ভাগ্যবানদের তালিকায় আর একজন

ভাগ্যবানদের তালিকায় আর একজ
 ক্রাইমবার্তা রিপোট    ০৩ জুন ২০১৭,শনিবার, 

নিখোঁজ হওয়ার পর আর একজন ফিরে এসেছেন। ভাগ্যবান এই যুবক হলেন ডাক্তার ইকবাল মাহমুদ। ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা থেকে অপহরণ করা হয় ইকবালকে। সেই থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। গত বুধবার রাতে কে বা কারা তাকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার নতুন গরুহাটা এলাকায় রেখে যায়। এভাবে আরো কয়েকজন মাসের পর মাস নিখোঁজ থাকার পর ফিরে এসেছেন। তাদেরকে ফিরে পেয়ে আনন্দে উদ্বেল স্বজনেরা। তবে কারা তাদেরকে নিয়ে গিয়েছিল, কোথায় রেখেছিল, কেন নিয়ে গিয়েছিল সে রহস্য উদঘাটিত হচ্ছে না। সব কিছুর পরেও তাদেরকে ফিরে পেয়ে খুশি পরিবার-পরিজন। এখনো অনেকেই রয়েছেন যারা বছরের পর বছর নিখোঁজ। তাদের উদ্ধারের ব্যাপারে পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা চাইলেও কোনো অগ্রগতি নেই। অনেকের পরিবার এখন শুধু লাশটি ফেরত চান। আর অনেকে তো কাছের মানুষটির লাশ ফিরে পাওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছেন।
এর আগে গত ৩ মার্চ ফিরে এসেছেন বিএনপি নেতা হুমাম কাদের চৌধুরী। ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট রাজধানীর আদালতপাড়া থেকে তুলে নেয়া হয় মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুমাম কাদের চৌধুরীকে। ৩ মার্চ ভোরে তিনি ফিরে আসেন। কে বা কারা তাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেলে সেখান থেকে তিনি বাসায় ফেরেন।225290_134
২০১৪ সালের ১৬ এপ্রিলের ঘটনা। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডের দেলপাড়া এলাকার ভূঁইয়া ফিলিং স্টেশন এলাকা থেকে অপহৃত হন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক। ওই বছরের ১৮ এপ্রিল মিরপুর কাজীপাড়া এলাকায় কে বা কারা তাকে ছেড়ে দিয়ে যায়। এ ঘটনায় আবু বকর সিদ্দিকের স্ত্রী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করলেও কে বা কারা আবু বকর সিদ্দিককে অপহরণ করেছিল সে সম্পর্কে কোনো রহস্য আজো উদঘাটন হয়নি।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ একদল অচেনা লোক উত্তরার ভাড়া বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় বিএনপির তৎকালীন মুখপাত্র সালাহ উদ্দিনকে। প্রায় দুই মাস পরে ভারতের শিলং থেকে উদ্ধার করা হয় সালাহ উদ্দিনকে। কে বা কারা সালাহ উদ্দিনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সেই রহস্য আজো অজানাই রয়ে গেছে।
গত ১৬ মার্চ নিখোঁজ হন আইটি বিশেষজ্ঞ তানভির হাসান জোহা। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা চুরির ঘটনায় তিনি তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সহায়তা করে আসছিলেন। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পরে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। কয়েক দিন পরে বিমানবন্দর এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যায়।
ওই পরিবারগুলো খুশি তাদের হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের ফিরে পেয়ে। কিন্তু অনেক মানুষ নিখোঁজের পর তাদের কোনো হদিসই মিলছে না। দিন গড়িয়ে মাস, মাস গড়িয়ে বছর; এভাবে বছরের পর বছর পার হয়ে যায়, কিন্তু প্রতীক্ষার পালা শেষ হয় না ওই পরিবারগুলোর।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে অপহৃত হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী। তার গাড়িচালক আনসার আলীকেও তুলে নেয়া হয়। এ ঘটনায় ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদি বনানী থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করে। ঘটনার পর তাহসিনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকার ও প্রশাসনের অনেকের সাথেই সাক্ষাৎ করে তার স্বামীকে উদ্ধারের দাবি জানান। কিন্তু চার বছরেও ইলিয়াস আলী উদ্ধার হননি।
