গাজীপুরে সাফারী পার্কের আরো একটি জিরাফের বাচ্চা প্রসব ॥ সম্প্রতি দুই জিরাফের মৃত্যু হয়েছে ক্লস্ট্রিডিয়াম ব্যাকটেরিয়ার কারণে ॥

ক্রাইমবার্তা রিপোট:গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কের আরো একটি “জিরাফ” বাচ্চার মা হয়েছে। এ নিয়ে ১১দিনের ব্যবধানে এ পার্কের দু’টি জিরাফ দুই বাচ্চার মা হয়েছে। সন্তানসহ তাদের মা জিরাফ সুস্থ্য রয়েছে। বর্তমানে পার্কে বাচ্চাসহ জিরাফের সংখ্যা ১০টি বলে জানিয়েছেন সাফারী পার্ক কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি পার্কের দু’টি জিরাফের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ক্লস্ট্রিডিয়াম ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে।1

বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে কর্মরত ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার সরোয়ার হোসেন জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরস্থিত বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চার দফায় দক্ষিণ অফ্রিকা থেকে ১২টি জিরাফ আনা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে দু’টি এবং ২০১৭ সালের ১৭মে দু’টিসহ মোট চারটি জিরাফ অসুস্থ্য হয়ে মারা যায়। ১৩ জুন বাচ্চাটি হলো মাদি এবং সর্বশেষ ২৪ জুন জন্ম নেয়া বাচ্চাটি পুরুষ। প্রসবের পর থেকে বাচ্চাদের নিয়ে মা জিরাফ দুটি বেষ্টনীতে অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে চলাফেরা করছে। শাবকসহ মা জিরাফরা সুস্থ্য রয়েছে। বাচ্চাগুলো কিছুক্ষণ পরপর মায়ের দুধ পান করছে এবং খেলা করছে। জিরাফের বাচ্চাদের মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার খেতে অভ্যাস করা হচ্ছে।

সাফারী পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিসুর রহমান বলেন, শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে জন্ম নেয়া দু’টি শাবক ও তাদের মায়ের সুস্থ্যতার জন্য জিরাফ বেষ্টনী এলাকায় একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসকের অধীনে সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করা হচ্ছে। তাদের স্বাভাবিক খাবার গাজর, ছোলা, কলা, সবুজ ঘাস ও গমের ভূষি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন দেয়া হচ্ছে। নবজাতকরা দিনভর মায়ের সঙ্গে জিরাফ বেষ্টনীতে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে।

বন্য প্রাণি কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন জানান, প্রতিটি জিরাফের গড় আয়ু প্রাকৃতিক পরিবেশে ২০-২৫বছর এবং বেষ্টনীযুক্ত পরিবেশে প্রায় ২৮বছর। পূর্ণবয়স্ক জিরাফের গড় ওজন ১৬শ থেকে ২৪শ পাউন্ড এবং বাচ্চা জিরাফের গড় ওজন হয় ১০০-১১৫পাউন্ড। ৩ থেকে ৫ বছর বয়সে জিরাফ পূর্ণতাপ্রাপ্ত এবং প্রজননক্ষম হয়। ১৪-১৫মাস গর্ভকালীন সময়ের পর সাধারণত একটি মা জিরাফ একটি বাচ্চা প্রসব করে। পূর্ণ বয়স্ক জিরাফের উচ্চতা ১৯ফুট এবং তাদের জিহ্বার দৈর্ঘ্য আরো দুই ফুট। এরা উঁচুতে থাকা গাছের পাতা বা তৃণ লম্বা জিহ্বা ব্যবহার করে মুখে টেনে নিয়ে খায়। সাধারণত এরা পানি কম পান করে। পানি পান করার সময় সামনের পা দুটি ছড়িয়ে দিয়ে মাথা নিচু করে পানি পান করে থাকে।

তিনি আরো জানান, জিরাফ সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে পছন্দ করে। তবে মজার বিষয় হলো প্রজনন সময়ে একাধিক পুরুষ জিরাফ কোনো মাদি জিরাফের সঙ্গে মিলিত হতে গেলে পুরুষ জিরাফগুলো যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পরে বিজয়ী পুরুষ জিরাফই মাদি জিরাফের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সম্মতি পায়। একটি মাদি জিরাফ ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বাচ্চা প্রসবের ক্ষমতা থাকে।
যে কারণে সাফারি পার্কে দুই জিরাফ মৃত্যু ॥
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রকল্প পরিচালক সামসুল আজম জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরস্থিত বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কের গত ১৭ মে মারা যায়। ওই দু’টি জিরাফ মারা যাওয়ার প্রাথমিক কারণ হিসেবে ক্লস্ট্রিডিয়াম ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সেন্ট্রাল ডিজিজ ইনভেস্টিগেশন ল্যাবরেটরি ওই তথ্য জানিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের চিকিৎসক নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জানান, এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া সাধারণত বৃষ্টির মধ্যে ও আর্দ্র মাটিতে বেশি বংশ বিস্তার করে। এরা তৃৃণভোজী প্রাণিদের বেশি আক্রমণ করে। এ জীবানু আক্রমণের ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাণিরা মারা যেতে পারে। সাপ, বেজী, পানি ইত্যাদির মাধ্যমে এ জীবাণু বিস্তার লাভ করতে পারে। তবে আগাম প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এদেরকে নটরিয়াস ব্যাকটেরিয়া বলা হয়।

Check Also

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। জুড়ী উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।