। আশা করি, আমার কমিশনের কাছ থেকেও পাবে না।’
দায়িত্ব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসার সম্ভাবনা আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘এখনো সময় আসেনি। তবে জটিল সমস্যা হলে অবশ্যই বসব। আর রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ থাকলে বসব। তবে কীভাবে বসব, কোথায় বসব, তা কমিশনারদের সঙ্গে আলাপ ছাড়া বলতে পারব না।’
রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা চ্যালেঞ্জের বিষয়ে নুরুল হুদা বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ তো বটেই। কিন্তু নির্বাচিত সরকারের অধীনেই তো নির্বাচন হতে হবে। সব দেশে তা-ই হয়, এই দেশে তা-ই হবে। দু-একটা টার্মে ডিস্টার্ব হবে। এরপরে আশা করি ঠিক হয়ে যাবে।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দল নানা অভিযোগ করেছে, আগামী নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন হিসেবে আমাদের বক্তব্য, সেখানে কোনো পক্ষপাতিত্ব হবে না। নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করব, থাকব। রাজনৈতিক দলগুলো কী ধরনের কাজ করে, সেটা তো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ। এখানে পক্ষপাতিত্ব থাকবে না।
শপথ নেওয়ার পর প্রথমে কী ধরনের কর্মকাণ্ড শুরু করবেন, এর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রথমে আমাদের কাজের একটা ছক তৈরি করতে হবে, কখন কোনটি করব। কারণ কী অবস্থায় নির্বাচন কমিশন আছে, সেটা তো জানি না। তবে আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশন অনেক সমৃদ্ধ। এত বছরে তারা একটা শক্ত কাঠামো তৈরি করেছে। সেটাকে ব্যবহার করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনারের অধীনে তো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। সুতরাং ভবিষ্যতে হবে না কেন?’
নির্বাচন নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে জানিয়ে নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেছি। এটা আমার জন্য অভিজ্ঞতার ভান্ডার।’
অন্য নির্বাচন কমিশনারদের আপনি কতটুকু চেনেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি তাঁদের কাউকে চিনি না। তবে তাঁরা অনেক ভালো। কারণ অনেক লোকের মধ্যে থেকে মাত্র চারজনকে বাছাই করা হয়েছে। তাঁরা অত্যন্ত দক্ষ, অভিজ্ঞ ব্যক্তি। এঁদের নিয়ে আমরা সার্থকভাবে কাজ করতে পারব।’
বর্তমান কমিশনের ধারায় আপনি কাজ করবেন কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘ধারা কখনো এক থাকে না। ধারা পরিবর্তন হয় পরিস্থিতির ওপর। আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনায় কৌশল ঠিক করব। একই ধারা সব সময় থাকে না। তাঁদের চেয়ে আমাদের অবস্থান ভিন্নতর হতে পারে।’
রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীর উদ্দেশে নুরুল হুদা বলেন, ‘তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা নির্বাচন কমিশনকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে।’
নতুন সিইসি নুরুল হুদা বিসিএস ১৯৭৩ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে যুগ্ম সচিব থাকা অবস্থায় তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। পরে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০০৯ সালে ভূতাপেক্ষ সচিব হন। এর আগে তিনি মামলা করে আদালতের রায় পান।

Check Also

সাংবাদিককে কারাদণ্ড- ক্ষমতার অপব্যবহার কি না সেটা তদন্ত শেষে ব্যবস্থা: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

তথ্য চাওয়ায় শেরপুরের সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনা ক্ষমতার অপব্যবহার কি না …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।