ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ কৃষক পরিবার থেকে রাইসিনা হিলে

ভারতের ১৪তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা রামনাথ কোবিন্দ। আগামী ২৫ জুলাই ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন রামনাথ কোবিন্দ। তাকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি। এরপরই তিনি হবেন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রাসাদ রাইসিনা হিলের অধিপতি। ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন তিনি। রামনাথ কোবিন্দ হবেন উত্তরপ্রদেশ থেকে নির্বাচিত ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্যটি থেকে দেশের মোট ৯ জন প্রধানমন্ত্রী উঠে এসেছেন। কিন্তু কোবিন্দের আগে এ রাজ্যের আর কেউ রাষ্ট্রপতি হননি!

নতুন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ একজন কৃষকের সন্তান। উত্তরপ্রদেশের কানপুর দেহাত জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম পারোঙ্খে ১৯৪৫ সালের ১ অক্টোবর এক দলিত কোলি পরিবারে তার জন্ম। কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি আইনে স্নাতক পাস করেন। তিনি বাণিজ্যেও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ভারতের আমলারা যে ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে ঢোকেন, কোবিন্দ তাতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু আইএএস সার্ভিসের বদলে অ্যালায়েড সার্ভিসে মনোনীত হওয়ায় সে চাকরিতে তিনি যোগ দেননি। আইনকেই পেশা হিসেবে নেন তিনি। ১৯৭১ সালে দিল্লির বার কাউন্সিলের নথিভুক্ত আইনজীবী হন। এর ৬ বছর পর ১৯৭৭ সাল থেকে তিনি দিল্লি হাইকোর্টে আইন পেশা অনুশীলন শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি সুপ্রিমকোর্টে অনুশীলন শুরু করেন। এ সময় তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কৌঁসুলির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ সালে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সুপ্রিমকোর্টের স্ট্যান্ডিং কাউন্সেলের প্যানেলভুক্ত আইনজীবী হন। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। লখনৌয়ে বি আর আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং কলকাতার ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের বোর্ড মেম্বারও ছিলেন তিনি।

১৯৯৪ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি চলতি বছরের এপ্রিলে উত্তরপ্রদেশ থেকে রাজ্যসভার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৬ পর্যন্ত একটানা ১২ বছর তিনি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। বিজেপিতে যোগদান করার পর তিনি দলিত শ্রেণীর একজন নেতা হিসেবে উঠে আসেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি বিজেপির দলিত মোর্চার প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি স্বরাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় কমিটি, তফসিলি জাতি-উপজাতিবিষয়ক সংসদীয় কমিটি, পেট্রোলিয়ামবিষয়ক সংসদীয় কমিটির এবং আইন ও বিচারমন্ত্রকের সংসদীয় কমিটিতেও ছিলেন। বিজেপিতে যোগদান করার আগে তিনি ১৯৭৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবেও কাজ করেন।

২০১৫ সালের ৮ আগস্ট তাকে বিহারের রাজ্যপাল (গভর্নর) পদে নিয়োগ করা হয়। মাত্র মাস দেড়েক আগে বিহারের রাজ্যপাল থাকাকালীন সপরিবারে হিমাচল প্রদেশে বেড়াতে গিয়ে কোবিন্দ সিমলার কাছে রাষ্ট্রপতির সামার রিট্রিটে ঢুকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভবনে বাইরের কারও প্রবেশের অনুমতি নেই, এই যুক্তিতে রক্ষীরা তাকে গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়। তখন তিনি ঘুণাক্ষরেও জানতেন না রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে কয়েকদিনের মধ্যেই তার নাম ঘোষণা করা হবে। আর এখন দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে সিমলার ওই রাজকীয় প্রাসাদই হবে তার গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনের ঠিকানা। ১৯৭৪ সালের ৩০ মে সবিতাকে বিয়ে করেন তিনি। শ্বেতা ও প্রশান্ত কুমার নামে তাদের দুই সন্তান রয়েছে।

Please follow and like us:

Check Also

বেইজিং ঘনিষ্ট মুইজ্জুর জয়: ভারত থেকে আরও দূরে সরবে মালদ্বীপ

মালদ্বীপে দীর্ঘদিন ধরে থাকা ভারতের প্রভাব কমাতে ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান দিয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।