গণভোট চালু ও বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করা হবে : খালেদা জিয়া

ক্রাইমবার্তা রিপোট::বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে আবার গণভোট চালু এবং ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে রূপকল্প ২০৩০ নিয়ে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে বক্তৃতা শুরু করেন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়া বলেন, প্রবীণদের পেনশন দেয়া হবে। বেসরকারি পর্যায়ে পেনশন ফান্ড গড়ে তোলা হবে। বিশেষ ভাতা ব্যবস্থা দুর্নীতিমুক্ত করা হবে। অতি স্বল্প আয়ের মানুষের ভাগ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি বিদ্যুৎ সরবরাহ, পানীয় জলের সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবাসহ সব সেবার মান উন্নত করবে। মুসলিম উম্মাহ ও প্রতিবেশী দেশের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা হবে। অন্য কোনো রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ করলে তা প্রতিরোধ করবে। বিএনপি অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে না।
প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক, যুগোপযোগী ও সর্বোচ্চ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে তোলা হবে। যুগোপযোগী জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। পুলিশ বাহিনীকে স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সালিশী আদালত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায় কি-না তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। সুপ্রিম কোর্টের অধীন পৃথক সচিবালয় করা হবে। বিচার বিভাগের কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠা করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বাতিল করা হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অবসান হবে। সব ধরনের কালাকানুন বাতিল করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নাগরিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদায় বিশ্বাসী। মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র তুলে ধরতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিএনপি বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক বিধান প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে। জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।

দলের শীর্ষ নেতারা ছাড়াও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শীর্ষ নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আছেন।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আছেন। সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ ২১টি দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন।

 

 

খনই ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা নিয়ে দলে প্রশ্ন

১৫-৪০ বছর বয়সীদের আকৃষ্ট করতে চায় বিএনপি

 

বিএনপিবিএনপি১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী কিশোর, তরুণ ও যুবকদের আকৃষ্ট করতে ‘ভিশন ২০৩০’-এ একগুচ্ছ অঙ্গীকার করছে বিএনপি। এ ছাড়া রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনার অঙ্গীকারও এতে থাকবে।
রাজধানীর একটি হোটেলে আজ বুধবার বিকেলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘ভিশন ২০৩০’ নামের এই রূপকল্প তুলে ধরার কথা রয়েছে।
অবশ্য রূপকল্পটি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গত সোমবার রাতে উত্থাপন করা হলে এখনই রূপকল্প দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কয়েকজন সদস্য। তাঁদের প্রশ্ন, এখনই কেন রূপকল্প দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া এ নিয়ে দলীয় ফোরামে আগে আলোচনা না হওয়ায় কোনো কোনো সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে সেখানে উপস্থিত একাধিক নেতা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তবে বৈঠকে এটি অনুমোদন করা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিনজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির রূপকল্পে তরুণ-যুবকদের আকৃষ্ট করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানো, নতুন সেবা আনা, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষা, বাংলাদেশের তরুণদের জন্য বিদেশ উচ্চশিক্ষার জন্য তহবিল করা, ছেলেদের জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা, মেয়েদের উপবৃত্তি সম্প্রসারণ করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচন করার মতো বিষয়গুলো রাখা হচ্ছে।
এর কারণ হিসেবে বিএনপির নেতারা বলছেন, বর্তমান ভোটারের তরুণ অংশ এবং আগামী দিনের ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চায় বিএনপি। ২০১৯ সালের পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির ক্ষমতার বাইরে থাকা ১২ বছরে এসে দাঁড়াবে। ফলে তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে না পারলে তাঁদের ভোট পাওয়া কঠিন হবে। বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে এবং তরুণদের চিন্তা-স্বপ্নকে মাথায় রেখে রূপকল্পে এ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া রূপকল্পে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও সরকার পরিচালনায় বিএনপির ভাবনা তুলে ধরা হবে। জাতীয় সংসদকে কার্যকর করা, প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, পুলিশ, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনার অঙ্গীকার, নারীর ক্ষমতায়ন, উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকার, পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিল্প, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আবাসনসহ বিভিন্ন খাতভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়ে দলের ‘ভিশন ২০৩০’ তুলে ধরবে বিএনপি। তাদের ভাষায়, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি এগুলো বাস্তবায়ন করবে। সংস্কার ও বিভিন্ন খাতওয়ারি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার স্বপ্নের কথাও এতে থাকছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি যে ভিশন তুলে ধরতে যাচ্ছে তা বাস্তবায়ন করা গেলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। প্রবৃদ্ধির হার হবে ৮ থেকে ৯ শতাংশ। এটার ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও জোরদার হবে।
এখনই রূপকল্প দেওয়া নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে প্রশ্ন
বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, দলটির এই ভিশন তৈরি করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির দু-তিনজন সদস্যের ভূমিকা ছিল। তাঁরা এর আগে চেয়ারপারসনের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেছিলেন। অন্যরা ছিলেন অন্ধকারে। এটি নিয়ে নেতাদের একটি অংশের ক্ষোভ আছে। এর রেশ ছিল স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুরো প্রায় ৪০ পাতার ভিশনটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। গত সোমবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে শুরু হয়ে দেড়টায়ও আলোচনা শেষ করা যায়নি। বৈঠক শেষ না করে মুলতবি করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে আবার মুলতবি বৈঠক হয়। তবে গতকালের বৈঠকে সবাই উপস্থিত ছিলেন না।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে একজন সদস্য প্রশ্ন তোলেন, এখন কেন এই ভিশন তুলে ধরা হচ্ছে? এটি নির্বাচনের আগে তুলে ধরা হলে ভালো হতো। কমিটির সদস্যদের আগে খসড়া সরবরাহ না করে হঠাৎ এটি চূড়ান্ত করতে বৈঠক ডাকা কতটুকু যৌক্তিক, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কয়েকজন সদস্য। তাঁরা অভিযোগ করেন, এ বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কিছু জানেন না। দলের মহাসচিব এর জবাবে বলেন, এটি নিয়ে আগে একটি বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল।
সংসদ কার্যকরে ৯ প্রস্তাব
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সংসদকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান করতে ৯টি প্রস্তাব থাকবে। এর মধ্যে আছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতি পদে সংখ্যানুপাতে বিরোধী দলের সদস্যদের দেওয়া হবে। স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়া হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও সরকারি হিসাব-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দেওয়া হবে বিরোধী দল থেকে। বিরোধী দলের আনা মুলতবি প্রস্তাব বা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রস্তাবসমূহ গ্রহণ এবং আলোচনা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, বিরোধী দলের প্রতি উপযুক্ত সম্মান ও সহনশীলতা দেখানো হবে, দ্বিদলীয় রাজনৈতিক চর্চা চালু করা, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। জাতীয় সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার প্রস্তাবে বেশির ভাগ সদস্য বিরোধিতা করেছেন।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।