১৩ বছরের কিশোরীকে ১৭ দিন আটকে রেখে ধর্ষণ

ক্রাইমবার্তা রিপোট:রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ১৩ বছরের এক কিশোরীকে ১৭ দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়েছে। ৪০ বছর বয়সী ওই ধর্ষকের নাম মো. বাবুল। সে তিন সন্তানের জনক। তার বড় মেয়ের বয়স ১০ বছর। এছাড়া আড়াই বছর বয়সী এক ছেলে ও ৭ মাস বয়সী এক মেয়ে আছে। এদিকে কিশোরীকে ধর্ষণে সহযোগিতা করেছে খোদ বাবুলের স্ত্রী সুমাইয়া বেগম (৩৫)। চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণের অভিযোগে বাবুল ও সুমাইয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে বাবুলকে। ছোট্ট তিনটি শিশুর কথা বিবেচনা করে সুমাইয়াকে গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, বাবুল এরই মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তবে স্বীকারোক্তিতে বাবুল ওই কিশোরীকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেছে। কিন্তু এর সপক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি সে। এদিকে বাবুলকে গ্রেফতারের পর তার স্ত্রী সুমাইয়া এখন সন্তানদের নিয়ে পলাতক রয়েছে।

ধর্ষিত কিশোরীর বড় বোন (যাত্রাবাড়ীর ভাঙ্গাপ্রেস এলাকার বাসিন্দা) বলেন, ‘আমার ছোট বোন বাসা-বাড়িতে কাজ করত। ১ এপ্রিল কাজলা বৌবাজার এলাকার সুমাইয়া বেগম আমার বোনকে ৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ দেয়ার কথা বলে তার বাসায় (স্কুল গলির নুরু মিয়ার টিন শেড বাড়ি) নিয়ে যায়। ওই দিন রাতে সুমাইয়া তার স্বামী বাবুলের সঙ্গে আমার বোনকে ঘুমাতে বলে। আমার বোন রাজি না হলে সুমাইয়া তাকে ধমক দেয়। তার (সুমাইয়ার) স্বামী আমার বোনকে কিছু করবে না বলে আশ্বস্ত করে। রাত ২টার দিকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানোর সময় আমার বোনের ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় আমার বোন চিৎকার করলে বাবুল তাকে ভয় দেখিয়ে দু’দফা ধর্ষণ করে। বিষয়টি জানা বা দেখার পরও সুমাইয়া তার স্বামীকে বাধা দেয়নি বা কিশোরীর সম্মান রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। উপরন্তু বিষয়টি নিয়ে আমার বোনকে চুপ থাকতে বলে।’ ওইদিন রাতে ঘুমানোর আগে কিশোরীকে তিনটি ট্যাবলেট খাওয়ানো হয় বলেও তার বড় বোন জানান।

কিশোরীর বাবা বলেন, ‘ঘটনাটি কাউকে বললে আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। পাশাপাশি মেয়েকে ওই বাসায় আটকে রাখা হয়। পরে ৩ এপ্রিল আমার মেয়েকে জোর করে একটি কাজী অফিসে নিয়ে বিয়ে করে বাবুল। এরপর ফের তাকে (কিশোরী) বাবুলের বাসায় নিয়ে যায়। পরে আরও কয়েকদিন ওই বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণের পর ১৭ এপ্রিল তাকে (কিশোরী) বের করে দেয়। ওইদিনই আমার বড় মেয়ের বাসায় গিয়ে সে ঘটনাটি জানায়। আমার বড় মেয়ে আমাকে বিষয়টি জানালে আমি ভোলা থেকে ঢাকায় আসি। ১৮ এপ্রিল থানায় মামলা করি।’

কিশোরীর গ্রামের বাড়ি ভোলা সদরের কোরালিয়া গ্রামে। বাবা কৃষক। মা গৃহিণী। তার কোনো ভাই নেই। পাঁচ বোনের মধ্যে সে চতুর্থ। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আনিছুর রহমান জানান, ধর্ষক বাবুলের গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন থানার ফারসগঞ্জ গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল বাশার। বাবুল যাত্রাবাড়ীতে একটি আইসক্রিম ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে। ওসি জানান, মামলা করার দিনই বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন সে আদালতে স্বীকারোক্তি দিলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। বাবুলকে গ্রেফতারের দিন সুমাইয়াকেও গ্রেফতার করা যেত। কিন্তু তিন শিশু সন্তানের দিকে তাকিয়ে মানবিক বিবেচনায় তাকে তখন গ্রেফতার করা হয়নি। এখন তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার এসআই আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে সুমাইয়া জানিয়েছিল ওই কিশোরী তার স্বামীর স্ত্রী। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র, এমনকি কাজী অফিসের রিসিটও দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে বাবুল ও সুমাইয়া। এসআই আরও জানান, কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।

 

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।