স্ত্রীকে হত্যার পর থানায় স্বামীর আত্মসমর্পণ

ক্রাইমবার্তা রিপোট:রাজধানীর গুলশানে এক ভারতীয় নাগরিকের বাসায় রানী বেগম (৩৯) নামে এক গৃহকর্মীকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা করেছে তার স্বামী।

তাকে হত্যার পর স্বামী মিন্টু (৩৫) নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। শনিবার সকালে গুলশানের ৬৮নম্বর রোডের ১০নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

মিন্টুর আগের স্ত্রী গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগরে থাকেন। রানীর আগে স্বামী নাসির হাওলাদার রাজধানীর পুরান ঢাকায় থাকেন। সেখানে তার হার্ডওয়ারের দোকান আছে।

এদিকে রানী বা মিন্টু কেউই আগের স্বামী বা স্ত্রীকে তালাক দেননি।

মিন্টুর ধারণা, আগের স্বামীর সঙ্গে রানীর সম্পর্ক ছিল। তাছাড়া তার আরও পরকীয়া ছিল। এসব কারণে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রানীকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে মিন্টু।

পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল আহাদ জানান, রানী এবং মিন্টু মহাখালী দক্ষিণপাড়ার খ্রিস্টান সোসাইটির ১১৮/১৬ নম্বর বাড়িতে থাকতেন।

রানী ভারতীয় নাগরিক ও জাতিসংঘের অধীনস্থ আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থায় প্রধান প্রকৌশলী কিশোর কুমার সিংয়ের বাসায় কাজ করতেন।

আর মিন্টু গুলশানের ১১৬ নম্বর রোডের ৩২ নম্বর বাসার ডা. সৈয়দ মোস্তাকের গাড়ি চালান। দুইজনেই সকালে এক সঙ্গে মহাখালীর বাসা থেকে বের হন।

রানীকে বাইসাইকেলে করে ৬৮ নম্বর রোডের বাসায় নামিয়ে দিয়ে মিন্টু চলে যান ১১৬ নম্বর রোডের বাসায়। মাঝে মধ্যে মিন্টু নিজেও ৬৮ নম্বর রোডের ওই বাসার তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে যান। স্ত্রীকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেন।

অন্য দিনের মতো শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রানীকে নামিয়ে দিতে এসে বাসার ভেতর প্রবেশ করেন। এ সময় কিশোর কুমার সিং ও তার স্ত্রী বাইরে হাঁটতে বের হয়েছিলেন। বিকল্প চাবি দিয়ে তারা বাসায় প্রবেশ করেন।

পুলিশের গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, বাসায় প্রবেশের ২০-২৫ মিনিট পর মিন্টু বাসা থেকে বের হয়ে সোজা থানায় চলে আসেন। থানার এসে বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে মেরেছি। আমাকে গ্রেফতার করুন’।

এসময় পুলিশ সদস্যরা ঠাট্টা করে জানতে চান, তার স্ত্রীকে বেশি মারা হয়েছে নাকি কম মারা হয়েছে। তখন মিন্টু বলেন, একেবারে মেরে ফেলেছি।

কেন মেরেছেন জানতে চাইলে পুলিশকে জানায়, ‘পরকীয়ার কারণে’। এরপর মিন্টুকে আটক করে তার দেয়া ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ গিয়ে রানীর লাশ দেখতে পায়।

ওসি জানান, পুলিশ ওই বাসায় যাওয়ার আগেই কিশোর কুমার ও তার স্ত্রী বাসায় ফিরেছেন। তারা ঘটনাটি পুলিশকে জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

গুলশান থানার পরিদর্শক সালাহউদ্দীন জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রানীর আগের সংসারের ছেলে মো. সুজন (২০) বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।

তিনি জানান, রানী এবং মিন্টু তিন বছর আগে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে কোনো সন্তান নেই। আগের সংসারে রানীর একমাত্র ছেলে সুজন।

অন্যদিকে আগের সংসারে হাসান এবং হোসেন নামে মিন্টুর দুই জমজ ছেলে আছে। তাদের বয়স আনুমানিক ১৫ বছর। দুই-তিন বছর ধরে রানী গুলশানের ওই বাসায় কাজ করতেন।

মামলার বাদী মো. সুজন জানান, রানীর গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদীতে। মিন্টুর গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগরে।

সুজন জানায়, অন্য পুরুষের সঙ্গে তার মায়ের পরকীয়া ছিল বলে মিন্টু সন্দেহ করতো। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। রানীকে মারধরও করা হতো।

 

Please follow and like us:

Check Also

কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রী’র আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিনিধি :সাতক্ষীরার কলারোয়ায় স্বামী আজহারুল ইসলামের পুরুষাঙ্গ কেটে দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণা খাতুন আত্মহত্যা করেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।