নওগাঁয় ভুয়া চিকিৎসকের এক লক্ষ টাকা জরিমানা

ক্রাইমবার্তা রিপোট:নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁ শহরের পিটিআই এর মোড়ে চৌধুরী ডেন্টাল কেয়ারে ভুয়া সনদপত্র (সার্টিফিকেট) ব্যবহার করে আব্দুস সালাম (৫০) নামে এক ব্যক্তি দন্ত চিকিৎসা দেয়ার সময় বৃহস্পতিবার দুপূরে হাতে নাতে আটক করা হয়। আটকের পর তাকে ভ্রাম্যমান আদালতে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। নির্বাহী 29ম্যাজিষ্ট্রেট ও ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক এসএম হাবিবুল ওই ভ’য়া চিকিৎসকের মুচলেখা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ডেন্টাল কেয়ারটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। ভ’য়া দন্ত চিকিৎসক আব্দুস সালাম পিটিআই এর পেছনে তৈয়ব আলী ছেলে ।
জেলা সিভিল সার্জল অফিসের মেডিক্যাল অফিসার ডা: শরিফুল ইসলাম জানান, শহরের পিটিআই পূর্ব পার্শ্বো (২য় তলায়) চৌধুরী ডেন্টাল কেয়ারে আব্দুস সালাম নামে এক ব্যক্তি ভুয়া সনদপত্র ব্যবহার করে দীর্ঘ এক বছর থেকে দন্ত চিকিৎসা করে আসছেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার দূপূরে এক অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় আব্দুস সালামের সনদপত্র দেখতে চাইলে ডেন্টাল কেয়ারে জমা দেয়া সনদপত্র এনে দেখান। সেগুলো ভ’য়া প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ভ্রাম্যমান আদালতে নেয়া হয়। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক এসএম হাবিবুল ওই ভ’য়া দন্ত চিকিৎসক আব্দুস সালামের এক লাখ টাকা জমিমানা আদায় করেন। এ ছাড়া আব্দুল সালাম আর কোনদিন এই প্রতারণা করবে না এমন মুচলেখা দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ডেন্টাল কেয়ারটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।

