ফাঁস ঠেকাতে কেন্দ্রে প্রশ্ন যাবে গোপন ডিভাইসে, সেখানেই প্রিন্ট

ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ    সব ধরনের পন্থা অবলম্বনের পরও কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না প্রশ্নফাঁস। প্রতি বছরই পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে 1662dc0caf2bf408518497ebd5086a35-5923e79e954c1প্রশ্নফাঁসের কারণে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রীসহ শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা। ফলে এবার প্রশ্নপত্র প্রণয়নে আনা হচ্ছে বেশ কিছু নতুন পদ্ধতি। গোপন ডিভাইসে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে কেন্দ্রেই প্রিন্ট করা হবে। সিলেবাস অনুযায়ী তৈরি করা হবে প্রশ্ন ব্যংক। সেখান থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হবে প্রশ্নের একাধিক সেট। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এমন পরিকল্পনাই করছে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের গঠন করা উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি। মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব কর্মপরিকল্পনার কথা জানা গেছে।
গঠিত কমিটির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন প্রক্রিয়াটি হবে সম্পূর্ণ অটোমেশন পদ্ধতিতে। সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে থেকে প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করা হবে। কেন্দ্রে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ প্রযোজনীয় ডিভাইসের ব্যবস্থা করা সম্ভব হলে কেন্দ্রেই প্রশ্ন প্রিন্ট করা হবে।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করার পর কেন্দ্রে প্রশ্নের সফট কপি যাবে গোপন ডিভাইসের মাধ্যমে এবং পাঠানোর পর প্রশ্ন প্রিন্ট হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিভাইসটি নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়া প্রশ্ন প্রিন্ট করার আগে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রশ্নের একাধিক সেটও তৈরি করা হবে।
গত বুধবার (১২ জুলাই) সচিবালয়ে এক বৈঠকে এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই বৈঠকে এই কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে আলোচনা ও প্রাথমিক সুপারিশ তুলে ধরা হয়। ওই বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উচ্চ পর্যায়ের গঠিত এ কমিটির অন্যতম সদস্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতেই ভিন্ন ধরনের কর্মপদ্ধতি খুঁজে বের করা হচ্ছে। ওইসভায় এ বিষয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সাব কমিটিগুলো আরও নির্দিষ্ট করে সুপারিশমালা প্রতিবেদন আকারে দিলে মূল কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
ওই বৈঠকের কর্মপত্র সূত্রে জানা গেছে, গঠিত মূল কমিটি তিনটি উপ-কমিটি গঠন করেছে। এসব কমিটিতে মোট অর্ধশত সদস্য রয়েছেন। কমিটিগুলো হলো: প্রশ্ন-ব্যাংক তৈরি ও নিরাপত্তা উপ-কমিটি, প্রিন্টিং ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা উপ-কমিটি এবং লজিস্টিক সাপোর্ট উপ-কমিটি। কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ব্যাংক তৈরি ও নিরাপত্তা উপ-কমিটির দায়িত্ব হলো- সফটওয়্যারের মাধ্যমে সব প্রশ্নের ডাটাবেইজের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় একটি প্রশ্ন ব্যাংক তৈরি করা। ওই প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে একাধিক প্রশ্ন সেট তৈরি করা।
প্রিন্টিং ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা উপ-কমিটির দায়িত্ব হলো- প্রশ্নপত্র পাঠানোর আগে উভয়প্রান্তে সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রশ্নপত্রে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা রক্ষা করে জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করা। সম্ভব হলে সব কেন্দ্রে ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পাঠানো এবং প্রশ্ন প্রিন্ট হওয়ার পরে ওই ডিভাইসটি নিষ্ক্রিয় করা।
লজিস্টিক সাপোর্ট উপ-কমিটির দায়িত্ব হলো-প্রশ্নপত্র ছাপানোর জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ নিরবচ্ছিন্ন ও পর্যাপ্ত ইন্টারনেট সংযোগ ও প্রশ্নপত্র ছাপানোর জন্য কেন্দ্রে প্রিন্টার সরবরাহ করা।
প্রশ্ন-ব্যাংক তৈরি ও নিরাপত্তা উপ-কমিটির ১০ সদস্যের মধ্যে অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে মন্ত্রণালয় চাইছে আরও ভিন্ন কোনও পন্থ অবলম্বন করতে। আমরাও সেই কাজে সহায়তা করছি। কারণ, যেভাবে একের পর এক প্রশ্নফাঁস হচ্ছে তা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য রীতিমতো বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা থেকেই নতুন এসব পদ্ধতি কাজে লাগানো যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এদিকে তিন কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনা করে মূল কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানান বুয়েটের এই শিক্ষক।

Check Also

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে: স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন বইয়ে রাষ্ট্রপতি

মহান স্বাধীনতা দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।