বিদেশী প্রভুরা ঐতিহ্য ভুলিয়ে দেয়ার ফন্দি ফিকির করছে : খালেদা জিয়া

ক্রাইমবার্তা রিপোট:পয়লা বৈশাখে ১৪২৪ বাংলা নববর্ষের উৎসবমুখর দিনে দেশ-বিদেশের সব বাংলাদেশীদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, দীর্ঘকাল ধরে গড়ে ওঠা ভাষা ও কৃষ্টির জমাট মোজাইককে ভেঙে ফেলার জন্য বিদেশী আধিপত্যবাদী প্রভুরা সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। স্বজাতির ইতিহাস ভুলিয়ে দেয়ার জন্য চলছে নানা ফন্দি ফিকির।

 

 

আজ বৃহস্পতিবার এক শুভেচ্ছা বাণীতে খালেদা জিয়া বলেন, আবহমানকাল ধরে নুতন আঙ্গিক, রূপ, বর্ণ ও বৈচিত্র নিয়ে জাতির জীবনে বার বার ঘুরে আসে পয়লা বৈশাখ। অনন্তকাল ধরে গড়ে ওঠা আমাদের ভাষা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অহঙ্কার মিশে থাকে নতুন বছরের শুভাগমনে। আমাদের হৃদয়ে উদ্ভাসিত হয় দেশমাতৃকার অতীত গৌরব ও ঐশ্বর্য। আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিশালত্ত্ব, শাশ্বত প্রাচীনতা পবিত্র এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ, তাই পয়লা বৈশাখের এদিনে এক উদ্দীপ্ত প্রেরণায় জেগে উঠে জাতির আত্মপরিচয়। প্রতিবছর নববর্ষ হিরন্ময় অতীতের আলোকে সম্মুখ পানে, অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে তাগিদ দেয়।

তিনি বলেন, নানা ঘটনা ও দূর্ঘটনার সাক্ষী ১৪২৩ সালের চৌকাঠ ডিঙিয়ে ১৪২৪ সালের প্রভাতে অজানা কাল-প্রাঙ্গনের সীমানায় আমরা উপস্থিত হয়েছি। গত বছরের দুঃখ, অবসাদ, ক্লান্তি, হতাশা ও গ্লানিকে অতিক্রম করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা নিয়ে এসেছে বাংলা নববর্ষ। যা আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। বাংলা সন-তারিখ আমাদের প্রাত্যহিক জীবন, দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অপরিহার্য অনুষঙ্গ, তাই এটি জাতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বেগম জিয়া বলেন, সূদীর্ঘকাল ধরে গড়ে ওঠা ভাষা ও কৃষ্টির জমাট মোজাইককে ভেঙে ফেলার জন্য বিদেশী আধিপত্যবাদী প্রভুরা সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। স্বজাতির ইতিহাস ঐতিহ্যকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য চলছে নানা ফন্দি ফিকির। বর্তমানে দেশজুড়ে চলছে এক ভয়াবহ দুর্দিন। তাই দেশের এই চরম সঙ্কটকালে আমাদের ভাষা, সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্য সকল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষে মানুষে শুভেচ্ছাবোধ ও সহমর্মিতা গণতন্ত্রের সারবত্তা, নানা মত ও পথের বৈচিত্রে ভরা বহুমাত্রিকতা আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির অন্তরাত্মা। সেই গণতন্ত্রকে রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে বিদায় করে দেয়া হয়েছে- একমাত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য। এ বছরের প্রথম দিনে আমি সবার কল্যাণ কামনা করি। নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে প্রবাহিত হোক শান্তির অমিয় ধারা, সবার জীবন হয়ে উঠুক সমৃদ্ধময়। আমাদের উৎসবের প্রাঙ্গন ভরে উঠুক মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ও ভালবাসায়, বৈশাখের বহ্নিতাপে সমাজ থেকে চিরতরে বিদায় হোক অসত্য, অন্যায়, অনাচার ও অশান্তি। নববর্ষের এই নতুন সকালে মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে সকলের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং জাতীয় সব পর্যায়ে সুখ ও শান্তি কামনা করি।

নৃগোষ্ঠীদের নববর্ষ উৎসবে শুভেচ্ছা
এছাড়া বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের নানা নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সর্ববৃহৎ সামাজিক ও জাতীয় উৎসব-বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু ও চাংক্রান-২০১৭ ও বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ উপলক্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিবাদন জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এই উৎসব ওই এলাকার বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিকাশে সহায়তা করে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমান কাল থেকে প্রত্যেক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী আনন্দঘন মুহূর্তের মধ্যে উৎসবগুলো পালন করে থাকে। হাজার বছর ধরে বাংলাদেশে নানা ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও জাতীগোষ্ঠী নির্বিশেষে মিলেমিশে একসাথে বাস করে আসছে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শন দেশের সব জনগোষ্ঠীকে একত্রিত করে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মধ্যেই কেবল দেশের সব নৃ-গোষ্ঠীর অভিন্ন সমতার ভিত্তিতে নাগরিক মর্যাদা নিশ্চিত হয়। বর্তমানে বাংলদেশের বিদ্যমান রাজনীতিতে গণতন্ত্র অনুপস্থিত, দেশে উন্নয়নের নামে চলছে একনায়কতন্ত্র। এ প্রতিকূল পরিবেশেও উৎসবের আনন্দ আমাদের সবাইকে ভাগ করে নিতে হবে।

এদিকে ভিন্ন এক বিবৃতিতে পয়লা বৈশাখে ১৪২৪ বাংলা সনের প্রথম দিনে প্রথম প্রভাতে অগণিত সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষ আমাদের জাতীয় জীবনের এক উজ্জল আনন্দময় উৎসব। এই উৎসব সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের অধিকারী। পয়লা বৈশাখ থেকেই শুরু হয় নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার আকুলতা। নতুন বছর মানেই অতীতের সব ব্যর্থতা, জ্বরাজীর্ণতা পেছনে ফেলে নতুন উদ্দীপনা ও উৎসাহে সুন্দর সমৃদ্ধ আগামীর বিনির্মাণে এগিয়ে যাওয়া।

অনুরূপভাবে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের নানা নৃ-গোষ্ঠী সমূহের ঐতিহ্যবাহী সর্ববৃহৎ সামাজিক ও জাতীয় উৎসব-বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু ও চাংক্রান-২০১৭ ইং ও বাংলা নবর্বষ ১৪২৪ বঙ্গাব্দ উপলক্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান মির্জা ফখরুল।

 

Please follow and like us:

Check Also

অনিশ্চয়তার নতুন যুগে মধ্যপ্রাচ্য

ইউক্রেন-রাশিয়া রেশ কাটতে না কাটতেই ফিলিস্তিনের গাজায় শুরু হয় ইসরাইলি আগ্রাসন। এরপর থেকে অশান্ত হতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।