ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ব্যক্তিগত: ওবায়দুল কাদের

ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্য ‘ব্যক্তিগত’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।obaydul_54404_1502004160

মন্ত্রী বলেন, দলীয়ভাবে এ বিষয়ে এখনো কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি। মাথা ঠাণ্ডা রেখে চিন্তা-ভাবনা করে এ বিষয়ে দলীয় বক্তব্য দেয়া হবে।

রোববার হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ কন্ট্র্যাক্ট প্যাকেজ-০৮’ শীর্ষক চুক্তি সই অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

এর আগে ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সিলেটে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আদালত যতবার বাতিল করবে সংসদে ততবারই নতুন করে এই সংশোধনী পাস হবে। এটা আমরা আবারো এসেমব্লিতে পাস করবো। এই কনস্টিটিউশনাল এমেন্ডমেন্ড আবারো পাস করবো এবং অনবরত করতেই থাকবো, দেখি জুডিশিয়ারি কতদূর যায়। বিকজ জুডিশিয়ারি পজিশন আমার মতে আনটেরিবল।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, ‘মানুষের প্রতিনিধির ওপর তারা খোদগারি করবে তাদের আমরা চাকরি দেই।’

এ মন্তব্যের পর অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ঘিরে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। দেশের বেশ কয়েকজন আইনজীবী ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সমালোচনা করা হয়।

প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাসহ আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির স্বাক্ষরের পর গত মঙ্গলবার বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।

এর আগে ১ জুন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষ হয়। পরে যেকোনো দিন এ রায় ঘোষণা করার জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়। শুনানি শুরু হওয়ার ১১তম দিনের শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

গত ৩০ মে দশম দিনের আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত প্রদান শেষ হয়। মোট ১০ জন অ্যামিকাস কিউরি আদালতে মতামত দিয়েছেন। যার মধ্যে নয়জনই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মতামত দেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার আপিল শুনানিতে সহায়তার জন্য আদালত ১২ সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ১২ জনের মধ্যে ১০ জন আদালতে তাদের মতামত উপস্থাপন করেন। অ্যামিকাস কিউরি নিযুক্ত হলেও ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মতামত দেননি।

বক্তব্য প্রদান করা ১০ জনের মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ষোড়শ সংশোধনী রাখার পক্ষে মত দেন। বাকিরা এই সংশোধনী বাতিলের পক্ষে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন। সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেয়া নয় আইনজীবী হলেন— ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, বিচারপতি টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, এম আই ফারুকি এবং এ জে মোহাম্মদ আলী।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।

সংবিধানে এই সংশোধনী হওয়ায় মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করবে, এমন যুক্তিতে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন। গত বছরের ১০ মার্চ মামলাটির চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৫ মে রায় দেয় আদালত।

Please follow and like us:

Check Also

এদেশের সাম্প্রদায়িকতার বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি: কাদের

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এদেশের সাম্প্রদায়িকতার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।