রোহিঙ্গা নির্যাতনকারী ৩ পুলিশকে লঘুদণ্ড দিল মিয়ানমার

ক্রাইমবার্তা রিপোট:রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্যাতনকারী মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের (বিজেপি) তিন কর্মকর্তাকে নামকাওয়াস্তে মাত্র দুই মাসের শাস্তি দেয়া হয়েছে।

এছাড়া একজন মেজরসহ তিনজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাকে শৃংখলা রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য পদাবনতি দেয়া হয়েছে এবং তাদের চাকরির মেয়াদ কমানো হয়েছে।

গত মাসে এ শাস্তি দেয়া হয় বলে বুধবার মিয়ানমারের নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।

নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের রোহিঙ্গাদের আঘাত করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না বলে দাবি করছে সূত্রগুলো।

রাখাইন রাজ্যে গত অক্টোবর ৮ অক্টোবর থেকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নাম করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা-গণধর্ষণ-গণগ্রেফতার চালাচ্ছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো।

এর ধারাবাহিকতায় গত ৫ নভেম্বর রাখাইনের রাতেডং এলাকার ‘কুয়েতানকাউক’ গ্রামে (স্থানীয় নাম ডাউনসে ফারা) নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায় বিজিপি এবং সেনাবাহিনী।

একজন বিজিপি সদস্য এই নির্যাতনের দৃশ্য মোবাইল ফোন সেট দিয়ে ভিডিও করেন।

পরে গত ২৯ ডিসেম্বর ওই ভিডিওচিত্র প্রথমকে হোয়াটসঅ্যাপে প্রচার করা হয়। এক পর্যায়ে ভিডিওটি ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।

ভিডিওটিতে দেখা গেছে, অভিযান চালানোর নাম করে বিজিপি সদস্যরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের মারতে মারতে একটি খোলা জায়গায় এনে জড়ো করছে। সেখানে অন্তত ৬০ জন রোহিঙ্গাকে মাথায় হাত তুলে এবং সামনে পা ছড়িয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে।

এতে আরও দেখা যায়, বিজিপি সদস্যরা আটক রোহিঙ্গাদের ইচ্ছেমতো পেটাচ্ছে এবং বুকে-মুখে ঘুষি-লাথি দিচ্ছে। আটক রোহিঙ্গাদের দেখে নিরাপরাধ বেসামরিক মানুষ মনে হলেও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সঙ্গে অপমানজনক আচরণ করে এবং জাতিগতভাবে দুর্ব্যবহার করে।

ভিডিওটি প্রকাশের পর গত জানুয়ারিতে বেশ কয়েকজন বিজিপি কর্মকর্তাকে আটক করে মিয়ানমার সরকার।

এরপর গত মাসেই তিনজন পুলিশ জুনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়ে বলে এএফপিকে জানায় পুলিশ সূত্র। দণ্ডিতদের ভিডিও চিত্র ধারণকারী বিজেপি সদস্য জাউ মিও তিকেও রয়েছেন।

তবে দণ্ডিত এই পুলিশ কর্মকর্তাদের সাধারণ মানুষদের সঙ্গে কারাভোগ করতে হবে না। তারা পুলিশের জন্য নির্মিত কারাগারে বন্দি থাকবেন।

উল্লেখ্য, রাখাইনে গত চার মাস ধরে চলা অভিযানে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়ন থেকে বাঁচতে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা রাখাইন থেকে গণধর্ষণ, হত্যা, নিপীড়ন এবং অগ্নিসংযোগের ভয়ংকর সব ঘটনার স্মৃতি নিয়ে এসেছেন।

গত শুক্রবার জাতিসংঘ সাক্ষাৎকার ভিত্তিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের বরাতে কয়েক শ’ রোহিঙ্গা ‘র নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

মিয়ানমারের পরিকিল্পত সন্ত্রাসী নীতির কারণে রোহিঙ্গারা নিহত হয়েছে জানিয়ে এ ঘটনায় জাতিগত নিধনের অভিযোগ উঠতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

নির্যাতনের বহু তথ্য প্রমাণ থাকলেও মিয়ানমার সরকার সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপকহারে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ নাকচ করে আসছে।

তবে পিটুনির ভিডিও প্রকাশের ঘটনায় বিরল ব্যতিক্রমের জন্ম দিয়ে ব্যবস্থা নিল কর্তৃপক্ষ।

Please follow and like us:

Check Also

কলারোয়া  উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি আবুল কাশেমের ইন্তেকালঃ বঙ্গবন্ধু বিশেষ সুপারিশে  যিনি কারা মুক্ত হন

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।