আর্টিকেল ৫০ অনুযায়ী ব্রেক্সিটের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু

ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অবশেষে সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করল ব্রিটেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বুধবার সকালে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর ব্রাসেলসে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক সেই চিঠি পাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ৯ মাস ৯ দিন পর ব্রিটেন আনুষ্ঠানিকভাবে জানালো যে, তারা সত্যিই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। বলেন, ‘আজ থেকে আমরা বাকি ২৭টি ইউনিয়নভুক্ত দেশ আরো বেশি একত্রিত হবো।’27
গত বছর ২৩ জুন গণভোটের ভিত্তিতে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ৩০ মিলিয়ন ভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে ছিল ৫১.৯ শতাংশ ভোট, আর বিপক্ষে ছিল ৪৮.১ শতাংশ ভোট।
মূলত অভিবাসীদের অবাধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতেই ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্ত। তার পাশাপাশি ব্রিটেন জোর দিতে চাচ্ছে মুক্ত বাণিজ্যের দিকে। নিজেদের ঐহিত্য সুমহান রাখতেই ব্রিটেনের এই অন্তঃমুর্খী মনোভাব।
চিঠি প্রেরণের পর পালার্মেন্টে বক্তব্য দেয়ার সময় থেরেসা মে বললেন, আমাদের জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এটা একটা ঐতিহাসিক পরিবর্তন। আমাদের ভবিষ্যত-প্রজন্মের জন্য এই কঠিন সিদ্ধান্তটি আমাদের নিতে হয়েছে। যুক্তরাজ্যের একতার জন্য এটা জরুরী। আমি যুক্তরাজ্যের প্রতিটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবো।
কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান তার বক্তব্যে প্রকাশ করলেন ব্যথার সুর। ডোনাল্ড টাস্ক বললেন, এটা আমাদের জন্য আনন্দের মুহূর্ত নয়। আমাদের অন্যতম প্রধান মিত্র আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ইউরোপীয়ন ইউনিয়ন গঠনের ৬০ বছর পর এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটলো, প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে ব্রিটেন।
থেরেসা মে অবশ্য চিঠিতে এবং পরবর্তীতে তার বক্তব্যে জানিয়েছেন, আমরা ইউরোপ ছেড়ে চলে যাচ্ছি না, আমরা শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক গোত্র থেকে সরে যাচ্ছি। এর মানে এই নয় যে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। বরং আমাদের বন্ধুত্ব আরো দৃঢ় হবে।
থেরেসা মে যাই বলুক, ব্রেক্সিট-পরবর্তী ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থা কী হবে তা নিয়ে সবাই বেশ চিন্তিত। অনেকে বলছে এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক কতৃত্ব চলে যাবে জার্মানির হাতে। জার্মান চ্যান্সেলন এঙ্গেলা মেরকেল জানিয়েছেন, ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিকটতম বন্ধু। তারা যেমন ছিল তেমনই থাকবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের সস্পর্ক নষ্ট হবে না।
তবে, ব্রিটেন চাইলে আর্টিকেল-৫০’র সূত্র অনুযায়ী আগামী দুবছরের মধ্যে আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফিরতে পারে। আনুষ্ঠানিকভবে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করবে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে। এ দু’বছর আর্টিকেল-৫০ অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ত্যাগের কার্যক্রম প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। দু’পক্ষই যার যার জায়গা থেকে চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে নানা শর্ত পুরণ করবে।
ব্রিটেনের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা জ্যারেমি করবিন ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু না বললেও জানিয়েছেন, তারা এখন থেকে সবকিছু নজরে রাখবেন। আর সরকার দলের মন্ত্রীরা এখনো ঠিক করতে পারছেন না যে তারা কী করবেন। তাদের নিজেদের মধ্যেও ঐক্যবদ্ধ হওয়াটা খুব জরুরি।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।