সেনেটে মিথ্যে বলে চাপে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল

ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক :আমেরিকায় গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চলাকালীন রুশ রাষ্ট্রদূতের সাথে তার যে বৈঠক হয়েছিল, সেনেটের শুনানিতে সে কথা গোপন করে প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্স।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতম উপদেষ্টাদের একজন, জেফ সেশন্স যাতে অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে ইস্তফা দেন সে জন্যও তার ওপর চাপ বাড়ছে।

নির্বাচনী প্রচারণার সময় জেফ সেশন্সের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়ার দূত সের্গে কিসলিয়াকের যে সামনাসামনি সাক্ষাত হয়েছিল, সেই খবরটি ফাঁস করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট।মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্স

তাদের রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে, গত সেপ্টেম্বরে নির্বাচনী প্রচারণা যখন তুঙ্গে, তখন সেসময়কার সেনেটর জেফ সেশন্স তাঁর অফিসে এক ব্যক্তিগত বৈঠক করেন রাষ্ট্রদূত কিসলিয়াকের সঙ্গে। এবং এর আগে গ্রীষ্মেও তাদের আরেকবার কথা হয়েছে।

জেফ সেশন্স এই বৈঠক করেছিলেন এমন এক সময়ে, যখন তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন তাঁর একজন মুখপাত্র হিসেবে।

অথচ অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার আগে সেনেটে যখন তার শুনানি চলছিল, তখন এরকম কোন বৈঠকের খবর তিনি অস্বীকার করেছিলেন।

এই শুনানিতে একজন সেনেটর আল ফ্রাংকেন তাকে সরাসরি প্রশ্ন করেন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে। সেনেটর আল ফ্রাংকেন তার কাছে জানতে চান, যদি এমন প্রমাণ পাওয়া যায় যে নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্পের টিমের কেউ রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করছিল, তখন তিনি কী করবেন?

জবাবে তখন জেফ সেশন্স বলেছিলেন, ‘সেনেটর ফ্রাংকেন, আমি এরকম কোন তৎপরতা চলেছে বলে জানি না। যখন নির্বাচনী প্রচারণা চলেছে তখন আমাকে দু একবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমার সঙ্গে রুশদের কোন রকমের যোগাযোগ হয়নি। কাজেই এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারবো না।’

ওয়াশিংটন পোস্ট, যারা এই খবরটি ফাঁস করেছে, সেই পত্রিকার সিকিউরিটি করেসপন্ডেন্ট গ্রেগ মিলার বলছেন, জেফ সেশন্স যে রাশিয়ার দূতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই, অথচ তিনি যে সেই বৈঠকের কথা মনে করতে পারছেন না তা খুবই অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার।

গ্রেগ মিলারের কথায়, ‘এটা ভাবতেও অবাক লাগছে যে তিনি এই সাক্ষাতের কথা ভুলে গেছেন। অথচ সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা যখন চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছেছে তখন তাদের এই সাক্ষাৎ হয়েছিল।’

‘যখন কিনা প্রতিদিনই মিডিয়ার শিরোনাম জুড়ে থাকছে রাশিয়া কীভাবে এই নির্বাচনে নাক গলানোর চেষ্টা করছে, কীভাবে এই নির্বাচন রাশিয়ার দিক থেকে সাইবার হামলার শিকার হচ্ছে। আর সেরকম এক সময়ে, একজন সেনেটর, যিনি পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল হবেন, তিনি তার অফিসে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ব্যক্তিগত বৈঠক করছেন!’

এই খবর ফাঁস হওয়ার পর ওয়াশিংটনে আবার হৈ চৈ চলছে, অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য মিস্টার সেশন্সের ওপর চাপ বাড়ছে।

ডেমোক্রেটরা বলছে, জেফ সেশন্স তার দায়িত্বে বহাল থাকলে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের ব্যাপারে কোন নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব নয়।

ওয়াশিংটন পোস্টের গ্রেগ মিলার মনে করেন, জেফ সেশন্সের পক্ষে এই তদন্তে আর কোনোভাবেই যুক্ত থাকা সম্ভব নয়।

গ্রেগ মিলার বলছিলেন, ‘তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও বিচার বিভাগ চালান, তিনি এফবিআই চালান। ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় যা ঘটেছে তার তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে এফবিআই। আর জেফ সেশন্স প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যেরকম ঘনিষ্ঠ লোক। রাশিয়ার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে নানা কথা ভেসে বেড়াচ্ছে।’

‘কাজেই এখানে যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব, তাতে তিনি কিন্তু চাপের মধ্যে আছেন এই তদন্তে যেন না জড়ান। অথচ এখনো পর্যন্ত তিনি তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আমার তো মনে হয় তার পক্ষে এই তদন্তের দায়িত্বে থাকা কঠিন হবে।’

ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার সাথে তাদের সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ককে যতই পেছনে রাখতে চাইছে, ততই যেন আরও বেশি করে এতে জড়িয়ে পড়ছে।

এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ফ্লিনকে পদত্যাগ করতে হয়েছে একই কেলেংকারিতে জড়িয়ে।

পদত্যাগের জন্য যেভাবে জেফ সেশন্সের ওপর চাপ বাড়ছে, তাতে তিনি কতদিন টিকে থাকতে পারবেন, সেটা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সূত্র: বিবিসি

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।