চুরির অভিযোগে ২ কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

ক্রাইমবার্তা রিপোট:ছাগল চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছেন আব্দুল মোতালেব নামে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য ও তার সহযোগীরা। 7

বুধবার দুপুরে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আন্দুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতিত ওই দুই কিশোর হল- উপজেলার হাড়িয়াপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে জার্জিস হোসেন (১৫) ও পলাশবাড়ি গ্রামের সেকু আলীর ছেলে রতন আলী (১৪)। তারা উপজেলার আমগাছী সাহারবাণু উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।

স্থানীয়রা জানান, চুরির অভিযোগে কথিত গ্রাম্য সালিশে আন্দুয়া গ্রামের ওই ইউপি সদস্য দুই কিশোরকে পিটিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি, তাদের পরিবারের কাছ থেকে আদায় করেছেন নগদ ১৬ হাজার টাকা।

জরিমানার এ টাকা তিনি নিজের পকেটেই পুরেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই সালিশ বৈঠকে ঝালুকা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মণ্ডল ও ইউপি সদস্য মির্জা আব্দুল লতিফও উপস্থিত ছিলেন।

বুধবার রাতে সালিশে ওই দুই কিশোরকে নির্যাতনের একটি ভিডিও এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দিনগত রাতে জার্জিস ও রতন আন্দুয়া গ্রামের রেজাউল করিমের বাড়ি থেকে একটি ছাগল চুরি করে বলে অভিযোগ করেন ছাগলের মালিক।

ভোরে মতিহারের হরিয়ান বাজার দিয়ে যাওয়ার সময় বাজারের নৈশপ্রহরীরা ছাগলসহ যেতে দেখে সন্দেহ হলে ওই দুই কিশোরকে আটক করে। পরে তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে আন্দুয়া গ্রামে খবর দিলে সকালে ইউপি সদস্য আব্দুল মোতলেব তাদের নিজ জিম্মায় ছাড়িয়ে আনেন।

এরপর বুধবার দুপুরে ছাগল মালিক রেজাউলের বাড়ির পাশে সালিশ বসানো হয়। সালিশ বৈঠকে ওই দুই কিশোরকে গাছে বেঁধে বেধড়ক পেটানো হয়।

পরে তাদের পরিবারের লোকজনকে ডেকে পাঠানো হয়। তারা এলে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

জরিমানার এ টাকার মধ্যে আড়াই হাজার টাকা ছাগল মালিককে দেয়া হয়। বাকি টাকা নিজের কাছেই রেখে দেন ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেব।

এরপর ওই দুই কিশোরকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নির্যাতিত ওই দুই কিশোরের পরিবার জানায়, অল্প বয়সী ওই কিশোরেরা ভুল করতেই পারে। তাই বলে তাদের গাছে বেঁধে নির্মমভাবে পেটানো ঠিক হয়নি।

এ ব্যাপারে ওই কিশোরদের পরিবার আইনের আশ্রয় নেবে বলেও জানিয়েছে।

নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেব বলেন, ছাগল চুরির কথা প্রথমে তারা স্বীকার না করায় গাছে বেঁধে রাখা হয়।

তবে তাদের নির্যাতন করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।

জরিমানার ১৬ হাজার টাকা কার কাছে আছে জানতে চাইলে আব্দুল মোতালেব বলেন, আড়াই হাজার টাকা ছাগল মালিককে দেয়া হয়েছে। আর বাকি টাকার মধ্যে কিছু টাকা দুই চোরকে ধরতে সাহায্যকারীরা পেয়েছেন। আর বাকি টাকা গ্রামের মসজিদে দান করা হয়েছে।

সালিশে উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মণ্ডলের সঙ্গে পরামর্শ করেই এসব করা হয়েছে বলেও জানান আব্দুল মোতালেব।

যোগাযোগ করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মণ্ডল জানান, তিনি ব্যস্ত আছেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে পারবেন না।

দুর্গাপুর থানার ওসি রুহুল আলম জানান, এখন পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিয়োগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please follow and like us:

Check Also

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১৩

ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।