কবিতা খানম নির্বাচন কমিশনার হওয়ায় নওগাঁয় আনন্দের বন্যা

নওগাঁ প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের মানচিত্রে উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোর মধ্যে ১১টি উপজেলা সমন্বয়ে গঠিত নওগাঁ একটি উল্লেখযোগ্য জেলা। শষ্যভান্ডার খ্যাত এ জেলায় ভারতের সাথে সীমান্ত এলাকা রয়েছে ১৭৯ কিলোমিটার। আদিকাল থেকেই এ জেলার মানুষ অনেক বড় বড় পদে আসীন হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন দেশ-বিদেশের মাটিতে। কেউ প্রকাশ্যে আবার কেউবা অপ্রকাশ্যে। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অনেক ঘটনারই নায়ক এ জেলার মানুষ এটি সর্বজনবিদিত। সরকারের মন্ত্রী পরিষদ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রদূত, সচিব, সংসদের ডেপুটি স্পীকার, নির্বাচন কমিশনার, পুলিশের মহাপরিদর্শক, জজ-ব্যারিষ্টার ছিলেন এবং এখনও রয়েছেন এ জেলারই অনেক মানুষ। এমন কি সদ্য বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের কমিশনার ছিলেন নওগাঁর মানুষ ব্রিগেডিয়ার মোঃ জবেদ আলী। তাঁর আসা-যাওয়ায় নওগাঁর মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে না পারলেও নব নিযুক্ত নির্বাচন কমিশনার নাওগাঁর আরেক মানুষ কবিতা খানমের ক্ষেত্রে ঘটে গেল ব্যতিক্রমী ঘটনা। নির্বাচন কমিশনে তাঁর নাম ঘোষনা হবার পর থেকেই  মানুষ খুঁজতে থাকে কে এই কবিতা? পরিচয় যখন মিলল তিনি আর কেউ নন, শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা নওগাঁ বি,এম,সি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ (বর্তমানে মৃতঃ) সকলেরই শ্রদ্ধেয় স্যার বি, হক ( বজলুল হক) স্যারের মেয়ে, তখন থেকেই আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করেছে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে। এই আনন্দের মুল কারণ কবিতা খানম একজন স্বনামধন্য শিক্ষাবিদের মেয়ে এবং দেশের সর্বপ্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার। ফলে বিষয়টি এখন টক অব দ্য ডিষ্ট্রিক্ট-এ পরিণত হয়েছে। পারিবারিক সুত্রে জানা যায় ১৯৫৭ সালের ৩০ জুন নওগাঁ’র উকিলপাড়া মহল্লার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন কবিতা খানম। হাতে খড়ি থেকে শুরু করে জীবনের প্রথম সার্টিফিকেট পরীক্ষা এসএসসি এই নওগাঁ থেকেই পাশ করেন তিনি। এরপরই উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের প্রয়োজনে ছাড়েন নিজ জন্মস্থান। তার পিতা মরহুম বজলুল হক ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ। মা গোলে রানী ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিনী। বজলুল হক ছিলেন প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী বিএমসি কলেজের অধ্যক্ষ। ১৯৯৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। চার ভাই, চার বোনের মধ্যে কবিতা পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান। বড় ভাই বখতিয়ার মোসতাহিদ সোবহানি প্রকৌশলী হিসেবে আমেরিকা প্রবাশী। দ্বিতীয় ফরিদা বেগম যিনি নওগাঁ সরকারী ডিগ্রী কলেজ থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর নিয়েছেন। তৃতীয় ভাই হেলাল মোস্তাহিদ সোবহানি বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে ব্যবসায়ী কাজে স্বপরিবারে বসবাস করছেন। চতুর্থ কুরাতুল আইন সম্প্রতি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে অবসর নিয়েছেন। পঞ্চম সিহাব মোতাব্বির সুবহানি আরব আমিরাতে কর্মরত। ফৌজিয়া খানম গাইনি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন। সপ্তম কবিতা খানম যিনি ২০১৫ সালের জুনে রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর গ্রহন করেন। অষ্টম তারিক মোস্তাহিদ সোবহানি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেজর হিসেবে কর্মরত আছেন। ১৯৭২ সালে নওগাঁ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং একই শহরের তার পিতার কলেজ বিএমসি থেকে ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাশ করেন কবিতা। এরপর ১৯৮১ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণীবিদ্যা বিষয়ে অনার্স ও মাষ্টার ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৮৩ সালে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮৪ সালে বিসিএস’র বিশেষ ব্যাচে উত্তীর্ণ হয়ে রাজশাহীর জেলা জজ আদালতে মুনসেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এ অবস্থায় দেশের বগুড়া, টাঙ্গাইল ও কুষ্টিায়ার বিভিন্ন আদালতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে পদন্নতি পেয়ে ঝিনাইদহ ও পাবনাতে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদন্নতি পান। তিানি এ সময় চাপাইনববগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা ও খুলনাতে দায়িত্ব পালন করেন। খুলনাতে দায়িত্ব পালনের সময় ২০০৬ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদন্নতি পান এবং খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তাকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর ২০০৯ সাল পর্যন্ত রাজশাহী লেবার কোর্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তিতে ওই সালেই তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা দায়রা জজ হিসেবে বদলি করা হয়। তিনি সেখানে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে আবারও তাঁকে রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে বদলি করা হয়। সেখানে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৬ সালের ৩০ জুন তিনি অবসর গ্রহন করেন। তাঁর স্বামী মশিউর রহমান চৌধুরী ও জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ২০১১ সালে মৃত্যু বরণ করেন। কবিতা খানম ১ ছেলে ও ১ মেয়েসহ ২ সন্তানেন জননী। ছেলে চৌধুরী আবিদ রহমান রুয়েট থেকে লেখাপড়া শেষে বর্তমানে সেনাবাহিনির ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত আছেন। মেয়ে ডা. মুমতাহিনাহ্ ঢাকার একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে লেকচারার হিসেবে কর্মরত আছেন।#

Check Also

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। জুড়ী উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।