মাকে একটু ছুতে ইচ্ছে করছিল বৃষ্টি আর চোখের পানিতে একাএকার হয়ে গেল আবেগের মিলন মেলা

ক্রাইমবার্তা রিপোট:মো. আনোয়ার হোসেন আকাশ,, রাণীশংকৈল প্রতিনিধি ঃ বাংলার নব-বর্ষ বৈশাখ উপলক্ষে বিজিবি-বিএসএফের বাধা উপেক্ষা করে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার দুই পাশে আবেগের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও রাণীশংকৈল উপজেলার জগদল সীমান্তের ৩৭৪ ধর্মগড়ের ৩৭৩, হরিপুরের ৩৭২, ডাবরি ৩৬৯ পিলার সংলগ্ন নোম্যান্সল্যান্ড’র নাগর নদীর পারে দুই বাংলার মিলন মেলা হয়েছে। মাঝখানে দাঁড়িয়ে কাঁটাতার দু’পাশে দুই দেশের হাজার মানুষের মাঝে মা-মেয়ে। চোখে অশ্রু ধারা মনে হচ্ছিল মাকে একটু ছুয়ে দেখি তা- আর হয়না। 14
বাঙালীর প্রাণের উৎসব নববর্ষের আনন্দটায় যেন এপার-ওপার বাংলার হাজারো বাঙালীকে একত্রিত করেছে। একটু দেখতে, মনের দু’টো কথা বলতেই যেন ছুটে আসা। কারণ বুক ভরা আশা থাকলেও মা মেয়েকে, বাবা ছেলেকে বা কেউ কাউকে বুকে জড়িয়ে ধরে একটুৃ আত্ম তৃপ্তি পাবে।
প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ এলেই ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত পিলারের কাছে উভয় দেশের মানুষ তাদের স্বজনদের এক পলক দেখার জন্য দুর দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন। উভয় দেশের আত্মীয় স্বজনদের মাঝে মুঠোফোনের মাধ্যমেই আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে নেন।
নাটোর জেলার লতা রাণী (৫৫) এসেছেন পশ্চিম দিনাজপুর জেলায় থাকা মেয়ে নাতি জামাইয়ের সাথে দেখা করতে। কথা হয়েছে, দেখা হয়েছে কিন্তু মা মেয়েকে একটু জড়িয়ে ধরে মনের আবেগটুকু প্রকাশ করতে পারেননি। এ বড়ই কষ্টকর বেদনাদায়ক বাবা এসব হয়েছে কাঁটাতারের বেড়ার জন্য। দিনাজপুরের আঃ রহিম বললেন, এক রক্ত, এক বংশ তবুও আলাদা। নিজের মানুষকে দেখবো কথা বলবো তাতে জটিলতা। এভাবে কি শান্তি পাওয়া যায় ! এটা কেন সহজ করা হয়না !
দির্ঘদিন পর একত্রিত হয়ে কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখা হয় কথা বিনিময় হয় কিন্তু কেউ কাউকে একটু ছুতে পারেনা। মায়া মমতা ভরা স্বজনদের। তাইতো অনেকেই আবেগে ফেটে পড়েন।
দেখা কথা বলার মাঝেই উভয় দেশের আত্মীয় স্বজনদের জন্য আনা উপহারটি কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে ছুড়ে দেয়। অনেক সময় নিজের লোকটি পায় আবার অনেক সময় এসব উপহার সামগ্রী দুস্কৃতি প্রকৃতির লোকেরা নিয়ে পালিয়ে যায়।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) একমত হয়ে সীমান্তের জিরো ভৌগলিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে দুই দেশের মানুষের কথা বলাবলি চোখে দেখা হয়। যে যেভাবে পারেন কথা সেরে নিতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই আকাশে নেমে এলো বৃষ্টি আর বাতাস চলে এলো। সব এলোমেলো করে দিলো সব প্রস্তুতি। বৃষ্টি আর চোখের পানিতে একাকার হয়ে গেল। ঝড়ো বাতাস আর বৃষ্টির পানিকে উপেক্ষা করেই মানুষ আলাপ চালাতে থাকে। মানুষের প্রাণের এই মিলন মেলায় বৃষ্টি আর বাতাস হার মানাতে পারেনি তাদের হৃদয়ের টানকে। বৃষ্টিতে ভিজেই তারা অনায়াসে দেখা সাক্ষাত কথা বিনিময় নিজের লোকের জন্য নিয়ে যাওয়া উপহার দেওয়া নেওয়ার কাজ সেরে নেয়।
রাণীশংকৈল উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আইনুল হক মাষ্টার বলেন, ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভক্তির আগে ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত ছিল। এ কারণে দেশ বিভক্তির পর আত্মীয় স্বজনরা দুই দেশে বসবাস করছেন। সারা বছর কেউ কারো সাথে দেখা করতে পারে তাই এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেন।

Check Also

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। জুড়ী উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।