২০১০ সালের ২৫ জুন রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড থেকে অপহৃত হন বিএনপি নেতা ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলম। ২৫ জুন রাত ৮টার দিকে ফার্মগেটের বাসায় যাওয়ার পথে তার গাড়ি থেকে নামিয়ে তাকে তুলে নেয়া হয়। এর পর থেকে তার কোনো হদিস নেই। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি লাকসাম বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও লাকসামের সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু ও লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজ, রাজধানীর দক্ষিণখানের ছাত্রদল নেতা নিজাম উদ্দিন মুন্না (২৪), ঝিন্টু (২৪), কোতোয়ালি থানা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান সেন্টু, বংশাল থানার সহসভাপতি সোহেল, ৭১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি মো: জহির ও সাধারণ সম্পাদক মো: পারভেজ, ৭২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহসভাপতি ও কোতোয়ালি থানা ছাত্রদলের সদস্য সাব্বির, বংশাল থানা ছাত্রদলের সদস্য মো: চঞ্চল, ৭১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সদস্য মো: কালু, সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সম্রাট মোল্লা, ৭৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি খালেদ হাসান সোহেল, ৭৮ নম্বর ওর্য়াডের সহসভাপতি আনিসুর রহমান ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো: বিপ্লব এবং ৮০ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ মিঠুকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। ছাত্রদল নেতা আসাদুজ্জামান রানা, মাযহারুল ইসলাম রাসেল ও আল আমিন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় পাঠাগার সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জিয়াউর রহমান, গোপালগঞ্জের বোড়াশী পশ্চিমপাড়ার মান্দারতলা এলাকার উবায়দুর, কাশিয়ানী উপজেলার দক্ষিণ ফুকরার মিল্টন বাজার এলাকার মাহবুব, আওয়ামী লীগ নেতা নুর মোহাম্মদ হাজী, তার জামাতা, নজরুল ইসলাম বাছা, ব্যবসায়ী হুমায়ুন, কামরাঙ্গীরচরের মাওলানা শামীম, ওয়ালি উল্লাহ, ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার, শ্রমিক হাবিবুর রহমান, ব্যবসায়ী আবদুল করিম হাওলাদার, রাজধানীর মিরপুরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কালাম শেখ, তার মামাতো ভাই আবুল বাশার শেখ, আবদুল করিম ও আতাউর রহমান ওরফে ইস্রাফিল, পুরান ঢাকা থেকে ব্যবসায়ী রেজাউল করিম রিজভি, সূত্রাপুর এলাকার ব্যবসায়ী তারিব উদ্দিন আহম্মেদ, শাহজাহানপুর থেকে দোকান কর্মচারী রফিকুল ইসলাম, জিন্দাবাহার লেন এলাকার ব্যবসায়ী আয়নাল মোল্লা, কামরাঙ্গীরচরের আবদুল আজিজ লেনের বাসিন্দা সুলতান হাওলাদার, রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, ফকিরেরপুলের হোটেল অবসরের সামনে থেকে ফেনীর সারোয়ার জাহান বাবুল, রাজধানীর সূত্রাপুর থেকে ব্যবসায়ী মমিন হোসেন, রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপা জামে মসজিদের ইমাম ও গোদাগাড়ী পালপুর ধরমপুর মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক আমিনুল ইসলাম, মালিবাগ থেকে অপহৃত ভোলার আরিফ, জসিম, জুয়েল, শেখ সাদী, দিদার, আকাশ ও মিরাজ, হাতিরপুল এলাকা থেকে নিখোঁজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও গবেষণা সম্পাদক শামীম হাসান সোহেল, মাসুম হোসেন, ঢাকার ফরাশগঞ্জ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন ব্যবসায়ী তাবির উদ্দিন আহম্মেদ রানা। রাজধানীর গেন্ডারিয়া থেকে নিখোঁজ তপন দাস। ৯৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তুষার ইসলাম টিটু, ফার্মগেটের ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী সুজন, ব্যবসায়ী জহির রায়হান হিরণ, ব্যবসায়ী হাজী ওয়াজি উল্লাহ, সিদ্ধিরগঞ্জের সানাপাড়ের ইউনুস মুন্সি, তার মামাতো ভাই শেখেন মাতবর, তাদের সঙ্গী হাফিজুল ইসলাম স্বপন, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার মোজাফফর, ব্যবসায়ী শহীদুর রহমান, সূত্রাপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো: মাসুদ, যাত্রাবাড়ীর গোলাম মুর্তাজা, বরিশালের করিম কুঠির এলাকার আলী হায়দার, বরিশালের জাগুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ওয়ার্ড বিএনপির সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন, বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা নান্না, ফরিদপুরের নগরকান্দার সোবহান এবং গাইবান্ধার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আল মুকাদ্দাস (২৩) ও ওয়ালিউল্লাহ (২৪), ঝালকাঠির রাজাপুর থানা যুবদল নেতা মিজানুর রহমান জমাদ্দার এবং তার দুই সহযোগী মুরাদ ও ফোরকান, মিজানের শ্যালক মিজান শিকদার এবং তার ভাতিজা সুমন, নজরুল ইসলাম বাছা, শ্রমিক হাবিবুর রহমান, ব্যবসায়ী আবদুল করিম হাওলাদার। ২০১৫ সালের ৫ মার্চ পল্লবী এলাকা থেকে নিখোঁজ হন পোশাকশ্রমিক আমিনুল ইসলাম। অনেকেই বলেছেন, হারানো স্বজনকে ফিরে পেতে তারা অপেক্ষা করছেন বছরের পর বছর।

Check Also

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইয়াছিন আলীকে গ্রেফতার করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।